• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
লামায় বন্যা-পাহাড় ধসের আতঙ্ক

ছবি: বাংলাদেশের খবর

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যেতে প্রশাসনের মাইকিং

লামায় বন্যা-পাহাড় ধসের আতঙ্ক

  • লামা (বান্দরবান) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৭ জুলাই ২০১৯

বান্দরবানের লামা উপজেলার  নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত প্রায় অর্ধলক্ষ মানুষের মাঝে বর্ষা মৌসুম এলেই দেখা দেয় বন্যা, পাহাড় ভাঙ্গা ও নদী ভাঙ্গনের আতংক। বর্ষায় কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি হলে নির্ঘুম রাত কাটে নিম্নাঞ্চলের ৫০ হাজার মানুষের।

জানা গেছে, বৃক্ষ নিধন, পাথর ও বালু উত্তোলনের কারণে এ উপজেলার সবকয়টি নদী-খাল-ঝিরি মাটি ভরে হওয়ায় নাব্যতা হারিয়ে গেছে। বৃষ্টি নামলেই দেখা দেয় জলাবদ্ধতা, বন্যা, পাহাড় ধস এবং নদী-খালের দু’পাড় ভাঙ্গন। তখন নদীর তীরবর্তী, নিম্নাঞ্চল ও পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের কারো চোখে ঘুম থাকে না। কখন যেন বন্যার পানি তলিয়ে দেবে বসতঘর, দোকান, অফিস আদালত। এই বুঝি বসতঘরের উপর পাহাড় ধসে পড়ল, নদী গর্ভে চলে গেল দু’পাড়ের অবস্থিত বসতঘর, ফসলি জমি, সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।

এইদিকে দুদিন ধরে লামা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে তাদের ঝুকিঁপূর্ণ এলাকা থেকে সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশ দিলেও বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় হাজার পরিবার ঝুঁকি মাথায় নিয়েই পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করছে।

লামা বাজার পাড়ার বাসিন্দা মো. মাইন উদ্দিন বলেন, নিম্নাঞ্চলে বাড়ি হওয়ায় বর্ষা শুরুতেই পরিবার নিয়ে আমি শঙ্কিত। এ দুর্ভোগ লাঘোবে স্থায়ী সমাধানে সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কার্যকরী পদক্ষেপ কামনা করছি আমরা। উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় চূড়া ও পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হাজার হাজার মানুষ। বর্ষা মৌসুমে কিছু দিন বৃষ্টির পরই শুরু হয় পাহাড় ধস।

এলাকাবাসীদের মতে, প্রাকৃতিকভাবে গড়ে উঠা পাহাড়গুলো থেকে অবৈধভাবে পাথর আহরণ, পাহাড় কেটে বাড়ি-ঘর তৈরি ও বৃক্ষ নিধন করায় বর্ষা মৌসুমে ফাটল ধরা পাহাড়গুলো ধসে পড়ে।

লামা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাপান বড়ুয়া বলেন, বর্ষা শুরু হতেই বাজারের ব্যবসায়ীদের মধ্যে বন্যা আতঙ্ক শুরু হয়। বিগত বছরগুলোতে প্রতিবার ৫/৭ বার করে বন্যায় প্লাবিত হয়েছে লামা বাজার। হঠাৎ বন্যার কারণে ব্যবসায়ীদের কোটি কোটি টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে যায়।

ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রতিবছর বর্ষায় পাহাড়ি ঢলে মাতামুহুরী নদীর দুই কূল উপচে বন্যার সৃষ্টি করে। এসময় পৌর শহরসহ পার্শ্ববর্তী কয়েকটি ইউনিয়নের নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। লামা-আলীকদম সড়কের একাধিক স্থানে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। ফলে দূর্ভোগ পোহাতে হয় শহরের ব্যবসায়ী, সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের। প্রায় সময় বন্যার পানিতে ব্যবসায়িদের লাখ লাখ টাকার মালামাল পানিতে ডুবে নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি উপজেলার হাজার হাজার একর জমির ফসল নষ্ট হয়ে যায়। কখনো কখনো এই বন্যা ৩/৪ দিন স্থায়ী হয়। তখন মানুষের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

প্রায় মরা নদী মাতামুহুরী বর্ষা এলেই রুদ্রমুর্তি ধারণ করে। অস্বাভাবিক স্রোতের টানে নদীর দুই পাড়ের পৌর এলাকা, লামা সদর ইউনিয়ন এবং রুপসীপাড়া ইউনিয়নের ব্যাপক জনবসতি ও ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। অন্যদিকে ফাইতং ও আজিজনগর ইউনিয়নে অতিমাত্রায় পাহাড় ধসের আশংকা দেখা দেয়।

এদিকে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরত লোকজনকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে গত রোববার অভিযান পরিচালনা করেন সহকারি কমিশনার (ভূমি) ইশরাত সিদ্দিকা। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মজনুর রহমান, পৌর কাউন্সিলর মো. রফিক, লামা থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক আয়াত উল্লাহ সহ প্রমুখ।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads