• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
যমুনার ভাঙনে বিলীন দুই শতাধিক বাড়িঘর

সংগৃহীত ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

যমুনার ভাঙনে বিলীন দুই শতাধিক বাড়িঘর

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১১ জুলাই ২০১৯

মানিকগঞ্জের যমুনা নদীতে বাড়তে শুরু করেছে পানি। আর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয়েছে নদী ভাঙনও। এই ভাঙনের মুখে রয়েছে বহু ঘরবাড়িসহ বিস্তীর্ণ ফসলী জমি।

পাহাড়ি ঢলে দুই সপ্তাহ ধরে যমুনা নদীতে পানি বাড়তে শুরু করে। দুই সপ্তাহে যমুনার ভাঙনের শিকার হয়েছে শিবালয় উপজেলার তেওতা ইউনিয়নের অর্ধশতাধিক বাড়িঘর। দৌলতপুর উপজেলার চারটি ইউনিয়নের দুই শতাধিক বাড়িঘর, মসজিদসহ ভেঙে গেছে আবুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

এছাড়াও ভাঙনের মুখে পড়েছে ১৫টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। চারটি ইউনিয়নের আরও কয়েকশ বাড়িঘর। এমন নদী ভাঙনে আতংকিত হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ। ভাঙনের শিকার ক্ষতিগ্রস্ত বহু পরিবার অন্যের জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন।

জিয়নপুরের আবুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে ওই এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা।

জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, ভাঙন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতি বছরই বর্ষায় ভাঙন দেখা দেয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, জরুরি ভিত্তিতে যমুনা নদীর ভাঙন ঠেকাতে চরকাটারি ও বাচামার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। জেলা প্রশাসন থেকে ভাঙন কবলিত কিছু পরিবারকে চাল ও ঢেউটিন বিতরণ করা হয়েছে।

দৌলতপুর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, প্রতি বছরই বর্ষায় নদী ভাঙনে বেশ কিছু বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্থ হয়। এবছর ভাঙন শুরু হওয়ায় এরইমধ্যে আবুডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও যমুনা চরকাটারি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীর পশ্চিম পাড়ে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে।

এতে ওই দুটি বিদ্যালয়ের দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর লেখাপড়া অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আপাতত খোলা আকাশের নিচে তাদের পাঠদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া আরও তেরটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। ভাঙন তীব্র হলে সেগুলোও অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।

দৌলতপুর উপজেলার জিয়নপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বলেন, ভাঙন রোধে স্থায়ীভাবে কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায় প্রতিবছরই বর্ষায় তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। এবছরও ভাঙনের তীব্রতা অনেক।

চরকাটারী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আব্দুল বারেক মণ্ডল জানান, এরই মধ্যে চরকাটারি ইউনিয়নের কাঁঠালতলী গ্রাম নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে ওই গ্রামের শতাধিক পরিবার বাড়িঘরসহ জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থদের ঘর তোলার জন্য সরকারিভাবে নগদ অর্থের প্রয়োজন।

তিনি আরও বলেন, এভাবে ভাঙন অব্যাহত থাকলে পুরো চরকাটারি ইউনিয়নের অস্তিত্ব থাকবে না। তাই ভাঙন প্রতিরোধে স্থায়ীভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি করেন তিনি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাবরিনা শারমিন বলেন, প্রতিদিনই একটু একটু করে কোনো না কোনো এলাকায় ভাঙন হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানদের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা সংগ্রহ করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক ক্ষতিগ্রস্থকে সরকারিভাবে সহায়তা দেয়া হবে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা ঘুরে এসে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক এসএম ফেরদৌস সাংবাদিকদের বলেন, দৌলতপুরের ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন বেশি।

এরই মধ্যে নদী ভাঙনের শিকার দুই শতাধিক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল ও ৭৬টি পরিবারকে ঢেউটিন দেয়া হয়েছে। আরও ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়ে অনুদান চাওয়া হয়েছে।

জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ভাঙন কবলিত ক্ষতিগ্রস্থদের তালিকা করা হচ্ছে। তালিকা অনুযায়ী প্রত্যেক পরিবারকে সহায়তা দেয়া হবে। এছাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডকে ভাঙন রোধে ব্যবস্থাও নিতে বলা হয়েছে।

মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার বলেন, দৌলতপুরের জিয়নপুর ও বাচামারার ১০২ মিটার এলাকায় জরুরি ভিত্তিতে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন ঠেকানোর কাজ করা হয়েছে। আর স্থায়ীভাবে ভাঙন রোধে ব্যবস্থা নিতে প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী অর্থ বছরে কাজ শুরু করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads