• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তের ভিড়

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

টিসিবির লাইনে মধ্যবিত্তের ভিড়

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ এপ্রিল ২০২১

বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেশি। লকডাউনে কাজকর্ম নেই। কোনো রকমে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকাই দায়। সবজি থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রতিটি পণ্যের দাম দ্বিগুণ হয়েছে। কিন্তু আয় বাড়েনি মোটেও। তাই বাধ্য হয়েই কমদামে পণ্য নিতে টিসিবির লাইনে দাঁড়িয়েছি।

গতকাল শনিবার রাজধানীর মৌচাক মোড়ে কথাগুলো বলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করা মালিবাগের সফদর হোসেন। তিনি ওই স্থানে টিসিবির পণ্য কেনার লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন।  সাধারণত এমন লাইনে আগে নিম্নআয়ের মানুষের সংখ্যাই বেশি থাকত। কিন্তু করোনাভাইরাস সংক্রমণের এই সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অত্যধিক বেড়ে যাওয়ায় পাল্টে গেছে সে দৃশ্য।

টিসিবির পণ্য নিতে লাইনে যারা দাঁড়িয়েছেন তাদের মধ্যে নিম্নআয়ের মানুষের তুলনায় মধ্যবিত্তের সংখ্যাই বেশি। ক্রেতারা বলছেন, ভোগ্যপণ্যের বাজারে চলছে ঊর্ধ্বগতি। তার ওপর রমজান মাসে নানা বাহানায় বাড়ানো হয়েছে সব কিছুর দাম। একইসঙ্গে করোনার সংক্রমণ রোধে সরকারের কঠোর বিধিনিষেধে এবং লকডাউনে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠে গেছে। কাজকর্ম নেই, আয় নেই। এমন অবস্থায় যেখানেই কম দামে কিছু পাওয়া যাচ্ছে সেখানেই ছুটছেন তারা।

খিলগাঁও এলাকায় টিসিবির ট্রাকের সামনে লাইনে দাঁড়ানো ওমর ফারুক নামের এক চাকরিজীবী বলেন, বাজারে চিনি, তেল, ছোলার দাম অনেক বেশি। টিসিবির ট্রাকে একটু কম দামে পাওয়া যায়। তাই এখান থেকেই সংগ্রহ করি। এখানে রোদের মধ্যে মানুষের ভিড়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে একটু কষ্ট হয়। কিন্তু কিছু করার নেই। টাকা বাঁচাতে এই কষ্টটুকু তো মেনে নিতেই হবে। ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, লকডাউন আসার পর প্রশাসনের কড়াকড়িতে ঠিকমতো বের হতে পারি না। আমরা গরিব মানুষ, দিন এনে দিন খাই। বাজারে এক কেজি সয়াবিন তেল ১৩৫ টাকা। কিন্তু এখানে ১০০ টাকায় পাওয়া যায়। তাই টিসিবির ট্রাক থেকেই পণ্য সংগ্রহ করি। জানা গেছে, রমজান মাস উপলক্ষে ৬ ধরনের পণ্য মিলছে টিসিবির ট্রাকসেলে। এগুলো হচ্ছে-চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ এবং খেজুর। সারা দেশে মোট ৫শটি ট্রাকের মাধ্যমে এই পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে, যার মধ্যে রাজধানীতেই ১০০টি ট্রাক ডিলারদের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি করছে। রমজান মাসজুড়ে শুক্রবার বাদে প্রতিদিনই চলবে এ কার্যক্রম।

ট্রাকসেল থেকে একজন ক্রেতা দিনে ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৪ কেজি চিনি, ৫০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি মসুর ডাল, ১০০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ লিটার সয়াবিন তেল, ২০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ৫ কেজি পেঁয়াজ, ৫৫ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ২ কেজি ছোলা এবং ৮০ টাকা কেজি দরে সর্বোচ্চ ১ কেজি খেজুর টাকা কিনতে পারছেন।

ট্রাকসেলের বিক্রেতা রিপন হাওলাদার বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরেই টিসিবির পণ্য বিক্রির সঙ্গে জড়িত। একসময় দেখতাম শুধুমাত্র নিম্নআয়ের মানুষজন টিসিবির পণ্য কিনতে ভিড় জমাত। কিন্তু গত বছর থেকে সেই অবস্থা নেই। এখন নিম্নআয়ের মানুষের চেয়ে  মধ্যবিত্ত মানুষের সংখ্যাই বেশি থাকে। দিন দিন টিসিবির পণ্য ঘিরে মানুষের চাহিদা ও ভিড় দুটোই বেড়েছে। সে জন্য বরাদ্দও আগের তুলনায় বেড়েছে। এ বছর রমজানে তেল, ছোলা এবং চিনির চাহিদা বেশি। তাই আমরাও যতক্ষণ পারছি বরাদ্দ অনুযায়ী বিক্রি করে যাচ্ছি।

তপ্ত দুপুরে খামারবাড়ি মোড়ে টিসিবির একটি ট্রাকের পেছনে মোটামুটি ৭০ জন মানুষের লাইন ছিল। ওখানেই দাঁড়িয়ে ছিলেন প্রবীণ এক দম্পতি। এই দম্পতি তাদের ছেলের সঙ্গে থাকেন পশ্চিম রাজাবাজারে। তারা জানান, বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ব্যাপক চড়া। সংসারের ব্যয় মেটাতে চাকরিজীবী ছেলের কষ্ট হচ্ছে। তাই স্বামী-স্ত্রী দুজন মিলে টিসিবির ট্রাকের সামনে দাঁড়িয়েছেন কম দামে তেল-চিনি কিনতে। দুই ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে তাঁরা তেল-চিনি কিনে বাসায় ফেরেন।

একটি ওষুধ কোম্পানির বিক্রয়কর্মী হিরা আক্তার মহাখালীতে টিসিবির ট্রাকের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুই লিটার ভোজ্যতেল এবং দুই কেজি করে চিনি, ছোলা, ডাল ও পেঁয়াজ কেনার পর তিনি বলেন, বাজার থেকে কিনলে ১৯০ টাকা বেশি লাগত। তবে অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হলো। হিরা আক্তার আরো বলেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অনেক বেশি। তেল-মসলা কম ব্যবহার করেও খরচ পোষানো যাচ্ছে না।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads