• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিপদসীমার উপরে তিস্তার পানি

ছবি: বাংলাদেশের খবর

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি, বিপদসীমার উপরে তিস্তার পানি

  • লালমনিরহাট প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ১১ জুলাই ২০১৯

উজান থেকে ধেয়ে আসছে পানির স্রোত। গত চারদিনের ভারি বৃষ্টি উজানের পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে যুক্ত হয়ে লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি আরো অবনতি হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়ে লালমনিরহাটে প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক ৬২ সেন্টিমিটার। যা স্বাভাবিক ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার। বিপদসীমার দুই সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পানি বেড়ে বিকাল ৩টায়  তিস্তা ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ (রেকর্ড করা হয়)  বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

গত বুধবার (১০ জুলাই) দিবাগত মধ্যরাত থেকে তিস্তার পানি প্রবাহ বৃদ্ধি পেয়ে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়। ভারি বৃষ্টিতে অনেক পরিবার গত মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুর থেকেই পানিবন্দী হয়ে পড়ে। নৌকা বা ভেলা ছাড়া চরাঞ্চলের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এতে বড় সমস্যায় পড়েছে শিশু ও বৃদ্ধরা। চার দিকে অথৈ পানির কারণে গবাদি পশু নিয়ে বিপদে পড়েছেন চরাঞ্চলের খামারি ও চাষিরা।

সৃষ্ট এ বন্যায় জেলার পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম, হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সিন্দুর্না, পাটিকাপাড়া, সিংগিমারী; কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, কাকিনা; আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা; সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ, রাজপুর, গোকুন্ডা, কুলাঘাট ও মোগলহাট ইউনিয়নের তিস্তা ও ধরলার নদীর চরাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় ১০ হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

এদিকে তিস্তায় পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের তালেবমোড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে। বাঁধটি রক্ষায় রাতভর স্থানীয়দের সঙ্গে নিয়ে চেষ্টা চালাছেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মসিউর রহমান মামুন। এছাড়াও জেলার তিস্তার তীরবর্তী বেশ কিছু বাঁধ হুমকির মুখে পড়েছে।

চরাঞ্চলের পানিবন্দী খেটে খাওয়া মানুষগুলো শিশু খাদ্য ও নিরাপদ পানির সমস্যায় পড়েছে। তিনদিন পানিবন্দী থাকলেও সরকারিভাবে কোনো ত্রাণ বা শুকনো খাবার পৌঁছানো হয়নি বলে পানিবন্দী পরিবারগুলোর অভিযোগ।

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে চরাঞ্চলের রাস্তাঘাট, হাট বাজার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। জেলার নদী তীরবর্তী অঞ্চলের বিদ্যালয়গুলো বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

গোবর্দ্ধন চর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কাজি শফিকুল ইসলাম বলেন, বন্যার পানিতে ডুবে গেছে শ্রেণি কক্ষ। তাই তিনদিন ধরে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসছে না। পরিবেশ বিঘœ ঘটায় পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের তিস্তা চরাঞ্চলের  রুবেল মিয়া, আমিনুল ইসলাম ও মমিনুর রহমান বলেন, গত ৩-৪ দিন ধরে বন্যার পানিতে বন্দী থাকলেও সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ তারা পাননি।

হাতীবান্ধা উপজেলার চর সিন্দুর্না গ্রামের আফতাব উদ্দিন ও আবু সালেহ বলেন, দুইদিন ধরে পানিবন্দী থাকার পর গত বুধবার মধ্যরাতে হঠাৎ তিস্তার পানি আরো বাড়তে থাকে। টানা তিনদিন থেকে পানিবন্দী রয়েছেন তারা। তারাও কোনো প্রকার সহায়তা পাননি বলেও অভিযোগ করেন।

সিন্দুর্না ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেন, ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে এ ইউনিয়নের প্রায় দুই হাজার পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। ত্রাণের জন্য পানিবন্দীদের তালিকা পাঠানো হয়েছে।

হাতীবান্ধা উপজেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম বলেন, তার উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন তিস্তা নদীর অববাহিকায়। তিস্তায় পানি বাড়লেই অনেক পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়েন। পানিবন্দীদের তালিকা জেলা অফিসে পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে বিতরণ করা হবে।

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আলী হায়দার বলেন, জেলা ত্রাণ তহবিলে এক হাজার ৯৫০ প্যাকেট শুকনো খাবার, ১৫০ মেট্রিক টন জিআর চাউল ও আড়াই লাখ টাকা মজুদ রয়েছে। উপজেলা থেকে তালিকা পেলে বরাদ্দ দেওয়া হবে।

দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, তিস্তায় পানি বৃদ্ধি অব্যহত রয়েছে। বৃহস্পতিবার তিস্তার পানি প্রবাহ সকাল ৬টায় বিপদসীমার ২ সেন্টিমিটার ও পানি বেড়ে বিকাল ৩টা থেকে বিপদসীমার ২০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যারেজ রক্ষার্থে সবগুলো জলকপাট খুলে দিয়ে পানি প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads