• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
গোদাগাড়ীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ

গোদাগাড়ীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

গোদাগাড়ীর নিম্নাঞ্চল প্লাবিত, পানিবন্দি ২০ হাজার মানুষ

  • প্রকাশিত ০২ অক্টোবর ২০১৯

গোদাগাড়ী (রাজশাহী) প্রতিনিধি:

মরন বাঁধ ফারাক্কার গেট খুলে দেওয়ায় ও সপ্তাহ জুড়ে ভারি বর্ষণে রাজশাহীর গোদাগাড়ী পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি বৃদ্ধিতে উপজেলার চারটি ইউনিয়েনের নিম্নাঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এতে করে প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। গবাদি পশু গরু, ছাগল ও হাস-মুরগী নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে প্লাবিত অঞ্চলের মানুষেরা। ঘর বাড়ী ছেড়ে আশ্রায় নিচ্ছে স্কুল গুলোতে। আবার কোন কোন পরিবার চলে যাচ্ছে এলাকা ছেড়ে। এছাড়াও ৭৬ টি বাড়ী ভাঙ্গনে নদী গর্ভে বিলীন ও স্কুলসহ দুই শতাধিক বাড়ী ঘর ভাঙ্গনের মুখে রয়েছে।

নয়দিনে ১১৬ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে। বলা হচ্ছে, এটিই চলতি মৌসুমে রাজশাহীর সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত।

এদিকে, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হু হু করে বাড়ছে পদ্মা নদীর পানি। বুধবার (২ অক্টোবর) সর্বশেষ রেকর্ড করা তথ্য অনুযায়ী রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমার মাত্র ৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে বিপদসীমা নির্ধারিত রয়েছে ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আজ বুধবার সকালে ছিল ১৮ দশমিক ১৪ মিটার। গত কাল মঙ্গলবার সকালে ছিল ১৮.০৪ মিটার। ২৪ ঘন্টায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে ১০ সেন্টি মিটার। ফলে আগামী দুই তিন দিনের মধ্যে রাজশাহীতে পদ্মা নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তর্থ্য অনুযায়ী, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে পদ্মায় পানি বাড়ছে। গত ২২ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পদ্মা নদীতে পানির উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছিল ১৭ দশমিক ৩৮ মিটার, ২৩ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৫১, ২৪ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৬১, ২৫ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৬৬, ২৬ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৭৫, ২৭ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৭৯, ২৮ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৮৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ছিল ১৭ দশমিক ৮৭ এবং ২৯ সেপ্টেম্বর ছিল ১৮ দশমিক ০১ মিটার, ১ অক্টোবর ১৮.০৪ মিটার ও বুধবার ১৮.১৪ মিটার।

তর্থ্য মতে, ১৯৯৮ সালে রাজশাহীতে পদ্মার পানি বিপদসীমা (১৮.৫০) অতিক্রম করেছিল। এরমধ্যে ২০০৪-২০১২ সাল পর্যন্ত টানা আট বছর পদ্মার পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেনি। ২০০৩ সালে পদ্মার পানি বিপদসীমা (১৮.৫০) অতিক্রম করেছিল। সোমবার হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উপজেলা চরআষারিয়াদহ ইউনিয়নের চর নওশেরা, হুমন্তনগর, নতুনপাড়া, আমতলা খাসমহল, বারি নগর, চর বয়ারমারী, চরবাসুদেবপুর ইউনিয়নের হাতনাবাদ, গোগ্রাম ইউনিয়নের নিমতলা, আলী পুর, দেওপাড়া ইউনিয়নের খরচাকা,মোল্লা পাড়া গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এসব গ্রামে বাড়ী ঘওে বন্যার পানি ঢুকে যাওয়ায় লোকজন জিনিস পত্র নিয়ে বাড়ী ঘর ছাড়ছে। বন্যাত মানুষ উচু জায়গায় স্কুল ও রাস্তার পাশে আশ্রয় নিচ্ছে। চর আষারিয়াদহ ইউনিয়ন পরিষদেও চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সানাউল্লাহ বলেন, বন্যার পানিতে এ ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তবে পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে গোটা ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হবে। বন্যায় সঠিক ক্ষতির পরিমান জানা না গেলেও ৭০ হেক্টর টমেটো, ৬০ হেক্টও মাস কলাই ও ২০ হেক্টর শাক সবজির জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় ফসল নষ্ট হয়েছে। নদী ভাঙ্গনের ৭৬ টি বাড়ী ঘর সম্পর্ন পদ্মায় বিলীন হওয়ায় এসব মানুষ রাস্তার পাশে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিয়েছে। ভাঙ্গনের মুখে দিয়াড় মানিকচক বোয়ালমারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ফ্লাট সেন্টারসহ ৩টি গ্রামের ২০০ বেশি পরিবার বাড়ী ঘর থেকে আসবাব পত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র সরিয়ে নিচ্ছে । এদিকে একটানা বৃষ্টির পানিতে গোদাগাড়ী উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্ন অঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।

গোদাগাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিমুল আকতার বলেন, বন্যাতদের মাঝে শুকনো খাবার বিতরন করা হচ্ছে। বন্যা কবলিত এলাকার লোকজনকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্র যাওয়ার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, বুধবার গত ২৪ ঘন্টায় ১০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। বিপদসীমা অতিক্রম করলেও এখনই আশঙ্কার কিছু নেই। কারণ রাজশাহীতে পদ্মার বিপদসীমা ১৮ দশমিক ৫০ মিটার। আর শহর রক্ষা বাঁধের উচ্চতা ১৯ দশমিক ৬৭ মিটার। তাই পদ্মার পানি বাড়লেও বাঁধ নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads