• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
লকডাউনের উত্তাপ কাঁচাবাজারে

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

লকডাউনের উত্তাপ কাঁচাবাজারে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০২১

লকডাউনের প্রভাবে রাজধানীর সবগুলো কাঁচাবাজারে সবজিসহ বিভিন্ন তরকারির দাম বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। রমজান উপলক্ষে প্রতিবছর সবজির দাম বৃদ্ধি অনেকটা নিয়মে পরিণত হয়েছে। তবে এবারের চিত্রটা ব্যতিক্রম। লকডাউনের অজুহাতে প্রতিটি সবজির দাম বেড়েছে তিন থেকে পাঁচগুণ বেশি। এদিকে, এবার চালের দাম বৃদ্ধির জন্য সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

লকডাউনের দ্বিতীয় দিন গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতা কম থাকলেও এক সপ্তাহের ব্যবধানে কোনো কোনো সবজি এবং ফলমূলের দাম বেড়েছে প্রায় দিগুণ। তবে কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। রাজধানী কারওয়ান বাজার, বাড্ডা, উত্তর বাড্ডা, নতুনবাজার ঘুরে এ পরিস্থিতি দেখা গেছে।

বাজারগুলোতে আলু, পটল, করলা, টমেটো, শিম, লাউ, ঢেঁড়স, বেগুন, মুলা, লালশাক, পালংশাকসহ হরেকরকমের শাক-সবজি ছিল ভরপুর। প্রতিকেজি ঢেঁড়স ৬০ টাকা, বেগুন (লম্বা) ১০০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৯০ টাকা, সাদা/সবুজ বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পটল ৮০ টাকা, বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি দরে। এছাড়া প্রতিকেজি শসা ৮০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, গাজর ৪০ টাকা এবং আলু ২৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। এসব সবজির দাম গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে বেড়েছে প্রায় ২০-৩০ টাকা। কাওরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির জন্য লকডাউনে পরিবহন সঙ্কটে সরবরাহের ঘাটতিকে দায়ী করেছেন। তারা জানান, লকডাউনের কারণে অনেক সবজি পৌঁছাতে পারছে না। ফলে দাম বেড়েছে। তবে সরবরাহের সমস্যা না থাকলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে জানান তারা। তবে  বাজারে সবজির সরবরাহের ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়নি। এছাড়া, সরবরাহের ঘাটতির জন্য ব্যবসায়ীরা পরিবহনের সংকটের কথা বললেও সরকার খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহনকে লকডাউনের নিষেধাজ্ঞার বাইরে রেখেছে। ফলে পরিবহন সংকটের দাবি মানতে নারাজ ক্রেতারা। তাদের অভিযোগ, লকডাউনের দোহাই দিয়ে অসাধু ব্যবসায়ীরা অতিরিক্ত মুনাফালাভের পাঁয়তারা করছে। মনির হোসেন নামে বাড্ডা এলাকার এক ক্রেতা জানান, ‘জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধির জন্য বরাবরই বিক্রেতারা সরবরাহের ঘাটতির দোহাই দিয়ে থাকেন। কিন্তু বাজারে সরবরাহের ঘাটতির কোনো লক্ষণই নেই। আসলে এটি ব্যবসায়ীদের কারসাজি ছাড়া আর কিছুই না।’

খুচরা বিক্রেতারা দাম বৃদ্ধির জন্য সরবরাহের ঘাটতির পাশাপাশি পাইকারি ব্যবসায়ীদেরও দায়ী করেন। বিক্রেতা বাবর আলী জানান, ‘লকডাউনের আগে অনেকেই কয়েকদিনের বাজার একসাথে করে রেখেছেন। এতে বাজারে ঘাটতির তৈরি হয়েছে এবং এখন ক্রেতার সংখ্যাও কম। এখন পাইকারি বিক্রেতারা বেশি দামে বিক্রি করছে বলে আমাদেরও বেশিতে বিক্রি করতে হচ্ছে।’

বাড্ডার পাঁচতলা বাজারে বাজার করতে আসা ফজলুল হক বলেন, ‘বাজারে তেমন ক্রেতা নেই। সেই হিসেবে সব সবজিরই দাম কমার কথা। কিন্তু বাজারে এসে দেখি সব কিছুরই দাম বেড়ে গেছে। কোনো রকম অজুহাত পেলেই দাম বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা।’

তবে গত সপ্তাহের তুলনায় কিছুটা কমেছে ব্রয়লার মুরগির দাম। কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী মুরগির দাম। তবে এলাকাভেদে দামের তারতম্য লক্ষ্য করা গেছে। একই রকমের সবজি এলাকাভেদে ৫-১০ টাকা কম/বেশিতে বিক্রি করা হচ্ছে।  

এদিকে, মাঝে কয়েকটা দিন চালের দাম কিছুটা কমলেও আবারো বেড়েছে অতি প্রয়োজনীয় এই খাদ্যপণ্যের দাম। বর্তমানে ৫৫ টাকার নিচে মোটা চাল ও ৬৫ থেকে ৭০ টাকার নিচে চিকন চাল নেই। গতকাল গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভার্চুয়ালি প্রাক-বাজেট আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ কথা জানান। এসময় বিপুল পরিমাণ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া সত্ত্বেও দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে মন্ত্রী বলেন, ধান, চাল ও গম প্রকৃতির ওপর নির্ভরশীল। আমরা দাবি করি খাদ্যশস্যে স্বাবলম্বী। খাদ্যশস্যে আমরা স্বাবলম্বী হতে পারি সেই বছর যে বছর আমাদের প্রকৃতি স্বাভাবিক থাকে। যদি প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ আসে সেটা আমরা মেইনটেইন করতে পারি না। আমাদের এখানে যে পরিমাণ জমি, দক্ষতা ও সক্ষমতা আছে তা যথাযথ কাজে লাগাতে পারলে আমরা সফল সেই বছর। কিন্তু আমরা দেখেছি গত বছরও আমাদের অনেক বোরো নষ্ট হয়েছে। তখন যেসব কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের জন্য একটি প্যাকেজ নেওয়া হচ্ছে। এখন সেভাবেই কাজটি করা হচ্ছে।

সরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির তথ্যেও মিলেছে চালের দাম বাড়ার প্রমাণ। তবে খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যের সঙ্গে টিসিবির দেওয়া দামের বেশ ফারাক আছে।

রাজধানীর শীর্ষ ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের মোকাম খ্যাত নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, কুষ্টিয়া ও জয়পুরহাটের আড়তে দাম বাড়লে তার প্রভাব সারা দেশেই পড়ে। তাদের কথা হলো, কমিশনের বিনিময়ে রাজধানীর ব্যবসায়ীরা চাল বিক্রি করেন। চালের দাম বাড়লে তাদের কোনো লাভ নেই। অর্থাৎ সিন্ডিকেটের সঙ্গে রাজধানীর ব্যবসায়ীরা যুক্ত নয়। একচেটিয়া লাভ যদি কিছু হয় তা মোকামেই হয়।

অন্যদিকে, চালের দাম বৃদ্ধির জন্য লকডাউনে বিধি-নিষেধ আরোপকে দায়ী করছেন পাড়া-মহল্লার ব্যবসায়ীরা। তারা জানান, বারবার বিধিনিষেধের কারণে চাল সরবরাহে নিয়োজিত ট্রাক ভাড়া বাড়ে। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ট্রাক মালিকরা। তাদের দাবি, করোনার কারণে ট্রিপ কমে গেছে। তাই লোকসান ঠেকাতে কম ভাড়াতেই পণ্য পরিবহন করছেন তারা। আগে বগুড়া থেকে একটা ট্রাক ঢাকায় পাঠাতাম ১৮ হাজার টাকায়। এখন পাই ১৪-১৬ হাজার টাকা।

এছাড়া, দাম বৃদ্ধির জন্য বিক্রেতারা গত সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণার পরপরই হুট করে অনেকেই প্রয়োজনের অতিরিক্ত কিনে রেখেছেন। অন্যদিকে, অনেক মিল মালিকও এই সময়ে চালের সরবরাহ কমিয়ে দেন। এসব কারণে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে।

খুচরা ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে মাঝারি মানের পাইজাম, লতা ও মোটাচাল। এখন মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়। যা আগে ছিল ৫৪ থেকে ৫৬ টাকা। অপরদিকে মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়, যা আগে ছিল ৪৫ থেকে ৫২ টাকা।

মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬৬ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে। বিধিনিষেধ ঘোষণার আগে ছিল ৬৪ থেকে ৬৬ টাকা কেজি।

টিসিবির দেওয়া তথ্যমতে, বাজারে মিনিকেট ও নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি দরে। যদিও এই দরে দেশের কোথাও নাজিরশাইল বা মিনিকেট পাওয়া যায় না। টিসিবি বলছে, এক মাসের ব্যবধানে মোটা চালের দাম ২ দশমিক শূন্য ৮ শতাংশ বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪৬ থেকে ৫২ টাকা দরে। মাঝারি মানের চাল ১ দশমিক ৮২ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬০ টাকায়।

এদিকে, খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে জারি করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারিভাবে চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেসব আমদানিকারক ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এলসি খুলেছেন, কিন্তু চাল বাজারজাত করতে পারেননি, তাদের এলসি করা সম্পূর্ণ চাল বাজারজাতকরণের জন্য ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads