• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি

নিম্নাঞ্চলের পানি কমলেও দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যাক্রান্ত এলাকার মানুষ

সংগৃহীত ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি

দুই জেলায় নদীভাঙন অব্যাহত

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৭ জুলাই ২০১৮

টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে দেশের কয়েকটি জেলায় সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। গতকাল শুক্রবার সিলেটের বিভিন্ন উপজেলা এবং লালমনিরহাটের বেশিরভাগ নিম্নাঞ্চলের পানি কমেছে। তবে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন বন্যাক্রান্ত এলাকার মানুষ। এদিকে পানি বেড়ে কুড়িগ্রাম জেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। তা ছাড়া লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রামে তিস্তা নদীর ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের খবরের সিলেট ব্যুরো এবং লালমনিরহাট ও কুড়িগ্রাম প্রতিনিধির পাঠানো খবর- 

সিলেট : সিলেট জেলার নিম্নাঞ্চলে চলমান বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে। তবে কমেনি দুর্ভোগ। সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট, কুশিয়ারার পানি শেরপুর-সিলেট; সারি-গোয়াইনের পানিতে সারিঘাট এবং কোম্পানীগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়। তলিয়ে যায় কয়েক হাজার ঘরবাড়িসহ অনেক ফসলি জমি।

গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াতে সরকার ও বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। গতকাল শুক্রবার সিলেট জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে তিনি বলেন, গত সপ্তাহ থেকে টানা বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে উপজেলার সিংহভাগ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। সালুটিকর-গোয়াইনঘাট সড়ক, গোয়াইনঘাট-সারিঘাট সড়কসহ উপজেলা সদরের সঙ্গে সড়কপথে যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে গেছে। সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন ইতোমধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছে। এ সময় সিলেট জেলা পরিষদের সদস্য রফিকুল ইসলাম শাহপরানও বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। তিনি জেলা পরিষদের বরাদ্দ ছাড়াও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বন্যার্তদের সহযোগিতা করেছেন।

দুপুর ২টা থেকে উপজেলার লেঙ্গুড়া ইউনিয়নের সিটিংবাড়ী, সিটিংবাড়ী হাওর, দ্বারীখাই, রুস্তমপুর ইউনিয়নের টুকুইর, যতনাতাও নিজ ধরগ্রামসহ বিভিন্ন গ্রামে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। এ সময় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সমাজসেবী জসিম উদ্দিন, গোয়াইনঘাট প্রেস ক্লাবের এমএ মতিন, সমাজসেবী লুৎফুর রহমান, ফয়জুল হক, জালাল উদ্দিন প্রমুখ।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে এখনো জেলার ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে প্লাবিত রয়েছে। অব্যাহত রয়েছে নদীভাঙন।

তিস্তা ব্যারাজের বন্যা সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও রাতে পানি কমতে থাকে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তিস্তা সেচ প্রকল্প দোয়ানী ব্যারাজ পয়েন্টে পানি বিপদসীমার ১৯ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়।

অস্বাভাবিক পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছিল। উঁচু স্থানগুলো থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী, সিঙ্গিমারী, সিন্দুনা, পাটিকাপাড়া ও ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়ন এবং আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়ন ও সদর উপজেলার রাজপুর, খনিয়াগাছ, কুলাঘাট ও মোগলহাটসহ ১১টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এদিকে গত এক সপ্তাহে জেলায় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এখনো ভাঙন অব্যাহত আছে। গতকাল বিকালে জেলার আদিতমারী উপজেলার তিস্তার চরাঞ্চলের মহিষখোঁচা ইউনিয়ন পরিষদ মাঠে ১০০ পরিবারের মাঝে নগদ ৫০০ টাকা ও ১০ কেজি জিআর চাল এবং পানিবন্দি পরিবারগুলোর মাঝে ১০ কেজি হারে জিআর চাল বিতরণ করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক শফিউল আরিফ জানান, পানিবন্দি ও নদীভাঙনের শিকার পরিবারগুলোর জন্য মোট ৩৫ মেট্রিক টন জিআর চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্রসহ ১৬টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে এসব নদী তীরবর্তী প্রায় ২৫টি ইউনিয়নের কয়েক শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার প্রায় ৫০ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ইতোমধ্যেই নিম্নাঞ্চলসহ বেশ কিছু এলাকায় পানি ওঠায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রে ৩৫ সেন্টিমিটার, ধরলায় ৪৬ ও তিস্তা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে, গত রাত থেকে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় ধরলা নদীর পানি বিপদসীমার ২৮ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সদর উপজেলার হলোখানার সারোডোব এলাকায় মেরামত করা একটি বাঁধ ভেঙে চারটি ইউনিয়নের ১০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি বাঁশের পাইলিংসহ ১০টি পরিবারের ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads