• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ঘূর্ণিঝড়ের ধাবমান ক্ষমতা কমায় বাড়ছে অতিবৃষ্টি ও বন্যার ঝুঁকি

পৃথিবীর জলবায়ুও হারিয়ে ফেলছে নিজস্ব গতিপ্রকৃতি

ছবি: ইন্টারনেট

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

ঘূর্ণিঝড়ের ধাবমান ক্ষমতা কমায় বাড়ছে অতিবৃষ্টি ও বন্যার ঝুঁকি

  • তপু রায়হান
  • প্রকাশিত ২২ জুন ২০১৮

পরিবর্তিত পৃথিবীর জলবায়ুও হারিয়ে ফেলছে নিজস্ব গতিপ্রকৃতি। এতে বাড়ছে আবহাওয়ার অস্বাভাবিক আচরণ। বৈশাখে স্বাভাবিক নিয়মে কালবৈশাখী হওয়ার কথা থাকলেও এ মৌসুম ছিল অতিবর্ষণের দখলে। আগের কয়েক দশকে এতটা বর্ষণ দেখা যায়নি। এবার বর্ষার শুরুতেই বেড়েছে বৃষ্টিপাতের মাত্রা। চলতি জুন মাসের শুরুর দিকে চট্টগ্রাম অঞ্চলে হয়েছে রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টি। সে সময় এক দিনেই রাঙামাটি জেলাতে ২৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। আর ওই ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামেও ২৩১ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।

আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য মতে, এই সময় অধিক বৃষ্টিপাতের প্রধান কারণ বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট দুর্বল নিম্নচাপ এবং সমুদ্র থেকে বাংলাদেশের ভূখণ্ড অভিমুখী আর্দ্র মৌসুমি বায়ু। তবে কয়েক বছর ধরে ওই এলাকায় নিম্নচাপের সংখ্যার অনুপাতে সার্বিক বৃষ্টিপাত অনেকটাই বেড়েছে। তাই প্রতি বছরই তুমুল বৃষ্টিতে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলীয় ও পার্বত্য এলাকা। ফলে ওইসব এলাকায় প্লাবন আর পাহাড়ধসের ঝুঁকি বেড়েছে। আবার স্থলভাগের অতিবৃষ্টি সমতলেও বন্যার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে।

আবহাওয়ার অস্বাভাবিক এই আচরণের উত্তর খুঁজে পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাডিসনের ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিনের বায়ুমণ্ডল বিশেষজ্ঞ এবং দেশটির জাতীয় পরিবেশ তথ্যকেন্দ্রের প্রধান ও অধ্যাপক জিম কোসিন।

তার দাবি, মৌসুমি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ের ধাবমান ক্ষমতা আগের তুলনায় কমেছে। সে কারণে একই জায়গায় আগের তুলনায় বেশি সময় অবস্থান করছে ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র। ফলে সমুদ্র থেকে আসা বিপুল মেঘমালা বেশি সময় ধরে বৃষ্টি হয়ে ঝরছে একই এলাকায়।

ন্যাচার সাময়িকীতে ‘এ গ্লোবাল স্লোডাউন অব ট্রপিকাল সাইক্লোন ট্রান্সলেশন স্পিড’ শিরোনামে জিম কোসিনদের গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দাবি করা হয়েছে, ১৯৪৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর ঘূর্ণিঝড়গুলো পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণের পর গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন যে, আলোচ্য সময়ের মধ্যে ঘূর্ণিঝড়গুলোর এক স্থান থেকে আরেক স্থানে চলন সক্ষমতা আগের তুলনায় ১০ শতাংশের বেশি ধীরগতির হয়ে পড়েছে। আর ধীরগতির এই ঘূর্ণিঝড়ের মেঘে বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প যোগ হয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে। আর এ ঘটনাই বাড়াচ্ছে বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি।

তবে নতুন এই গবেষণা নিবন্ধটির বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় পরিবেশ তথ্যকেন্দ্র জানিয়েছে, সব মহাসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি ঘূর্ণিঝড় আবার একই রকম ধীরগতির হচ্ছে না। উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে গত ৭০ বছরে এক স্থান থেকে আরেক স্থানে ঘূর্ণিঝড়ের ধাবমান গতি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। অস্ট্রেলীয় অঞ্চলে কমেছে প্রায় ১৫ শতাংশ। তবে উত্তর ভারত মহাসাগর অঞ্চলের ঘূর্ণিঝড়ের ধাবমান ক্ষমতা কমেছে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে কম।

ঘূর্ণিঝড়ের এই স্বভাব পরিবর্তন অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বাড়াচ্ছে বন্যার ঝুঁকিও। অধ্যাপক জিম কোসিন বলেন, স্থলভাগের মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের এই ধাবমান ক্ষমতা স্পষ্টভাবেই স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাত বাড়াচ্ছে। বাড়াচ্ছে বন্যার ঝুঁকিও। মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের এ পরিবর্তন মানবসমাজের জন্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তিত এ পরিস্থিতি মানুষের মৃত্যুঝুঁকিও বাড়াচ্ছে।

মৌসুমি ঘূর্ণিঝড়ের ধাবমান ক্ষমতা কমা নিয়ে ন্যাচার সাময়িকী বলছে, এটি কত বেশি শক্তিশালী হবে তা সাধারণত পরিবেশে বিদ্যমান উপাদানের ওপরই নির্ভর করে। তাপমাত্রা, বায়ুপ্রবাহ, বায়ুর আর্দ্রতা এসব বিষয়ের তারতম্যের কারণেই মৌসুমি ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হয়। তবে বায়ুর প্রবাহই মূলত নির্ধারণ করে দেয় ঘূর্ণিঝড়টির ধাবমান ক্ষমতা কেমন হবে। আর গত ৭০ বছরে বায়ুমণ্ডলের কিছু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে ঘূর্ণিঝড়টির ধাবমান ক্ষমতায়।

পরিবেশবিজ্ঞানীরা বলছেন, গত ৭০ বছরে বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েছে প্রায় শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ। তবে এটি প্রমাণ করে না যে, তাপমাত্রা বাড়ার কারণেই ঘূর্ণিঝড়ের ধাবমান ক্ষমতা কমেছে।

তবে জিম কোসিনের ভাষায় এটি নিশ্চিত করে বলা যায় যে, এ কারণে অঞ্চলভেদে বৃষ্টিপাত আগের তুলনায় বেড়েছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

আশা করা হচ্ছে, নতুন এই গবেষণা ভবিষ্যতে পাহাড়ধস ও বন্যার মতো দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কমিয়ে আনতে সহায়তা করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads