ভারী বর্ষণের ফলে গতকাল মঙ্গলবার পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে আকস্মিক বন্যা দেখা দিয়েছে। এতে পাহাড়ধসে বান্দরবানে চারজন নিহত হয়েছে। রাঙামাটিতে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল থেকে অধিবাসীদের সরে যেতে বলেছে প্রশাসন। রাঙামাটির সঙ্গে চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
বান্দরবানে গত সোমবার রাত ১১টা থেকে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। এতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যায় নিচু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে পাহাড়ধসে লামা উপজেলার দুর্গম সরই ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কালাইয়া আগা গ্রামে একই পরিবারের তিনজন নিহত হন। এরা হলেন- মো. হানিফ (৩০), তার স্ত্রী রাজিয়া বেগম (২৫) ও তাদের শিশুকন্যা হালিমা আক্তার (৩)। এ ছাড়া জেলা সদরের কালাঘাটায় মিলন দাশের স্ত্রী প্রতিমা রানী দাশ (৪০) নিহত হন।
লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-এ-জান্নাত জানান, মঙ্গলবার দুপুর ২টার দিকে নিজ বাড়িতে ঘুমন্ত অবস্থায় নিহত হন কৃষক হানিফসহ একই পরিবারের তিনজন। পাহাড়ের মাটি ধসে তাদের ঘরকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়। স্থানীয় ইউপি সদস্য আশরাফ আলী জানান, বেলা ৩টায় স্থানীয়রা মরদেহ উদ্ধার করে। নিহত হানিফের প্রতিবেশী শহিদুল ইসলাম বলেন, হানিফের ঘর থেকে প্রায় ৬০০ ফুট দূরে অবস্থিত পাহাড়টি প্রবল বর্ষণে ধসে পড়ে।
বান্দরবান-রুমা সড়কের দৌলিয়ন পাড়া এলাকায় সড়কের উপর পাহাড় ধসে পড়ায় এ দিন সকাল থেকে জেলা সদরের সঙ্গে রুমা উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। জেলা সদরের পুলপাড়ার কাছে বেইলি সেতুসহ আশপাশের এলাকাসমূহ বানের পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সকাল থেকে বান্দরবানের সঙ্গে রাঙামাটির সরাসরি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বান্দরবান-কেরানিহাট সড়কেও যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। জেলার সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীতে পাহাড়ি ঢলের ফলে পানি বেড়েছে। সদরের হাফেঘোনা, বরিশালপাড়া, আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, কাশেমপাড়া, বনরূপা ও মধ্যমপাড়ার নিচু এলাকাগুলো পানিতে তলিয়ে গেছে।
প্রশাসন এবং পৌর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, শহরের নানা স্থানে ১২টি অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র চালু করা হয়েছে। বন্যাদুর্গত ও পাহাড়ধসের ঝুঁকিতে থাকা পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন এবং পৌর মেয়র মোহাম্মদ ইসলাম বেবী জানিয়েছেন, দুর্যোগকালীন অবস্থা মোকাবেলায় জেলা ও উপজেলা প্রশাসনসহ পৌরসভার পক্ষ থেকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
এদিকে ভারী বর্ষণের ফলে পাহাড়ধসের শঙ্কায় ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের নিরাপদে সরে যেতে শহরজুড়ে মাইকিং করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। রাঙামাটির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক গাজী হোসেন জানান, ২ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। তাই পাহাড়ধসের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাঙামাটির জেলা প্রশাসক এ কে এম মামুনুর রশিদ বলেন, টানা বর্ষণের কারণে আমরা সতর্কতামূলকভাবে মাইকিং করে মানুষকে সচেতন করছি। দুর্যোগ মোকাবেলায় জেলা প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি।
রাঙামাটির পাশাপাশি চট্টগ্রামেরও বিভিন্ন অংশ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। পাহাড়ি ঢলে রাউজানের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা তলিয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।