• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধে ফের ধস

ছবি: বাংলাদেশের খবর

প্রাকৃতিক দুর্যোগ

কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধে ফের ধস

  • কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ০৩ অক্টোবর ২০১৯

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধ প্রকল্পে ফের ধস দেখা দিয়েছে। মাত্র তিন মাস আগে সংষ্কার করা ৩০ মিটার অংশ ফের পদ্মায় ধসে পড়েছে। একবারে হঠাৎ করেই বাঁধ ধসে পানিতে চলে যায়। এতে বাঁধের ওপর কয়েক বাড়ির বাসিন্দারা চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। এই ৩০ মিটার ছাড়াও পাশে ১০০ মিটার বাঁধও গত বছর ভেঙ্গে যায়। সেই সংস্কার করা অংশটিও ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। কুমারখালীর কয়া ইউনিয়নের কালোয়া গ্রামে এ অংশটি পড়েছে। বাঁধে ধস দেখা দেয়ার পর দ্রুত পানি উন্নয়ন বোর্ড সিসি ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙ্গণ প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে। স্থাণীয়রা অভিযোগ করেছে অনিয়মের ফলেই বারবার এমন ঘটনা ঘটছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের কুষ্টিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী পীযুষ কৃষ্ণ কুন্ডু বলেন, এ বছর পদ্মায় পানি বাড়ার অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন পানির লেবেল বাড়ছে। এতে করে সব বাঁধ নিয়ে শঙ্কা রয়েছে। কুঠিবাড়ি রক্ষা বাঁধের যে অংশ ধসে পড়েছে তা সম্প্রতি সংস্কার করা হয়েছিল। গত বছরও এ অংশটি নদীতে চলে যায়। ভাঙ্গন শুরুর পরপরই ৯ হাজার ব্লকসহ জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভাঙ্গন বন্ধ হয়ে গেছে। পানি কমলে বাঁধটির এ অংশ পুনরায় মেরামত করা হবে।

অনিয়মের বিষয়ে বলেন, এসব কাজে অনিয়ম করার কোনো সুযোগ  নেই। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ দল এসব কাজ বুঝে নেয়। পানির চাপ বাড়লে অন্য স্থানেও ক্ষতি হতে পারে। তাই সব প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরজেমিন গিয়ে দেখা গেছে, ২০১৮ সালে বাঁধ নির্মাণের পরে কয়া ইউনিয়নের কালোয়া বাজার থেকে একটু দুরে পদ্মার নদীর একটি অংশে একযোগে নদীতে চলে যায়। তিন মাস আগে টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ করেন স্থাণীয় একজন ঠিকাদার। প্রায় অর্ধ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ মিটার ভাঙ্গন কবলিত অংশ মেরামত করা হয়। তবে সংস্কারের পর তিনমাস টিকলো না মেরামত করা অংশ।

ঐতিহ্যবাহি কুঠিবাড়ি রক্ষায় ১৭৬ কোটি টাকা ব্যয়ে কুষ্টিয়ার কয়া ইউনিয়ন থেকে শুরু করে শিলাইদহ অংশে ৩ হাজার ৭২০ মিটার বাঁধ নির্মাণ করা হয়। কাজ শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যেই কয়ার কালোয়া অংশে ভাঙ্গন শুরু হয়। দুই অংশ থেকে ১৫০ মিটার বাঁধ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সে সময় কাজের অনিয়মের বিষয়টি তুলে ধরে স্থানীয়রা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দোষারোপ করে।

স্থাণীয় বাসিন্দা সামছুল বলেন,‘ সকাল ৯টার আগে এখান পাক শুরু হয়, আর বুদবুদ উঠতে শুরু করে। পরে একযোগে পুরো অংশ নদীতে বসে যায়। গতবছরও একইভাবে বাঁধ ধসে পড়ে। সংস্কারের পর সবাই ভেবেছিল আর ধসে পড়বে না। তবে অনিয়ম আর যথাযথভাবে কাজ না হওয়াকে দায়ী করেন এলাকার মানুষ।

বাঁধের যে অংশ ধসে পড়েছে, তার ওপর একটি বসতভিটা রয়েছে।

বাড়ির বাসিন্দারা জানান, এইবার দিয়ে তিনবার ভাঙ্গলো। সকালে ভাঙ্গন শুরু হওয়ার পর সবার মধ্যে আতঙ্ক। কান্নাকাটি চলছে। বাড়ি নদীতে চলে গেলে কি হবে সেই কথা ভাবছি। ইতিমধ্যে একটি ঘরের বেশ কিছুটা নদীতে চলে গেছে।

ভাঙ্গনের পর ধসে পড়া অংশে জরুরী ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ও সিসি ব্লক ফেলে ভাঙ্গন প্রতিরোধ করার চেষ্টা চলছে। সিসি ব্লক ফেলার পর নতুন করে আর ভাঙ্গন দেখা দেয়নি।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পরিদর্শন করেছেন। ভাঙ্গন দেখতে এলাকার মানুষ ভীড় করেন। শুধু এই ৩০ মিটার নয় পাশে আরো ১০০ মিটার বাঁধ গত বছর ধসে পড়ে। সেই অংশ সংস্কার করেন একই ঠিকাদার। ওই অংশটিও যে কোন মুহূর্তে নদীতে বিলীন হয়ে যেতে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

জেলা প্রশাসক আসলাম হোসেন বলেন,‘ বিষয়টি শোনার পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেছি। নতুন করে আর কোন স্পট যেন ক্ষতিগ্রস্থ না যে ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

কুষ্টিয়া-৪ আসনের সাংসদ সেলিম আলতাফ জর্জ বলেন, স্থানীয়দের অভিযোগ বাঁধ নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। পানি উন্নয়ন  বোর্ড ও ঠিকাদারের যোগসাজসে অনিয়মে হয়েছে বলে সবাই অভিযোগ করছে। বিষয়টি ক্ষতি দেখে তদন্ত করে শক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে। বারবার কেন এরকম হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত শিলাইদহ কুঠিবাড়ির অদূরে পদ্মা নদীতে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। এতে শঙ্কায় দিন গুনছিল স্থানীয় সচেতন মহলসহ এলাকার মানুষ। পরে পানি উন্নয়ন বোর্ড নদী তীর সংরক্ষণে প্রকল্প গ্রহণ করে। ২০১৬ সালে  সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুঠিবাড়ি ও আশেপাশের জনপদ রক্ষায় ১৭৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়। শিলাইদহ এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীর এলাকায় প্রায় ৩ হাজার ৭২০ মিটার দীর্ঘ এ বাঁধ নির্মাণে ২০১৬ সালের ১৩ আগষ্ট বাংলাদেশ ডিজেরূপ্লান্ট (বিডিপি) লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পায়। তবে মূল ঠিকাদারের সহযোগি প্রতিষ্ঠান ওয়েষ্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং প্রাইভেট লিমিটেড মূলত এ কাজ বাস্তবায়ন করে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads