• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
রিকশাচালকরা সংসার চালানো নিয়ে বিপাকে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

রিকশাচালকরা সংসার চালানো নিয়ে বিপাকে

  • ইমরান আলী
  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০২১

আবু বকরের বয়স ৪০ ছুঁয়েছে। গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায় হলেও জীবিকার তাগিদে ব্যাটারিচালিত রিকশা চালান রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায়। সংসারে স্কুলপড়ুয়া তিন সন্তান নিয়ে কোনোমতে দিন কাটান। সঞ্চয় বলতে আছে একটিমাত্র রিকশা, সেটাও এনজিও থেকে কিস্তিতে টাকা নিয়ে কেনা। সরকার ঘোষিত লকডাউনেও তিনি রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন।

আবু বকর বলেন, ‘রিকশা চালানোর উপার্জনেই চলে আমার সংসার। এক দিন চাল না কিনলে ঘরে চুলা জ্বলে না। পাঁচজনের সংসারে দৈনিক ৩০০-৪০০ টাকা খরচ হয়। এ ছাড়া মাস শেষে ঘর ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল ও এনজিওর কিস্তি তো আছেই। বসে থাকলে কেউ খাবার দেবে না।’ তিনি জানান, ‘করোনার ঝুঁকি থাকলেও রিকশা নিয়ে বের হতেই হবে। না হলেও পরিবারের সবাই না খেয়ে থাকবে। সন্তানদের মুখে খাবার দিতে না পারলে খুব কষ্ট হয়। আমরা লকডাউন চাই না আমরা তিন বেলা খেয়ে-পরে বাঁচতে চাই। তিনি বলেন, আমার মতো হাজারো মানুষ অটোরিকশা চালিয়ে জীবনধারণ করে। লকডাউনে কোনো কিছুই না চললে এরা যাবে কোথায়? খাবে কী? শুধু আবু বকর নয়, রাজধানীজুড়ে হাজারো রিকশা, অটোরিকশার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও তাদের পরিবারে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। সরকার যেভাবে কঠোর লকডাউনের ঘোষণা দিয়েছে তাতে করে রিকশা ও অটোরিকশার চালকরা দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। মূল রাস্তায় অটোরিকশা না উঠলেও পাড়ার রাস্তাগুলোতে এরা চলাচল করে। যদিও পাড়ার রাস্তায়ও এগুলো চলাচল নিষিদ্ধ। তার পরও স্থানীয় কাউন্সিলর কিংবা প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায়ায় বিশেষ কার্ড দিয়ে প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলাচল করে।

অটোরিকশাচালক আবদুল হাকিম বলেন, সন্ধ্যার পর তিনি মেরাদিয়া থেকে রামপুরা ব্রিজে চলাচল করেন। আর তার আগে বনশ্রী ও খিলগাঁওয়ের বিভিন্ন রাস্তায় থাকেন। তিনি বলেন, বনশ্রীর বিভিন্ন গেটে এখনই বাঁশ দিয়ে রাখা হয়েছে। অনেক রাস্তায় চলতেও দেয় না। সামনে যে কঠোর লকডাউনের কথা বলা হচ্ছে আমরা যদি গাড়ি চালাতে না পারি আমরা যাব কোথায়।

তিনি বলেন, পরিবার আছে, ঘর ভাড়া আছে, বিদ্যুৎ বিল আছে সঙ্গে রিকশার কিস্তি। অটোরিকশা যদি চালাতে না পারি তাহলে কেমনে আমরা চলব। বউ-বাচ্চারে কীভাবে খাবার দেব। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, গতবারের লকডাউনে আমরা লুকোচুরি করে কোনোমতে গাড়ি চালাতে পেরেছি। কাউন্সিলর অফিস হতে কিছু সাহায্যও করেছিল। এখন আমরা কী করব?

হতাশার কথা জানালেন সবুজ নামের আরেক অটোচালক। তিনি বলেন, সামনে আমার জন্য কঠিন সময়। আমরা মা অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে আছে। আমি প্রতিদিন অটো চালিয়ে যা আয় হয় তার একটি অংশ মায়ের চিকিৎসায় ব্যয় করি। সামনে যদি গাড়ি না চালাতে পারি, তাহলে কেমনে চলব। মায়ের চিকিৎসাই বা কেমনে হবে। সবুজ জানালেন, তারা তিন ভাই। সবাই অটো চালান। সবাই মিলে মায়ের চিকিৎসাসহ বাড়ির খরচ চালান। 

রিকশাচালক আবদুর রহিম বলেন, তিনি বেশ কয়েক বছর বনশ্রী এলাকায় রিকশা চালান। গতবার লকডাউনের সময় কষ্ট করে রিকশা চালিয়েছেন। তিনি বলেন, স্ত্রী ছেলে মেয়ে নিয়ে ৩ জনের সংসার। ছোট ছোট ছেলে মেয়ে। এক দিন রিকশা না চালালে আমরা খেতে পারি না। সামনে লকডাউন এক সপ্তাহের বলতেছে, কিন্তু কতদিন থাকবে কেউ জানে না। তিনি আরো বলেন, গতবারও এক সপ্তাহের কথা বলে কত দিন লকডাউন থাকল। এবারও সে রকমই হবে।

চা দোকানি সেলিম বলেন, গত লকডাউনে আমরা ঠিকমতো দোকান খুলতে পারিনি। কিন্তু ভাড়া ঠিকই দিতে হয়েছে। এবারের প্রথম লকডাউনে দোকান খুলেছি, পুলিশ এলে বন্ধ করি। পুলিশ গেলে আবার খুলি। এভাবেই চলতেছে। তিনি বলেন, ১৪ তারিখ থেকে শুনতেছি কঠোর লকডাউন, তাহলে আমাদের কি হবে। আমরা তো দোকানের ওপর নির্ভরশীল। দোকান না চললে আমরা খাবো কী, যাবো কোথায়?

আগামীকাল থেকে আসা লকডাউনে নিম্নবিত্ত এ মানুষগুলো হতাশায় ভুগছেন। এমনকি ঠিকমতো দিন চলবে কি না তা সন্দিহান রয়েছেন। তারা বলছেন, সরকারিভাবে সহায়তা না পেলে তাদের দিনাতিপাত কঠিন হয়ে পড়বে। এ জন্য তারা সরকারিভাবে সহায়তা কামনা করেছেন।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads