• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বাংলাদেশ, মৃত্যুঘণ্টা পাকিস্তানের

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ১১ জানুয়ারি ২০২১

পাকিস্তান নামে সৃষ্ট সদ্য স্বাধীন রাষ্ট্রটির ধ্বংসের বীজ রোপণ করেছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ নিজেই। ১৯৪৮ সালের মার্চে ঢাকায় ছাত্র-শিক্ষকদের এক সমাবেশে তিনি সদম্ভে ঘোষণা করেন, ‘উর্দু, উর্দু এবং উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।’ সেদিন ঠিক এভাবেই বোনা হয় সর্বনাশের বীজটি। ক্রমে গড়াতে থাকে ওপারে সিন্ধু আর এপারে পদ্মা, মেঘনা ও যমুনা দিয়ে অজস্র জলধারা।

কেবল ভাষা নয়, পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠী ২৪ বছরে বাঙালিদের প্রতি আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে যে অন্যায়-অবিচার, বৈষম্য ও শোষণ-নির্যাতন চালিয়েছে, খোদ পাকিস্তানিদের মাঝেই আজ এর প্রতিবাদ লক্ষ করা যায়। ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে পাকিস্তানের প্রখ্যাত সাংবাদিক শাহজাদ আহমেদ সেখানকার প্রভাবশালী ‘দৈনিক ডন’ পত্রিকায় একটি নিবন্ধে উল্লেখ করেন, ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার সঙ্গে পাকিস্তানের স্মৃতি যুক্ত এবং দুর্ভাগ্যজনকভাবে দিবসটি আমাদের ইতিহাসে কোনো সুখের অধ্যায় হিসেবে নেই। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীরা তাদের মাতৃভাষা বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবিতে বিক্ষোভ করেন; কিন্তু পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করে এবং তাদের গুলিতে বেশকিছু শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। ঘটনাটি দেশজুড়ে অস্থিরতার জন্ম দেয় এবং এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামে স্বাধীন একটি রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের লক্ষ্য হচ্ছে সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য ও বহু ভাষার সহাবস্থান নিশ্চিত করা। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অনেক উপাদান ভূমিকা রেখেছিল। তার মধ্যে আছে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বৈষম্য এবং সীমান্তের ওপারের হস্তক্ষেপ। তবে যে মৌলিক উপাদানটি বাঙালির মনে অবিশ্বাসের বীজ বপন করেছিল তা হচ্ছে বাংলা ভাষাকে প্রাপ্য রাষ্ট্রীয় মর্যাদাদানে অস্বীকৃতি।’

‘পাকিস্তানিদের কোনো দেশ ছিল না, ছিল না কোনো দেশপ্রেম। ভারতের বিভিন্ন এলাকার মুসলমানরা পাকিস্তানের দাবিতে এক হয়েছিল। শোষণের হাতিয়ারকে প্রবল করার জন্য তারা একই ‘প্ল্যাটফর্মে’ জমায়েত হয়েছিল। কারণ হিন্দু পুঁজিপতিদের সঙ্গে তারা কুলিয়ে উঠতে পারছিল না। এই পাকিস্তানিদের মূল আদর্শ হলো তথাকথিত ইসলাম ও সাম্প্রদায়িকতা। তাই তারা পূর্ববাংলার মুসলমানদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইল আরবের দিকে। একটা বায়বীয় আদর্শই ছিল তথাকথিত পাকিস্তানিদের মাতৃভূমি আর দেশপ্রেম।’ ১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা লাভের অব্যবহিত পর বিশিষ্ট চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন উপাচার্য সৈয়দ আলী আহসান এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় পাকিস্তান সম্পর্কে ঠিক এভাবেই মূল্যায়ন করেছিলেন।

স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের ৫৫ দিন পর, ১০ ফেব্রুয়ারি, ১৯৭২-এ করাচির সান্ধ্য দৈনিক ‘ডেইলি নিউজ’ পত্রিকায় এক সম্পাদকীয়তে বলা হয়, ‘দেশ বর্তমানে যে অবস্থায় পৌঁছেছে, সেখানে কোনো কিছুই আর স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না।... আজকে এ প্রশ্নই জাগছে আমাদের মনে। সাধারণ মনোভাব হলো নিজেকে নিয়ে মগ্ন থাকা। ডিসেম্বরের যুদ্ধে ভারতের কাছে আমাদের মর্যাদাহানি সত্ত্বেও দেয়ালের এ স্পষ্ট লিখন আমরা পড়তে পারিনি যে, বাংলাদেশ হলো পাকিস্তানের অন্তিম দশার সূচনা।’ সম্পাদকীয়টিতে আরো বলা হয়, ‘দেশ এখন ধ্বংসের মুখে। ফেরার সময় আর নেই। এখন শুধু প্রতীক্ষা কখন পাকিস্তানের বিলুপ্তি ঘটবে। থাকবে না গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম, থাকবে না একটা সুন্দর সামাজিক ব্যবস্থার জন্য কোনো প্রচেষ্টা। সব হারিয়ে যাবে। আমরা সবাই ক্রীতদাসে পরিণত হব। ঘড়ির কাঁটা আর পেছন দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া যাবে না।’ বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকায় ওই সম্পাদকীয় নিয়ে তখন নানা ধরনের মন্তব্য প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ঢাকা থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকায় এ নিয়ে লেখা নিবন্ধের শিরোনাম দেওয়া হয়-‘বাংলাদেশ, পাকিস্তানের মৃত্যুঘণ্টা’।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads