• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

প্রতীক্ষিত টিকা আসছে আজ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২১ জানুয়ারি ২০২১

আজ দেশে এসে পৌঁছাবে করোনাভাইরাসের ৩৫ লাখ টিকা। গতকাল বুধবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের ওপর একটি অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন এ কথা বলেন। এ সময় প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রী বলেন, ভারত থেকে উপহার হিসেবে ২০ লাখ ডোজ টিকা আসছে। এ ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানটি (বেক্সিমকো) যে চুক্তি করেছে, তার প্রথম চালান হিসেবে ১৫ লাখ ভ্যাকসিন আসবে। সব মিলিয়ে মোট ৩৫ লাখ ডোজ টিকা আসবে। আসার পরপরই টিকাদান কর্মসূচি শুরু হবে। এ কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে চলতে থাকবে। টিকা পাওয়ার বিষয়ে আমরা এখন যথেষ্ট নিশ্চিত। রাশিয়া-চীনসহ আরো কয়েকটি দেশও টিকা দেওয়ার বিষয়ে উৎসাহ প্রকাশ করেছে। 

এদিকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নানও আজ টিকা এসে পৌঁছানোর বিষয়টা নিশ্চিত করেছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বিশেষ ফ্লাইটে বৃহস্পতিবার (আজ) দুপুর দেড়টায় টিকা বাংলাদেশে আসবে। সেখান থেকে নিয়ে টিকা রাখা হবে তেজগাঁওয়ে ইপিআইয়ের স্টোরেজে।

বাংলাদেশ সরকারিভাবে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার তিন কোটি ডোজ কিনছে। ভারত সরকার উপহার হিসেবে যে টিকা পাঠাচ্ছে, সেটাও সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ডের টিকা। ২৫ জানুয়ারির মধ্যে দেশে সব মিলিয়ে ৭০ লাখ টিকা এসে পৌঁছাবে। প্রতিদিন দুই লাখ ডোজ হিসেবে প্রথম মাসে ৬০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। টিকা হাতে আসার পর ২৭ অথবা ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় প্রথমে পরীক্ষামূলক প্রয়োগ হবে। আপাতত টিকাদান কেন্দ্র হবে কেবল হাসপাতালে। ঢাকা মেডিকেল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা জেনারেল হাসপাতাল এবং কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে প্রাথমিকভাবে টিকা দেওয়া হবে বলে জানান স্বাস্থ্য সচিব।

বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জরুরি ব্যবহারের অনুমতি দিলেও দেশে এ টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল না হওয়ায় গণটিকাদান শুরু করার আগে সংক্ষিপ্ত পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করা হচ্ছে। প্রথম দিন ২০ থেকে ২৫ জনকে টিকা দেওয়া হবে। এরপর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকোটল অনুযায়ী এক সপ্তাহ অপেক্ষা করা হবে। তারপর সারাদেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

গণটিকাদান শুরুর আগে অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন শুরু হবে। স্বাস্থ্যকর্মীসহ মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সামনের সারিতে থাকা কর্মীরা সবার আগে টিকা পাবেন। প্রথম ডোজ দেওয়ার আট সপ্তাহ পর দিতে হবে দ্বিতীয় ডোজ। টিকার প্রাপ্যতা অনুযায়ী মাসভিত্তিক একটি বিতরণ তালিকা ইতোমধ্যে তৈরি হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রথম পর্যায়ের প্রথম ধাপে দেশের মোট জনসংখ্যার ৮ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত সেরাম ইনস্টিটিউট ছাড়া আর কারও সঙ্গে সরকারের চুক্তি হয়নি। অন্য কোনো টিকা বাংলাদেশে ব্যবহারের অনুমোদনও দেওয়া হয়নি।

টিকা প্রয়োগের পর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে, যেমন জ্বর, সর্দি গলা ব্যথা হলে তাদেরকে তাৎক্ষণিকভাবে কেয়ারের মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হবে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সর্বত নির্দেশনা দেওয়া হবে। ভারত থেকে করোনার টিকা আসা যখন সময়ের অপেক্ষা, তখন এর প্রয়োগ, সম্ভাব্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলে করণীয় কী হবে, তার প্রস্তুতিও চূড়ান্ত হয়েছে।

হাসপাতালের বাইরে আপাতত কোনো টিকাকেন্দ্র স্থাপন করা হবে না। এটা নতুন টিকা। বাইরে এটার প্রয়োগ করার পর কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে আমরা হাসপাতাল সুবিধা দিতে পারব না। চিকিৎসক টিকা গ্রহীতাদের সার্বক্ষণিক দেখভাল করবেন। প্রদান শুরু হলে করোনা বুলেটিনের মত ভ্যাকসিন বুলেটিন প্রচার করা হবে। এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয় সার্বিক সহযোগিতা করবে।

দেশের অন্তত ৮ থেকে ৯ কোটি মানুষকে যেন টিকা দেওয়া যায়, সে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এতে করে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। কোভ্যাক্স থেকে মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ হিসাবে ছয় কোটি ৮০ লাখ টিকা আসবে। এসব দেওয়া হবে তিন কোটি ৪০ লাখ মানুষকে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যদি দেশের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়া যায়, তাহলে সে দেশে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি হবে। আমাদের মাইক্রো প্ল্যানে ৮০ শতাংশ মানুষকেই টিকা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে। ৫ কোটি ১০ লাখের মানুষকে টিকা দেওয়ার পরেও যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে আরো টিকা আমদানি করা হবে। একইসঙ্গে আমি অত্যন্ত আশাবাদী, আগামী জুন-জুলাইয়ের মধ্যে আমাদের দেশেই ভ্যাকসিন তৈরি হবে এবং এটা অ্যাভেইলেবেল হয়ে যাবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads