• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

এনবিআরের নতুন উদ্যোগ

  • মোহসিন কবির
  • প্রকাশিত ২০ জানুয়ারি ২০২১

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কার্যক্রমে অনিয়ম দূর করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বৃদ্ধির পাশাপাশি সেবার মান বাড়ানোর লক্ষ্যে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে নিজস্ব হটলাইন চালু, অভিযোগ বাক্স স্থাপন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনা সফট্ওয়্যার (পিএমআইএস) ডেভেলপ, এনবিআরে ভিজিটরদের তথ্য সংরক্ষণে ‘গেস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম’ (জিএমএস) সফট্ওয়্যার ডেভেলপ এবং নিয়মিত প্রাতিষ্ঠানিক গণশুনানির আয়োজন রয়েছে। সরকারের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এসব উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গত ১৪ জানুয়ারি এনবিআরের নৈতিকতা কমিটির ত্রৈমাসিক সভায় এ-সংক্রান্ত পদক্ষেপগুলোর অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হয়। সভায় ১৮টি বিষয়ের ওপর আলোকপাত করা হয়। এসবের মধ্যে এনবিআরের কার্যক্রমে গতি আনতে বিভিন্ন নথিপত্র অনলাইনে সংরক্ষণের (ই-ফাইলিং) ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এছাড়া রাজস্ব বোর্ডের সেবা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগের পর মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়গুলো দ্রুত নিষ্পত্তির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে যেসব অভিযোগ জমা পড়ে সেগুলো খুব কমই নিষ্পত্তি হয় এবং অনেক অভিযোগ দিনের দিন পড়ে থাকলেও সেসবের বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয় না কিংবা অভিযোগ নিষ্পত্তিতে দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হচ্ছে। এতে সংস্থাটির কার্যক্রমে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। এ কারণে অভিযোগ বাক্স সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রতি বৃহস্পতিবার খুলে তালিকা তৈরির বিষয়ের ওপর জোর দেওয়া হয়। অভিযোগ ছাড়াও রাজস্ব প্রদানকারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর তাৎক্ষণিক নানা জিজ্ঞাসা ও প্রয়োজন মেটাতে দ্রুত এনবিআরের নিজস্ব হটলাইন সেবা চালুর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে ভ্যাট হটলাইন চালু রয়েছে।

এনবিআরের শুদ্ধাচার কৌশল নীতি বাস্তবায়ন বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট কর্মকর্তা প্রশাসন বোর্ডের সদস্য মো. ফয়জুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে জানান, ‘শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এনবিআরের কার্যক্রমকে অটোমেশনের আওতায় নিয়ে আসার ওপর আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। এরই মধ্যে পিএমআইএস সফট্ওয়্যার ডেভেলপ করা হয়েছে। এখন সেখানে ইনপুট দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ভিজিটরদের জন্য গেস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম-জিএমএস সফট্ওয়্যার ডেভেলপের কাজ চলছে।’

মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযোগের ধরন এবং এর সুরাহা বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত মাঠ পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আচরণগত বিষয়ের পাশাপাশি কার্যক্রম সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে যেসব অভিযোগ আসে সেগুলো একজন ফার্স্ট সেক্রেটারি নিষ্পত্তি করে থাকেন। যদি তার সিদ্ধান্তের বিষয়ে কারো অনীহা আসে, তাহলে সেটি আমার কাছে আসবে।’ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা শুদ্ধাচার চর্চায় যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়ন হলে শৃঙ্খলা ফিরে আসার পাশাপাশি যেসব অনিয়ম-দুর্নীতি রয়েছে সেগুলো বন্ধ হবে। উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘পিএমআইএস সিস্টেমটি চালু হলে এনবিআরে কতগুলো গাড়ি আছে, এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণসহ যাবতীয় তথ্য সফট্ওয়্যারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হবে। এর ফলে একটি গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ চাইলেই কেউ অস্বাভাবিকভাবে বাড়াতে পারবেন না। একটি গাড়ির ব্যাটারি কবে, কোথা থেকে, কত টাকায় কেনা হয়েছে সেসব উল্লেখ থাকবে সফট্ওয়্যারে। ফলে তখন দুদিন পরে হুট করেই বলার সুযোগ থাকবে না ব্যাটারি নষ্ট হয়ে গেছে। কারণ একটি ব্যাটারির ন্যূনতম মেয়াদ থাকে।’

জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে ‘অ্যানুয়াল পারফরম্যান্স এগ্রিমেন্ট-এপিএ’ অনুযায়ী মন্ত্রণালয়গুলোকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের কাছে ত্রৈমাসিক প্রতিবেদন জমা দিতে হয়। আর মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানগুলো মন্ত্রণালয়ের কাছে একইভাবে প্রতিবেদন জমা দিয়ে থাকে। এসব প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পারফরম্যান্স মূল্যায়ন করা হয়। জানা গেছে, সরকারের শুদ্ধাচারের নানা সূচক চর্চায় অনেকটাই পিছিয়ে এনবিআর।

এ প্রসঙ্গে এনবিআর সদস্য (কাস্টমস্ নীতি ও আইসিটি) সৈয়দ গোলাম কিবরীয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘কর্মব্যস্ততার কারণে শুদ্ধাচারের সূচকগুলো কম চর্চা হচ্ছে। এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা।’ উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়মিত মতবিনিময় করা, অভিযোগ অনুযোগগুলো পর্যালোচনা করা। এ ধরনের আরো অনেক সূচক আছে যেগুলো আমরা চর্চা করতে পারছি না। কারণ এসব কাজ মেইনস্ট্রিমের বাইরে।’ সরকারের জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় একটি মাইলফলক হিসেবে কাজ করছে। এই কার্যক্রমের সহযোগী হিসেবে কাজ করছে জাপানি সংস্থা জাইকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads