• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

একুশে গ্রন্থমেলায় আসছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ৪০ বই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ মার্চ ২০২১

মুজিববর্ষ উদ্যাপনের অংশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ওপর লেখা ১০০টি বই প্রকাশ করার ঘোষণা দিয়েছিল বাংলা একাডেমি। যদিও সে লক্ষ্য অর্জিত হয়নি। তবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা কমপক্ষে ৪০টি বই প্রকাশ করা হবে; যার মধ্যে ৩৬টি মেলার প্রথম দিন থেকে পাওয়া যাবে।

বাংলা একাডেমি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারের বইমেলা কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে। কারণ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এ মেলা। তাই এ দুটি বিষয় মাথায় রেখে করা হচ্ছে মেলার কাঠামোগত সাজসজ্জা। বঙ্গবন্ধুর জীবনীসহ মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয়কে উপজীব্য হিসেবে ফুটিয়ে তোলা হবে মেলার দুই ক্যানভাস সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। আর পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া হবে বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা এবং তার ওপর অন্য লেখকদের লেখা নতুন বইগুলো। এ ছাড়া বাংলা একাডেমির অনুষ্ঠানমালায় মূলমঞ্চে প্রতিদিনই থাকবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত গ্রন্থের ওপর বিষয়ভিত্তিক আলোচনা, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ ও আবৃত্তিসহ নানা আয়োজন।

একাডেমি সূত্রে জানা গেছে, এবারের বইমেলায় বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ১০০টি বইয়ের মধ্যে ৩৬টি বই মেলার প্রথম দিন থেকে পাওয়া যাবে। বইগুলো হচ্ছে- বঙ্গবন্ধুর লেখা ‘আমার দেখা নয়াচীন’, সৈয়দ শামসুল হকের ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’, ইধষষধফ ড়ভ ড়ঁৎ যবৎড়, ইধহমধনধহফযঁ, হারুন-অর-রশিদের ‘বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লব : কী ও কেন’, ‘৭ মার্চের ভাষণ কেন বিশ্ব-ঐতিহ্য সম্পদ : বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশ’, অজয় দাশগুপ্তের ‘বঙ্গবন্ধুর আন্দোলন কৌশল ও হরতাল’, নূহ-উল-আলম লেনিনের ‘রাজনীতিতে হাতেখড়ি ও কলকাতায় শেখ মুজিব’, অনুপম হায়াতের ‘বঙ্গবন্ধু ও চলচ্চিত্র’, মোহাম্মদ আলী খানের ‘ডাকটিকিট ও মুদ্রায় বঙ্গবন্ধু’, জালাল ফিরোজের ‘বঙ্গবন্ধু গণপরিষদ সংবিধান’, সাইমন জাকারিয়ার ‘সাধক কবিদের রচনায় বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনীতি’, সমীর কুমার বিশ্বাসের ‘বঙ্গবন্ধুর সমবায় ভাবনা’, কামরুল হকের ‘বঙ্গবন্ধু ও সংবাদপত্র : ছয় দফা থেকে গণঅভ্যুত্থান’, আবুল কাসেমের ‘বঙ্গবন্ধুর অর্থনৈতিক উন্নয়ন দর্শন : জাতীয়করণনীতি এবং প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা’, মুর্শিদা বিনতে রহমানের ‘স্বাধীনতার পথে বঙ্গবন্ধু : পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭০ এর নির্বাচন’, শাজাহান কিবরিয়ার ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু’, আবুল কাসেমের ‘বঙ্গবন্ধু ও চা শিল্প’, আসাদ চৌধুরীর ‘সংগ্রামী নায়ক বঙ্গবন্ধু’, এম আবদুল আলীমের ‘বঙ্গবন্ধু ও ভাষা-আন্দোলন’, সুব্রত বড়ুয়ার ‘বঙ্গবন্ধুর বীরগাথা’, দিব্যদ্যুতি সরকারের ‘বঙ্গবন্ধুর কারাজীবন’ ও পিয়াস মজিদের ‘মুক্তিযুদ্ধ বঙ্গবন্ধু ও বাংলা একাডেমি’  এ ছাড়া শামসুজ্জামান খানের সম্পাদনায় ‘বঙ্গবন্ধুর নানা বর্ণে নানা রেখায়’, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ বহুমাত্রিক বিশ্লেষণ’, মিনার মনসুর ও দিলওয়ার চৌধুরীর সম্পাদনায় ‘শেখ মুজিব একটি লাল গোলাপ’, নাসিমা বেগমের ‘রেণু থেকে বঙ্গমাতা’, বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘ঘঊড ঈঐওঘঅ ১৯৫২’, মাহফুজুর রহমানের ‘ব্যাংক ও বীমা খাতে বঙ্গবন্ধুর অবদান’, আবু মো. দেলোয়ার হোসেনের ‘বঙ্গবন্ধু বিষয়ক গ্রন্থপঞ্জি’, সাজেদুল আউয়ালের ‘বঙ্গবন্ধুর সংস্কৃতি ভাবনা’ সুভাষ সিংহ রায়ের ‘বঙ্গবন্ধু ও অসাম্প্রদায়িকতা’ এবং নুরুন নবীর লেখা ‘ইধহমধনধহফযঁ ধহফ ঞঁৎনঁষবহঃ ইধহমষধফবংয’, হাবীবুল্লাহ সিরাজীর সম্পাদনায় ‘বর্ষপঞ্জি’, বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত কবিতা ও বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত ছড়া।

বাংলা একাডেমির গবেষণা, সংকলন এবং অভিধান ও বিশ্বকোষ বিভাগের পরিচালক মোবারক হোসেন বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি যে ১০০টি বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে তার মধ্যে ৪০টি বই এবারের মেলায় পাওয়া যাবে। তার মধ্যে ৩৬টি বই মেলার প্রথম দিনে পাঠক পাবে। আর কিছু বইমেলার সময় প্রকাশিত হবে।’

বাংলা একাডেমির বিপণন বিভাগ থেকে জানা যায়, বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বই গায়ে লেখা মূল্য থেকে ২৫ শতাংশ কমিশনে পাঠক কিনতে পারবেন। আর বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা কারাগারের রোজনামচা, চৎরংড়হ উরধৎরবং, আমার দেখা নয়াচীন, ঘঊড ঈঐওঘঅ ১৯৫২ এ চারটি বইসহ তার ওপর লেখা ৩১টি বইয়ের একটি সেট তৈরি করা হয়েছে। প্রতি সেট বইয়ের মূল্য ধরা হয়েছে ছয় হাজার একশ ১৬ টাকা।

এদিকে বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা কয়েকটি বইয়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন খোদ বাংলা একাডেমির কর্মকর্তাদের কেউ কেউ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যেসব লেখক বই লিখেছেন সেগুলোর অধিকাংশ তথ্যবহুল ও বিশ্লেষণধর্মী। তবে কয়েকজন লেখক আবেগতাড়িত হয়ে বই লেখায় এর মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই আগামী সময়ে এ বিষয়ে আরো সতর্ক হতে হবে বাংলা একাডেমিকে। কারণ বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা মানেই বঙ্গবন্ধু। তাই বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বইয়ের মান নিয়ে হেলাফেলা করা যাবে না।

করোনাভাইরাসের কারণে প্রচলিত রীতি অনুসারে এ বছর ১ ফেব্রুয়ারি থেকে অনুষ্ঠিত হয়নি অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ‘হে স্বাধীনতা’ প্রতিপাদ্য সামনে রেখে আগামী ১৮ মার্চ শুরু হবে এবারের বইমেলা, শেষ হবে ১৪ এপ্রিল।

১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির গেটে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন মুক্তধারা প্রকাশনীর মালিক চিত্তরঞ্জন সাহা। ১৯৭৭ সালে তার সঙ্গে আরো অনেকে যোগ দেন।

১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী বাংলা একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। পরের বছর মেলার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি।

১৯৮৩ সালে মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা আর করা যায়নি। পরের বছর ১৯৮৪ সালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে ‘অমর একুশে বইমেলা’র সূচনা হয়।

মাতৃভাষার অধিকার আদায়ের মাস ফেব্রুয়ারিজুড়ে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণের এই বইমেলা এখন বাঙালির মননের মেলায় পরিণত হয়েছে।

প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি এ মেলার পর্দা উঠলেও ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে ভোট থাকায় গত বছর অমর একুশে গ্রন্থমেলা একদিন পিছিয়ে ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়।

ততদিনে চীন ছাড়িয়ে করোনাভাইরাস অন্যান্য দেশে পৌঁছাতে শুরু করলেও বাংলাদেশে এর প্রকোপ দেখা দেয়নি। ফলে ফেব্রুয়ারির শেষে নির্বিঘ্নেই মেলার সমাপ্তি ঘটে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads