• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

কয়েদি নিরাপত্তায় সতর্ক পুলিশ

কারাগার থেকে আদালত ও হাসপাতালে আনা-নেওয়ায়  সাথে থাকছে অস্ত্রধারী পুলিশ

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ০৫ মার্চ ২০২১

কারাগার থেকে আদালত বা হাসপাতালে কোনো কয়েদি-হাজতি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। প্রতিটি আসামির সাথে থাকছে অস্ত্রধারী পুলিশ, জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও। আসামির পলায়ন কিংবা কেউ আসামি যেন ছিনিয়ে না নিয়ে যেতে পারে সেই জন্য বিশেষ এ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি আদালত থেকে আসামি পালানোর ঘটনায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। নিরাপত্তার এ ব্যবস্থা শুধু রাজধানীকেন্দ্রিক তা নয়, সারা দেশে এ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কারা মহাপরির্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোমিনুর রহমান বলেন, কারাগার থেকে কোনো কয়েদি হোক বা হাজতি হোক তারা বাইরে গেলে নিরাপত্তার সব দায়িত্ব পুলিশের। পুলিশ-ই এর নিরাপত্তা দেখভাল করে।

যখন কারাগারের ভেতরে কোনো কয়েদি বা হাজতি বিশেষ করে অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার ক্ষেত্রেও পুলিশকে অবহিত করা হয়। আর পুলিশকে সহায়তার জন্য কারারক্ষী পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়,  দেশে কারাগারে বাইরে এসে আসামির পলায়নের ঘটনা নতুন নয়। মাঝে মধ্যেই বিভিন্নস্থানে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। এমনকি জঙ্গির মতো দুর্ধর্ষ আসামি ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনাও রয়েছে। সম্প্রতি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের এক সভায় এ বিষয়ে জোর তাগিদের প্রেক্ষিতে বর্তমানে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। 

ডাকাতি মামলার আসামির পলায়ন : চলতি বছরের গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের হাজতখানা থেকে ডাকাতি মামলার এক আসামি পালিয়ে যায়। তাকে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে আদালতে হাজিরা দিতে আনা হয়েছিল। পালিয়ে যাওয়া আসামি হারুনুর রশিদের  (২৭) বিরুদ্ধে কেরানীগঞ্জ ও ঢাকার রমনা থানায় হত্যা চেষ্টাসহ চুরি ও ডাকাতির পাঁচটি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি ছিল। আসামি পলায়নের ঘটনায় সংশ্নিষ্ট হাজতের ইনর্চাজ এসআই বদরুল আলমসহ দায়িত্বরত পুলিশের ৮ সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। পুলিশ জানায়, পলাতক হারুনুর রশিদের গ্রামের বাড়ি ভোলার লালমোহনে। তার বাবার নাম মফিজ মিয়া।

গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার আসামির পলায়ন : ২০১৬ সালের ১৩ নভেম্বর রাজধানীর বাড্ডায় গারো তরুণী ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি রাফসান হোসেন রুবেল হাতকড়া পরা অবস্থায় আদালত থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় পর দায়িত্বে অবহেলার জন্য  দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

জানা যায়,  বাড্ডা থানার উপ-পরিদর্শক ইমরান উল হাসান একজন কনস্টেবলসহ আসামি রুবেলকে নিয়ে নিম্ন আদালতে গিয়েছিলেন। সেখানে রুবেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিকালের দিকে ম্যাজিস্ট্রেটের কক্ষে নেওয়ার আগেই সে কৌশলে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় তৎকালীন সময়ে বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে।

হাজতখানা সাবেক এসআইয়ের পলায়ন : ২০১৫ সালের ৩০ নভেম্বর পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনে ব্যবসায়ী ফারুক হোসেনের মৃত্যুর ঘটনায় করা হত্যা মামলার আসামি রাজধানীর কাফরুল থানার সাবেক উপপরিদর্শক (এসআই) রেজাউল করিম পাটোয়ারী আদালতের হাজতখানা থেকে পালিয়ে যান। জামিন নাকচ হওয়া তিন আসামিকে হাজতখানা থেকে কারাগারে পাঠানোর সময় পালান তিনি।

জানা যায়, ঢাকার বিশেষ জজ আখতারুজ্জামানের আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন হত্যা মামলার তিন আসামি কাফরুল থানার সাবেক দুই উপপরিদর্শক নুরুজ্জামান ও রেজাউল করিম পাটোয়ারী এবং পুলিশের তথ্যদাতা (সোর্স) রতন বাবু। আদালত তিনজনেরই জামিনের আবেদন নাকচ করে তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে তাদের আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। পরে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর সময় পুলিশ বুঝতে পারে, এক আসামি (রেজাউল) পালিয়ে গেছে।

জেএমবির তিন দুর্ধর্ষ জঙ্গি প্রকাশ্যে ছিনতাই : সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটে ২০১৪ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি। ময়মনসিংহের ত্রিশালে সকালে প্রকাশ্যে প্রিজনভ্যানে গুলি চালিয়ে ও বোমা মেরে জঙ্গি মামলার তিন আসামিকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় গুলিতে এক পুলিশ সদস্য নিহত হন। এক উপপরিদর্শকসহ (এসআই) আহত হন প্রিজনভ্যানে থাকা পুলিশের তিনজন সদস্য। ওই দিন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

পুলিশ জানায়, ছিনিয়ে নেওয়া তিন আসামিই নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সঙ্গে যুক্ত। জেএমবির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরাই এই তিন আসামিকে ছিনিয়ে নেয়।

জানা যায়, গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারের হাই সিকিউরিটিতে রাকিব হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ ওরফে রাসেল, কারাগারের পার্ট-১-এ সালাউদ্দিন ওরফে সজীব ওরফে তৌহিদ ও কারাগারের পার্ট-২-এ মিজান ওরফে বোমা মিজান ওরফে জাহিদুল হাসান সুমনকে ডান্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় সকাল আটটার দিকে ময়মনসিংহের আদালতে হাজির করার জন্য প্রিজনভ্যানে তোলা হয়। তারা তিনজনই জেএমবির জঙ্গি তৎপরতা মামলায় আসামি। তাদের মধ্যে সালাউদ্দিন ও রাকিব মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ও মিজান যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত তিন আসামি রাকিব, সালাউদ্দিন ও মিজানকে বহনকারী প্রিজনভ্যানটি ময়মনসিংহের দিকে যাচ্ছিল। পথে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ত্রিশালের সাইনবোর্ড এলাকায় প্রিজনভ্যানটি লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করে আসামিদের সহযোগীরা। তারা তিন আসামিকে ছিনিয়ে নেয়। এ সময় এসআই হাবিব, কনস্টেবল আতিক ও সোহেল এবং প্রিজনভ্যানের চালক সবুজ গুলিবিদ্ধ হন। পরে তাঁদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে পুলিশ কনস্টেবল আতিক মারা যান। নিহত আতিক (৩৫) গাজীপুর পুলিশ লাইনের কনস্টেবল ছিলেন।

এদিকে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, আসামি আনা নেওয়ার ক্ষেত্রে আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় পুলিশ বেশি সতর্ক। বিশেষ করে ঢাকায় আসামি পালানোর ঘটনায় সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সেই মোতাবেক কাজও শুরু হয়েছে।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া সেন্টারের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ইফতেখায়েরুল ইসলাম বলেন, কারাগার থেকে আসামি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে পুলিশ সবসময়ই সতর্ক থাকে। এখন আরো সতর্ক। তিনি বলেন, আমরা যখন আসামি আনা-নেওয়া করি সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে করা হয়। তবে দুএকটা যে ঘটনা ঘটে সেগুলো বিচ্ছিন্ন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads