• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

প্রধানমন্ত্রীর উপহার আশ্রয়ণ-২

গৃহহীনের স্বপ্নের ঘর

  • এম এ বাবর
  • প্রকাশিত ১৮ জানুয়ারি ২০২১

প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বরাদ্দে তিন লাখ ৮৯ হাজার ৯৫৬ গৃহহীনের স্বপ্ন পূরণ হলো পাকা ঘরের। এরই মধ্যে তিন লাখ ২০ হাজার ৫২ পরিবার বুঝে পেয়েছেন স্বপ্নের পাকা ঘর। আগামী ২৩ জানুয়ারি আরো ৬৯ হাজার ৯০৪ গৃহহীন প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে বুঝে পাচ্ছেন জমিসহ ঘর। 

১৯৯৭ সালের ১৯ মে কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত্ত হওয়ায় বহু পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই বছর ২০ মে এলাকাটি পরিদর্শনে যান। তিনি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখে সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন এবং গৃহহীন পরিবারকে পুনর্বাসনের তাৎক্ষণিক নির্দেশ দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রেক্ষিতে কক্সবাজারের স্থানীয় একজনের দানকৃত জমিতে,  বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে ঘূর্ণিঝড় ও নদীভাঙন কবলিত ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে। কক্সবাজার জেলা হতেই শুরু হয়ে ভূমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবার পুনর্বাসনের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের কার্যক্রম এখন সারা দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ সরকারের অর্থায়নে ১৯৯৭ সাল থেকে জানুয়ারি ২০২১ পর্যন্ত চারটি ধাপে আশ্রয়ণ প্রকল্পে মোট তিন লাখ ৮৯ হাজার ৯৫৬টি পরিবার পুনর্বাসন করা হয়। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের মেয়াদ জুন ২০২২। ডিপিপি অনুযায়ী প্রাক্কলিত অর্থের পরিমাণ চার লাখ ৮ হাজার ২৬ দশমিক ১৬ কোটি টাকা। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যেই আরো এক লাখ একক গৃহের বরাদ্দ দেওয়া হবে। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২ সালের মধ্যে তালিকভুক্ত প্রায় আরো চার লাখ গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসনের কাজ চলছে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে অবস্থিত আশ্রায়ণ প্রকল্পের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সাল হতে ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত মোট আশ্রয়ণ প্রকল্পের সংখ্যা দুই হাজার ১৭২টি। এতে নির্মিত ব্যারাক সংখ্যা ২২ হাজার ১৬৪টি, ব্যারাকে পুনর্বাসিত ভূমিহীন পরিবার সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার ৬৬৮টি পরিবার। এছাড়া যার জমি আছে ঘর নেই, এমন পরিবারকে তার নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে এক লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৪টি। তিন পার্বত্য জেলায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী পরিবারের জন্য নির্মিত বিশেষ ডিজাইনের ঘর সংখ্যা ৫৮০টি। বরগুনা জেলার তালতলী উপজেলায় নির্মিত টং ঘর ২০টি। এ পর্যায়ে মোট পুনর্বাসিত পরিবার সংখ্যা  ৩ লাখ ২০ হাজার ৫২টি পরিবার।

তাছাড়া প্রকল্পের আওতায় আয়বর্ধক প্রশিক্ষণ প্রদান (উপকারভোগী প্রতি পরিবার হতে সর্বোচ্চ ২ জন) করা হয়  ২ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৮টি পরিবারকে। ঋণ প্রদানকৃত পরিবার সংখ্যা (উপকারভোগী পরিবার প্রতি ত্রিশ হাজার টাকা) ১ লাখ ৪৩ হাজার ১৩৪টি পরিবার। বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানকৃত প্রকল্প সংখ্যা ১ হাজার ২০৮টি। প্রকল্প আওতায় রোপণকৃত বৃক্ষের সংখ্যা  ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৬৭৪টি। নির্মাণকৃত কমিউনিটি সেন্টারের সংখ্যা ২ হাজার ২০১টি। ভিজিএফ প্রদান পরিবার সংখ্যা এক লাখ ৪২ হাজার ৯৪১ টি।

এদিকে মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে কক্সবাজার জেলার খুরুশকুল বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পে নির্মিত ৫ তলাবিশিষ্ট ২০টি বহুতল ভবনে প্রথম পর্যায়ে ছয়শটি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারকে ৪০৬ দশমিক ০৭ বর্গফুট আয়তনবিশিষ্ট একটি করে ফ্ল্যাট উপহার দেওয়া হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৫ তলাবিশিষ্ট ১৩৯ টি বহুতল ভবন নির্মাণ করে ৪ হাজার ৪০৯টি জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবার পুনর্বাসন করা হবে। খুরুশকুল প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী গত ২৩ জুলাই ’২০ উদ্বোধন করেন। অবশিষ্ট ১১৯টি বহুতল ভবন ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ কর্তৃক পৃথক ডিপিপির মাধ্যমে বাস্তবায়িত হচ্ছে। ‘বাংলাদেশের একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা অর্জনে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. মাহবুব হোসেন বলেন, আশ্রায়ণ-২ প্রকল্প একটি চলমান প্রক্রিয়া। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ব্যারাক নির্মাণের কাজ সশস্ত্রবাহিনী বিভাগের মাধ্যমে এবং ‘যার জমি আছে ঘর নেই, তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ’ এর কাজটি উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আস্তে আস্তে এ প্রকল্পের মেয়াদ ও পরিধি বাড়তে থাকবে। এরই ধারাবাহিকতায় আগামী ২৩ জানুয়ারি প্রায় ৬৬ হাজার পরিবারকে প্রধানমন্ত্রী বুঝিয়ে দেবেন। মুজিববর্ষে এক বছরের মধ্যে আরো এক লাখ ঘর নির্মাণ সম্পূর্ণ হয়ে যাবে। পর্যায়ক্রমে সরকারের পক্ষ থেকে নয় লাখ পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হবে।

প্রত্যেক পরিবারের বসবাসের জন্য নির্মিত ব্যারাকে দুটি করে কক্ষ ও জমিসহ প্রাপ্যতা সাপেক্ষে চাষযোগ্য জমি প্রদান করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক জানান, পুনর্বাসিত ভূমিহীন, গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ভূমির মালিকানা স্বত্বের দলিল/কবুলিয়ত সম্পাদন, রেজিস্ট্রি ও নামজারি করে দেওয়া হয়। পুনর্বাসিত পরিবারের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণ, কবরস্থান, পুকুর ও গবাদিপশু প্রতিপালনের জন্য সাধারণ জমির ব্যবস্থা করা হয়। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দান এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ করা হয়। প্রকল্প গ্রামে বসবাসরত উপকারভোগীদের এবং প্রকল্প গ্রামের তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য ডাটাবেজ প্রণয়ন করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads