• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক

আনিছুর দম্পতির ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১৫ জানুয়ারি ২০২১

যুবলীগের বহিস্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমান ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের জ্ঞাতআয় বহির্ভূত প্রায় ১৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ রয়েছে। এছাড়া নিজ একাউন্টে তিনি আরো ১২৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন করেছেন। ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে তারা এ পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছেন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা একটি মামলার দাখিল করা তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। দুদকের উপ-পরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান মামলাটির তদন্ত টিমের প্রধান ছিলেন।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, এর আগে গতবছরে ৫ ফেব্রুয়ারি কাজী আনিছুর রহমান দম্পতির ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ জব্দ করে দুদকের তদন্ত টিম। কাজী আনিছুর রহমান বর্তমানে দুবাইতে অবস্থান করছেন। দেশের বিভিন্ন অবৈধ কর্মকাণ্ড সামলাচ্ছেন তার নিজস্ব কিছু ক্যাডার বাহিনীসহ তার শ্যালক শুভ, চাচাতো ভাই মিঠু, চয়ন ও বাবুল। এরাই ধানমন্ডিসহ ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় তার স্থাবর সম্পদের ভাড়া তুলছেন।

২০১৯ সালের ২৯ অক্টোবর কাজী আনিছুর রহমানের ১২ কোটি ৮০ লাখ টাকা ও তার স্ত্রী সুমি রহমানের এক কোটি ৩১ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের দায়ে মামলা করে দুদক।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, আসামি কাজী আনিছুর রহমান ২০১৮-১৯ অর্থবছরে নিজ নামে ও বেনামে অর্জিত পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকার স্থাবর সম্পদ এবং এক কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।

এর মধ্যে ঢাকার এলিফ্যান্ট রোডের মাল্টিপ্লান সেন্টার লেভেলে একটি ফ্ল্যাট, গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের রসুলপুরে ২৪.৫০ শতাংশ জমি, ঢাকার আর কে মিশন রোডের আমিন ভবনের পঞ্চম তলায় ১৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ঢাকার স্বামীবাগ রোডে ৮২০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডি রোড নং-৭ এ একটি ফ্ল্যাট, ঢাকার শুক্রাবাদের শেরেবাংলা নগর ৭৫০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট, ধানমন্ডি ১৫ নং রোডের একটি ফ্ল্যাটসহ সর্বমোট পাঁচ কোটি ৭৩ লাখ ৫৬ হাজার ৬০০ টাকা স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।

অনুরূপভাবে আরফিন এন্টারপ্রাইজ কোম্পানির শেয়ার মূল্য ৮৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা, স্টেশনের শেয়ার মূল্য ৩৬ লাখ টাকা, প্রাইজবন্ড তিন লাখ টাকা, গাড়ির মূল্য ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকাসহ সর্বমোট এক কোটি ৭২ লাখ ৩৬ হাজার ৮২১ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।

বিএফআইইউ থেকে প্রাপ্ত রেকর্ডপত্র অনুসারে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ব্যাংকে রক্ষিত ব্যাংক এশিয়া, প্রাইম ব্যাংক, মার্কেন্টাইল ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ইউসিবিএল ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ডাচ্-বাংলা ব্যাংকসহ অন্যান্য ব্যাংকের কারেন্ট অ্যাকাউন্ট, সেভিংস অ্যাকাউন্ট, এফডিআর এইচটিসিসহ বিভিন্ন ফর্মে পাঁচ কোটি ৩৪ লাখ ৬৭ হাজার ৪৯৯ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকার সম্পদের তথ্য পায় তদন্ত টিম। যা আয়কর নথিতে উল্লেখ নেই এবং এসবের সপক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট বৈধ উৎস নেই।

অন্যদিকে আসামি সুমি রহমানের নামে এক কোটি ২৫ লাখ ৫০০ টাকার স্থাবর ও ৫৬ লাখ ৬ হাজার ৫০০ টাকার অস্থাবর টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়ায় দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭(১) ধারায় একই দিনে মামলা দায়ের করে দুদক।

এরপর মামলার তদন্ত শেষে তাদের আরো অবৈধ সম্পদের সন্ধান পায় দুদক। তদন্তকালে কাজী আনিছুর রহমানের নামে ১৮ কোটি ৯ লাখ এক হাজার ৩৩৫ টাকার নিট সম্পদ পাওয়া যায়। বর্ণিত সম্পদের বিপরীতে তার গ্রহণযোগ্য বা বৈধ আয় দেখা যায় ৩ কোটি ৯৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৯ টাকার। অর্থাৎ তিনি মোট চৌদ্দ কোটি পঁচানব্বই লাখ ঊনত্রিশ হাজার ৮৩৫ টাকার আয়ের উৎসের সাথে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জন করেছেন। এছাড়া তিনি দেশের বিভিন্ন ব্যাংকে নিজ নামে ও তার প্রতিষ্ঠানের নামে ২৫ টি হিসাবে ২০১১ সাল থেকে মোট একশত ঊনত্রিশ কোটি একান্নব্বই লাখ সতেরো হাজার ২১৩ টাকা জমা করেন। যার মধ্যে শেয়ার ব্যবসাসহ অন্যান্য আয় রয়েছে ৬ কোটি ৩৬ লাখ ৭১ হাজার ৩৬৫ টাকা। এক্ষেত্রে তিনি একশ তেইশ কোটি ৫৪ লাখ পঁয়তাল্লিশ হাজার ৮৪৮ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন বা অপরাধলব্ধ আয়ের অবৈধ উৎস গোপন বা আড়াল করার অসৎ উদ্দেশ্যে তা স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে অবস্থান গোপন করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। বর্ণিত প্রেক্ষিতে তদন্তকারী কর্মকর্তার সুপারিশের আলোকে আসামি কাজী আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে উপর্যুক্ত অপরাধের দায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় কমিশন কর্তৃক চার্জশিট দাখিলের অনুমোদন প্রদান করা হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads