• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

মাস্ক নিয়ে অজুহাতের শেষ নেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ নভেম্বর ২০২০

শীতের আমেজ এখনো পুরোপুরি শুরু হয়নি। কিন্তু করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা  ফের বাড়তে শুরু করেছে। বেশকিছু দিন ধরেই বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করছিলেন শীতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হতে পারে। এনিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি সরকারি নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে এবং হচ্ছে। সম্প্রতি ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ ঘোষণা করে সরকার। কিন্তু বাস্তবে মাস্ক ব্যবহার হয় না বললেই চলে।

কোনো কোনো এলাকায়  গিয়ে  মনে হয়েছে করোনাভাইরাস বলে কোনো কিছুর অস্তিত্ব পৃথিবীতে নেই। কোথাও কোথাও কিছু মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা গেলেও বেশিরভাগেরই থুতনির নিচে মাস্ক ঝুলে থাকতে দেখা যায়।

রাজধানীর কাওরান বাজারে যাওয়ার পর মনে হলো করোনা পুরোপুরি বিদায় নিয়েছে। কারো মুখে মাস্ক নেই। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। একই দৃশ্য মহাখালীর টিবি গেটের সামনেও। সেখানে ক্যানসার হাসপাতাল, গ্যাস্ট্রোলিভার ইনস্টিটিউট, বক্ষব্যাধিসহ বেশ কিছছু হাসপাতাল আছে। কিন্তু সেখানেও মাস্ক ব্যবহার নেই বললেই চলে। হাসপাতালের মতো স্পর্শকাতর জায়গাতেও দেখা গেল কেউ থুতনিতে মাস্ক ঝুলিয়ে ঘুরছেন। কেউ মাস্ক হাতে নিয়ে কথা বলছেন মোবাইলে। মুখে মাস্ক নেই কেন জানতে মোবাইল ফোনে কথা বলছি, তাই খুলে হাতে নিয়েছি। মাস্ক পরে মোবাইলে কথা বলা কষ্টকর। তাছাড়া অপর পাশে থাকা ব্যক্তি কথা ঠিকমতো শুনতে পায় না।

হাসপাতালগুলোর পাশে থাকা চায়ের দোকানগুলোতে দেখা গেল অনেক মানুষ গল্প করছে। কারো মুখেই মাস্ক নেই। এক রিকশাচালক বলেন, মাস্ক পরলে গরম লাগে, হাঁপিয়ে উঠি। রিকশা চালানো যায় না। মোটরবাইকে থাকা এক ব্যক্তি মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে বলেন, মাস্ক পরে হেলমেট পরা যায় না। অস্বস্তি হয়।

করোনা দ্বিতীয় ঢেউ থেকে বাঁচার জন্য সরকার যখন মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে, একের পর এক উদ্যোগ নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মাস্ক পরার প্রতি মানুষের অনীহাও যেন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠেছে। তাদের অজুহাতেরও শেষ নেই। অথচ, ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ নীতি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্তও নিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ পর্যন্ত সাত দফা ছুটি বাড়িয়েছে। বাধ্যতামূলক মাস্ক ব্যবহারসহ শর্তসাপেক্ষে অফিস খোলা হয়, গণপরিবহনও চালু হয়। তারপরও ভ্রুক্ষেপ নেই কারো। প্রতিবার প্রজ্ঞাপনেই মাস্ক ছাড়া বাইরে বের হলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে উল্লেখ করা হয়। সর্বশেষ মাস্ক না পরলে জরিমানাও করা হচ্ছে। তাতেও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না।

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারীর প্রায় বছর হতে চলল। এখনো এ ভাইরাসের কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা ওষুধ ও প্রতিষেধক আবিষ্কারে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। কবে বিশ্ব থেকে এ ভাইরাস বিদায় নেবে সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা কোনো ধারণা দিতে পারছেন না। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ভাইরাস থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো মাস্ক ব্যবহার। এর কোনো বিকল্প নেই। সঠিকভাবে মাস্ক পরতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা: এ বি এম আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা এখনো জানি না ভ্যাকসিন কবে আসবে বা আদৌ আসবে কিনা। আর সেটা এলেও কতটুকু কার্যকর হবে কিংবা তা দিয়ে কতদিন করোনা প্রতিরোধ করা যাবে সেসবই অজানা। অথচ সবাই মাস্ক পরাসহ শারীরিক দূরত্ব মেনে চললে করোনা অনেকটা প্রতিরোধ করা যায়।

রাস্তায় বের হলেই দেখা যায় কারো মুখে মাস্ক নেই-আক্ষেপ করে অধ্যাপক আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ  পাত্তাই দিচ্ছে না করোনাকে। মানুষের মন থেকে ভয় উঠে গেছে। অথচ সামনে শীতকাল। রোগী এখনই বাড়তে শুরু করেছে। সচেতন না হলে ভয়ানক বিপদ অপেক্ষা করছে। সরকারের ‘নো মাস্ক, নো সার্ভিস’ বাস্তবায়ন করতে হবে। দোকান মালিক সমিতির ‘নো মাস্ক, নো সেল’ কেবল কাগজে-কলমে থাকলেই হবে না, মার্কেটগুলোতে এর কঠিন বাস্তবায়ন করতে হবে। মনিটর করতে হবে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, কারো উপসর্গ থাকলে তাকেই শনাক্ত করে আমরা আইসোলেশনে নিচ্ছি। কিন্তু যার উপসর্গ নেই তাকে আক্রান্ত বলে ধরছি না। তাই কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নন, সেটা না ধরে প্রত্যেকের মাস্ক পরা উচিত এবং সঠিকভাবেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা: বে-নজির আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে রংপুর, লালমনিরহাট ঘুরে এলাম। সেখানে গিয়ে মনে হলো মাস্ক পরাটাই অপরাধ। কেউ মাস্ক পরছে না। ১৭ কোটি মানুষকে তো আইন দিয়ে বাধ্য করা সম্ভব নয়। তাই এখন মাস্ক পরে যে করোনাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় সেটা মানুষকে দেখাতে হবে। এজন্য দরকার, করোনার প্রকৃত অবস্থা জানা। কোথায় কতটুকু সংক্রমণ হচ্ছে তা জানতে হবে। সরকার যেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছে সেখানে সফলতা আসছে এমন কিছু দৃশ্যমান অগ্রগতিও দেখানো দরকার। তা হলে মানুষ মাস্ক ব্যবহারে আগ্রহী হবে।

তিনি আরো বলেন, সংক্রমণ রোধে আগে চলাচলে নিষেধাজ্ঞা, ঘর থেকে বের না হওয়ার মতো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। প্রয়োজনে আবারো একই পন্থা অবলম্বন করতে হবে। মানুষ যখন স্বপ্রণোদিত হয়ে নিজ দায়িত্বে মাস্ক পরবে তখন আর আইন দরকার হবে না। কিন্তু মানুষকে উদ্বুদ্ধ না করে, জননেতাদের যুক্ত না করে কোনো উদ্যোগ সফল হবে না। মাস্ক পরার উদ্যোগকে গণজাগরণে পরিণত করতে হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads