• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

৪০ হাজার দক্ষ গাড়িচালক তৈরির উদ্যোগ সরকারের

ব্যয় ১০৬ কোটি টাকা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ জানুয়ারি ২০২১

নিরাপদ সড়ক গড়ার লক্ষ্যে ৪০ হাজার দক্ষ গাড়িচালক তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। যানবাহন চালনার প্রশিক্ষণে তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। ফলে একদিকে সড়ক নিরাপদ হবে; একই সঙ্গে বেকার তরুণদের জন্য পরিবহন খাতে কর্মসংস্থান ও আত্মকর্মসংস্থান সুযোগ তৈরি হবে। প্রশিক্ষিত এসব তরুণের জন্য প্রবাসেও কর্মসংস্থানের সুযোগ উন্মুক্ত হবে। এতে করে দারিদ্র্য বিমোচনের পাশাপাশি টেকসই জীবিকা নিশ্চিত করা হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। একই সঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমবে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের।

এই উদ্যোগ বাস্তবায়নে যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ নামে একটি প্রকল্প শুরু করতে যাচ্ছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১০৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদ্য সাবেক সদস্য আবুল কালাম আজাদ বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা গেলে দক্ষ গাড়িচালক তৈরি হবে। দক্ষ গাড়িচালক বিদেশে কর্মরত হলে বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য এসব দক্ষ গাড়িচালক তৈরিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখবে।

পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পটি প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০২০ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপন করা হবে। অনুমোদন পেলে গত বছর থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর। সূত্র জানায়, যানবাহনের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনার হারও বাড়ছে। পর্যাপ্ত কারিগরি জ্ঞানের অভাব এবং সড়ক ব্যবহার বিধি ও ট্রাফিক আইনকানুন না জানার কারণেই অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত কয়েকটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা সারা দেশকে নাড়া দিয়েছে। নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনা মেনে দেশে দক্ষ গাড়িচালক তৈরির জন্য এ প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে প্রতি বছর লাখ লাখ যানবাহন চলমান যানবাহনের বহরে যুক্ত হলেও এসব যানবাহন চালনার জন্য দেশে দক্ষ গাড়িচালক তৈরির জন্য সরকারি পর্যায়ে কোনো প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নেই। বেসরকারি পর্যায়ে ও ব্যক্তি উদ্যোগে কিছু প্রতিষ্ঠান আধা-দক্ষ ও অদক্ষ গাড়িচালক তৈরি করছে। এদের মাধ্যমে যানবাহন রাস্তায় চলাচলের ফলে মারাত্মক ও মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। ফলে বাংলাদেশে প্রতি বছর সড়ক দুর্ঘটনা বহু লোক আহত ও মৃত্যুবরণ করছে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় বলছে, দুর্ঘটনায় পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মৃত্যু হলে অথবা আহত হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেললে পরিবারটি অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। এর প্রভাব পরিবারের পাশাপাশি জাতীয় অর্থনীতিতেও পড়েছে।

সম্প্রতি ব্র্যাক পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, দেশে প্রায় ৩৮০টি ড্রাইভিং ট্রেনিং স্কুলে যানবাহন চালনা প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়ে থাকে। এসব স্কুলের অধিকাংশই সঠিক ও আদর্শ কারিকুলাম অনুসরণ করে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় না। এছাড়া তাদের পর্যাপ্ত সুবিধা, যেমন ড্রাইভিং সিমুলেটর, প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ গাড়ি, যন্ত্রপাতি, ভৌত অবকাঠামো এবং প্রশিক্ষিত ও লাইসেন্সধারী প্রশিক্ষক নেই। এসব স্কুলের মধ্যে থেকে যোগ্যতার বিচারে মাত্র ৬৯টি স্কুলকে বিআরটিএ থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

এ পরিস্থিতিতে প্রকল্প প্রস্তাবে আরো বলা হয়েছে, ইউনাইটেড নেশন্স ডিকেড অব অ্যাকশন ফর রোড সেফটি ২০১১-২০২০ এবং জাতিসংঘ ঘোষিত টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ২০৩০-এর গোল টার্গেট ৩ দশমিক ৬ অনুযায়ী বাংলাদেশ ২০২০ সালের মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ও নিহতের সংখ্যা অর্ধেকে নামিয়ে আনতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। এ লক্ষ্য অর্জনে বিআরটিএ গাড়িচালকদের প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিভিন্ন কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। কিন্তু এ কার্যক্রম বাস্তব চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। দেশে সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ গাড়িচালক তৈরির জন্য কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হওয়ায় ২০১৯ সালের ১৭ এপ্রিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোতে ড্রাইভিং ট্রেড কোর্স চালুর সুপারিশ করা হয়। যাবতীয় পরিস্থিতি বিবেচনাতেই ৪০ হাজার প্রশিক্ষিত গাড়িচালক তৈরির জন্য যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চায়।

প্রকল্পের মূল কার্যক্রমের আওতায় গাড়িচালনায় আগ্রহী ৪০ হাজার ব্যক্তিকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া ৮০টি যানবাহন ও ৪৩টি কম্পিউটার কেনা হবে। এর বাইরে ৪০৫টি অফিস সরঞ্জাম ও ৪ হাজার ৭০৮টি আসবাবপত্র এবং প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads