• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামান আর নেই

ফাইল ছবি

জাতীয়

জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক খন্দকার মুনীরুজ্জামান আর নেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৪ নভেম্বর ২০২০

দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক, কলামিস্ট ও বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মুনীরুজ্জামান আর নেই (ইন্নালিল্লাহি ... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর। তিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে তিন সপ্তাহ ধরে ঢাকার মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।

মঙ্গলবার সকাল ৭টা ২০ মিনিটে সেখানেই তার মৃত্যু হয় বলে সংবাদের বার্তা সম্পাদক কাজী রফিক জানান। তিনি বলেন, গত ৩১ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দুই সপ্তাহ আইসিইউতে রাখতে হয়েছিল মুনীরুজ্জামানকে। অবস্থার উন্নতি হওয়ায় কয়েক দিন আগে আইসিইউ থেকে কেবিনেও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর বাঁচানো যায়নি।

সংবাদের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাশেম হুমায়ুন ফেসবুক পোস্টে লিখেন, মুনীর ভাই করোনা থেকে সেরে উঠেছিলেন। তবে করোনা পরবর্তী নানা জটিলতায় তিনি মারা যান।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে খন্দকার মুনীরুজ্জামান মুগদা জেনারেল হাসপাতালে ২১ দিন ভর্তি ছিলেন। করোনা থেকে তিনি সেরে উঠেছিলেন। কিন্তু করোনা-পরবর্তী নানা জটিলতায় তিনি মারা গেছেন। তিনি স্ত্রী ও এক ছেলে রেখে গেছেন। তার স্ত্রী চিকিৎসক।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, খন্দকার মুনীরুজ্জামান সম্প্রতি জ্বরে আক্রান্ত হন। এরপর করোনা টেস্টে পজিটিভ হওয়ার পর তিনি শান্তিনগরে নিজ বাসায় চিকিৎসাধীন ছিলেন। গত ৩১ অক্টোবর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে হাসপাতালেও ভর্তি করা হয়। পরে বাসাতেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।

তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, মুনীরুজ্জামান ছিলেন নিরপেক্ষ, বস্তুনিষ্ঠ ও নির্ভীক সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। তার মৃত্যু গণমাধ্যমের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি। রাষ্ট্রপতি মুনীরুজ্জামানের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও মরহুমের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেছেন বলে তার দপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নেতারা পৃথক বিবৃতিতে সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও এক শোকবার্তায় খন্দকার মুনীরুজ্জামানের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন।

আরো শোক জানিয়েছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, মন্ত্রিসভার সদস্যরা, জাতীয় সংসদের সদস্যরা, ভারতীয় হাইকমিশন, আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী বিভিন্ন সংগঠন, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, কমিউনিস্ট পার্টি, গণতন্ত্রী পার্টি, ঐক্য ন্যাপসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

তার মৃত্যুতে সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।

খন্দকার মুনীরুজ্জামান ১৯৪৮ সালের ১২ মার্চ ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের সময় সাংবাদিকতায় যুক্ত হন। একই সময়ে তিনি বাম ঘরানার রাজনীতিতে যুক্ত হন। তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। দৈনিক সংবাদে তিনি সহকারী সম্পাদক হিসেবে যোগ দেন। পরে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হন। তিনি দীর্ঘদিন কমিউনিস্ট পার্টির ঢাকা জেলা কমিটির সম্পাদক ছিলেন। খন্দকার মুনীরুজ্জামান সাংবাদিকতা ছাড়াও কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ, চিত্র সমালোচনা ও নিয়মিত কলাম লিখতেন।

শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে চিরনিদ্রায় শায়িত : বীর মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার মুনীরুজ্জামানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। বিকেলে তাকে মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়।

দুপুরে পল্টন জামে মসজিদে প্রথম জানাজা শেষে বিকেলে তার মরদেহ জাতীয় প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণে নেওয়া হয়। এ সময় সাংবাদিকদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। সেখানে দ্বিতীয় জানাজা শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে তাকে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানো হয়।

এরপর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা (গার্ড অব অনার) প্রদান করেন পুলিশের একটি চৌকশ দল। বিকেলে তার মরদেহ শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে নেওয়া হয়। সন্ধ্যায় সেখানে তার দাফন সম্পন্ন হয়।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads