• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বিলুপ্তির পথে অর্ধশত প্রজাতির দেশি মাছ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বিলুপ্তির পথে অর্ধশত প্রজাতির দেশি মাছ

  • কুদরত উল্যাহ, মনোহরগঞ্জ (কুমিল্লা)
  • প্রকাশিত ১২ জানুয়ারি ২০২১

কুমিল্লায় প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। জেলার প্রধান নদ নদী ও খাল বিল এবং পুকুর-দিঘি-ডোবা থেকে এরই মধ্যে অন্তত অর্ধশত প্রজাতির দেশি মাছ অনেকটাই বিলুপ্তির পথে চলে গেছে। ১০ বছরের ব্যবধানে বেশ কয়েক প্রজাতির মাছ পুরোপুরিভাবেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যদিও এক সময় কুমিল্লার জলাভূমির দেশি মাছ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হতো। পুরো জেলার নদ নদী ও জলাভূমিতে ছিল দেশি মাছের প্রাচুর্য। 

মেঘনা, গোমতী, কালাডুমুর, ডাকাতিয়া নদীসহ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত মোট ১৩টি নদ নদী কুমিল্লার দেশি মাছের প্রধান উৎস। এ ছাড়া এসব নদীর শাখা, উপশাখা ও খালবিল প্রাচীনকাল থেকেই দেশি মাছের জন্য সমৃদ্ধ ছিল। তবে ফসলি জমিতে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার,নদ নদী, খালবিল, পুকুর-ডোবা ভরাট, উন্মুক্ত জলাশয়ে বাঁধ নির্মাণ, কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য পানিতে গিয়ে পড়া, অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহারসহ মাছের বিচরণক্ষেত্র পরিবর্তনের কারণে এখন আর প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ আগের মতো পাওয়া যায় না। এ ছাড়া কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ব্যবহারে দেশি প্রজাতির মা মাছ প্রজনন কিংবা ডিম ছাড়তে পারে না। এরই মধ্যে নানদিয়া, রিঠা, বাচা, ছেনুয়া, গাওড়া, নাপতিনী, বুইতা ইত্যাদি প্রজাতির মাছ এ অঞ্চল থেকে পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এ ছাড়া বাগাইড়, গোলসা, পাবদা, আইড়, নামাচান্দা, তারা বাইম, বড় বাইম, কালিবাউশ, দাঁড়কিনাসহ প্রায় অর্ধশত প্রজাতির মাছ রয়েছে বিলুপ্তির পথে। এ অঞ্চলে আগে যেসব দেশি প্রজাতির মাছ দেখা যেত, তার বেশিরভাগই এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। এর ফলে বাধ্য হয়ে কৃত্রিম উপায়ে উৎপাদিত হাইব্রিড মাছ দিয়েই চাহিদা মেটাতে হচ্ছে জেলার মানুষকে। 

জানা গেছে, গত বেশ কয়েক বছর ধরে প্রাকৃতিকভাবে কুমিল্লায় দেশি মাছের উৎপাদন নেই বললেই চলে। দেশি অনেক মাছ বিলুপ্তির কারণে স্থানীয় জেলেদের এখন চরম দুর্দিন চলছে। সারা দিন নদীতে জাল পেতে বসে থাকলেও পরিবারের চাহিদা মেটাতে পারছে না অনেক জেলের। নদীতে মাছ না পেয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন অনেকে। ফলে বাধ্য হয়ে তারা অন্য পেশা বেছে নিচ্ছেন।

মনোহরগঞ্জের ফুলপুকুরিয়া গ্রামের শৌখিন মৎস্য শিকারি সেলিম মিয়া বলেন, ডাকাতিয়া নদীসহ বিভিন্ন খালবিলে এক সময় মাইকিং করে আনন্দঘন পরিবেশে মাছ শিকার করা হতো। নদী ও খালের দু'পারে ভোর না হতেই হরেক রকম পণ্যের মেলা বসত। আনন্দ-উল্লাসের মাধ্যমে ঝাঁকে ঝাঁকে মাছ ধরত যুবক-বৃদ্ধসহ নানা বয়সের মানুষ। এ সুযোগে ছোট ছোট ছেলেমেয়েসহ স্থানীয় মৎস্যজীবীরাও নেমে পড়ত মাছ ধরতে। এখন আর এসব দৃশ্য দেখাই যায় না। 

মনোহরগঞ্জের জেলে ইব্রাহিম খলিল, লাকসামের আবুল কালাম, জেলা সদরের সামছুল আলমসহ অন্তত ১০ জেলে জানান, গত ১০ বছর আগেও কুমিল্লায় যেই পরিমাণ জেলে ছিল এখন তার তিনভাগের এক ভাগও নেই। আগে কুমিল্লার সব নদনদী, খালবিল ও জলাশয় দেশি মাছে ভরপুর ছিল। নদীতে জাল ফেললে দুই-তিন ঘণ্টার মধ্যে নৌকা মাছে ভরে যেত। কিন্তু এখন সারা দিন নদীতে পড়ে থাকলেও পাঁচ কেজি দেশি মাছ পাওয়া যায় না। এসব কারণে জেলেরা অন্য পেশায় চলে গেছেন। অনেক জেলে এখন রিকশা, অটোরিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আসলেই সত্য। প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রজাতির দেশি মাছ দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। এর মূল কারণ হচ্ছে কৃষি জমিতে কীটনাশকের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার, কৃষি জমিতে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার প্রয়োগ, শিল্পকারখানার তরল বর্জ্য পানিতে মেশা, অবৈধ কারেন্ট জালের ব্যবহার, নদ-নদী, খাল-বিল ও জলাশয় দখল ও ভরাট, পানিদূষণ ইত্যাদি। এসব কারণে দেশি বিভিন্ন প্রজাতির মাছের বিচরণ ক্ষেত্র ও প্রজনন ক্ষেত্র হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া শুস্ক মৌসুমে নদীতে পলি জমে পানি না থাকার কারণেও দেশি মাছ বিলুপ্ত হচ্ছে। তবে আমরা দেশি মাছ রক্ষায় প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছি। মাছের প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্র বাড়াতে বিভিন্ন কাজ করছি। এসব মাছ রক্ষায় মানুষকে সচেতন করছি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads