• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

করোনায় বেড়েছে সঞ্চয় প্রবণতা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ জানুয়ারি ২০২১

করোনার কারণে বিপুল সংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। অনেকেরই আয় কমেছে। অর্ধেক বেতনে চাকরি করতে হচ্ছে অসংখ্য মানুষকে। বেড়েছে জীবনযাত্রা ব্যয়। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পর্যবেক্ষণও বলছে করোনাকালে মানুষের ব্যয় বেড়েছে। তা সত্ত্বেও মানুষের মধ্যে বেড়েছে সঞ্চয়ের প্রবণতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে ব্যয় বাড়লেও মানুষ আগের চেয়ে সঞ্চয় করছে বেশি। ব্যাংকে আমানতে সুদ কমে গেলেও মানুষ সঞ্চয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংকই পছন্দের তালিকায় প্রথমে রাখছে। টাকা রাখার ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্র। এছাড়া শেয়ারবাজারেও মানুষ বিনিয়োগ শুরু করেছে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, করোনা মানুষকে অনেক কিছু নতুন করে ভাবতে শিখিয়েছে। ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার চিন্তায় মানুষ টাকা জমানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। করোনার কারণে অনেকেরই বাহুল্য খরচ কমেছে। এ কারণে টাকা জমানোর পরিমাণ বেড়েছে। এছাড়া এজেন্ট ব্যাংকিং, মোবাইল ব্যাংকিং তথা ডিজিটাল পদ্ধতিতে টাকা জমা দেওয়ার সুযোগ চালু হওয়ায় এর বড় প্রভাব পড়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, ২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে ব্যাংকগুলোতে আমানত বেড়েছে ৯৮ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসেই (জুলাই থেকে নভেম্বর) মানুষ ১৯ হাজার ৪৪ কোটি ৯২ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন। গত ছয় মাসে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) বাজার মূলধন দাঁড়ায় ৫ লাখ ১ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। যদিও ছয় মাস আগে, অর্থাৎ জুলাইয়ের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। শুধু তাই নয়, এই ছয় মাসে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ২০৫ জন। তাদের থেকে সরকার কর পেয়েছে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

করোনার কারণে গত বছরের ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ বাস্তবায়ন করার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংক আমানতের সুদ ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনে। অপরদিকে কিছু কিছু ব্যাংকের আমানতের সুদ ২ শতাংশ পর্যন্ত নেমেছে। তবুও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ব্যাংকে প্রচুর পরিমাণ আমানত আসছে। এখনও সঞ্চয়পত্রের সুদ ১২ শতাংশ হওয়ার কারণে ১০ শতাংশ ট্যাক্স দেওয়ার পরেও মানুষ সঞ্চয়পত্রের দিকেও ঝুঁকছে।

এ প্রসঙ্গে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) সংগঠন এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, করোনায় বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো নেই। যে কারণে ব্যাংক থেকে টাকা নেওয়ার আগ্রহ নেই বললেই চলে। তবে ব্যাংকে টাকা রাখছেন অনেকে। করোনার কারণে অনেকেই খরচ কমিয়েছে। মানুষ মনোযোগী হয়েছে সঞ্চয়ের প্রতি। যার ফলে ব্যাংকে আমানত বাড়ছে। একই কারণে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ বাড়ছে।

এ প্রসঙ্গে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর বলেন, করোনায় বিলাসিতা করার সুযোগ ছিল না। অনিশ্চয়তার চিন্তায় মানুষ টাকা জমানোর প্রতি গুরুত্ব দিয়েছে। তবে সঞ্চয় বাড়ার প্রধান কারণ প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স। গত কয়েক মাসে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত অর্থ নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে প্রবাসীরা ব্যাংক, সঞ্চয়পত্র ও শেয়ারবাজারকে বেছে নিয়েছেন। এছাড়া বিনিয়োগ না থাকাও এর অন্যতম কারণ। অনেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে পারেন না, যার ফলে ব্যাংকের আমানত বেড়েছে। আবার অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে সঞ্চয়পত্রও বেশি বিক্রি হয়েছে। কারণ, এখানে লাভ বেশি, ঝুঁকি কম। এছাড়া নতুন নতুন বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো শেয়ারবাজারে আসার কারণে মানুষ এখানেও টাকা রাখছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ব্যাংকে ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত অর্থাৎ ৯ মাসে সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানত বেড়েছে ৬৩ হাজার ৫৬৯ কোটি টাকা। এ সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিলেও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির আমানত রাখা বেড়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের শেষে ব্যাংকগুলোতে মোট আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ১৪ হাজার ৪৫৫ কোটি টাকা, ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ লাখ ১২ হাজার ৬২৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৯ মাসে আমানত বেড়েছে ৯৮ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা।

একই সময়ে ব্যাংকগুলোতে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর আমানত ১ লাখ ৬০ হাজার ৮৫৯ কোটি টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ লাখ ৫৫ হাজার ৫৩১ কোটি টাকা। ব্যাংক থেকে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমানত তুলে নিয়ে সরকারি তহবিলে জমা দেওয়ার কারণে এমনটা হয়েছে। এদিকে করোনা সংক্রমণের শুরুর দিকে বেসরকারি আমানতে কিছুটা ধাক্কা লাগলেও পরে তা দ্রুত বাড়তে থাকে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আমানত ২০১৯ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষে ছিল ৯ লাখ ৭৬ হাজার ৫৩৫ কোটি টাকা, যা গত বছরের সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ৭৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকায়।

২০২০ সালের প্রথম ৯ মাসে মানুষ সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানত রাখাও বাড়িয়েছে। অনেকে করোনার কারণে খরচ কমিয়ে নতুন করে সঞ্চয় শুরু করেছেন। এ সময়ে সঞ্চয়ী আমানত ২ লাখ ৪২ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে ২ লাখ ৭৯ হাজার ৬১২ কোটি টাকায় উঠেছে। স্থায়ী আমানত ৫ লাখ ৭৭ হাজার ১০৩ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৩ হাজার ৪০৮ কোটা টাকা। বিদেশি মুদ্রায় প্রবাসীদের জমার পরিমাণ ১৬ হাজার ৩৩০ কোটি টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads