• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

পর্যবেক্ষণ

বিদায় ২০১৭

দ্রব্যমূল্যে ম্লান অর্জন 

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭

ইংরেজি বছর ২০১৭ সালের শেষ দিন আজ। বিদায় নিচ্ছে ঘটনাবহুল আরো একটি বছর। ঘড়ির কাঁটা রাত ১২টা পেরুলেই যাত্রা শুরু করবে নতুন আরেকটি বছর। অজস্র স্বপ্ন আর সম্ভাবনার পথে পা রাখবে বাংলাদেশ। 

সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র হওয়ার পথে দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলছে এই দেশ। বিদায়ী বছরে এদেশে এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে, যার প্রভাব সুদূরপ্রসারী। 

বিদায়ী বছরজুড়ে বেশি আলোচিত ছিল গুমের ঘটনা। বছর  শুরুর মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে ক্ষমতাসীন দলের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন নিজ বাসায় খুন হন। এর পর বছরজুড়েই অনেক রাজনীতিবিদসহ অসংখ্য গুণিজনকে হারিয়েছে দেশ। জঙ্গিবিরোধী অভিযানে সাফল্যের কারণে প্রশংসিত হওয়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিন্দা কুড়িয়েছে দেশজুড়ে নারী ও সংখ্যালঘু নির্যাতন বাড়ায়। অতিবৃষ্টি ও বন্যার কারণে এ বছর বিপদে ছিল উত্তর ও হাওরাঞ্চলের মানুষ। বেসরকারি হিসাবে চালের দাম বাড়ায় দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে গেছে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ। বন্যার কারণে গত এপ্রিল থেকে দফায় দফায় চাল ও সবজির দাম বৃদ্ধি এবং বছরের শেষভাগে এসে হুট করে পেঁয়াজের মূল্য বাড়ায় মানুষের কেনার সামর্থ্য কমেছে। তবে সরকারি মতে, বেড়েছে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। অর্থাৎ মাথাপিছু আয়, ক্রয়ক্ষমতা এবং আয়ুও। তবে বিদায়ী বছরে দেশের ব্যাংক খাতের বিশৃঙ্খলা ছিল তুমুল সমালোচনায়। ৪৮টি ব্যাংকের মধ্যে ১৩টির আর্থিক অবস্থা বেশ শোচনীয় হয়ে পড়েছে। এ বছর বড় ধরনের ঊর্ধ্বগতির মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন।  বিদায়ী বছরে ইতিবাচকভাবে আলোচনায় ছিল নতুন নির্বাচন কমিশনের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড। রাজনীতির অঙ্গনও ছিল সরব। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ব্যস্ত ছিল তৃণমূল পর্যায়ে ঘর গোছানোয়। এ সময়জুড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টায় সক্রিয় ছিল দেশের আরেক প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি। দীর্ঘদিন পর চাঙ্গা হওয়া প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টিসহ অধিকাংশ বাম ও ইসলামী দলগুলোও সক্রিয় ছিল রাজপথে। এ সময়ে সফলভাবে ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) ও কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সম্মেলন আয়োজন করে প্রশংসা কুঁড়িয়েছে সংসদ সচিবালয়। এ বছরই দেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চে দেওয়া ঐতিহাসিক ভাষণটিকে বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি-বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো।   নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলার রায় দিয়ে এই বছর শুরু করা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রশ্নে বারো মাসই মুখোমুখি অবস্থানে ছিল আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ। বছরের অন্যতম আলোচিত ঘটনা ছিল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার পদত্যাগ। এর পরও এ বছর বহু আলোচিত রায় এসেছে।  তবে সব ছাপিয়ে বছরের প্রধান আলোচ্য বিষয় ছিল ‘রোহিঙ্গা সঙ্কট ইস্যু’। এটি শুধু বাংলাদেশ নয়, সমগ্র বিশ্বের অন্যতম প্রধান মানবিক সঙ্কট হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। জাতিসংঘের প্রতিটি দেশই বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন।  পুরনোকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নেওয়াই মানুষের সহজাত ধর্ম। আবহমান কাল ধরে মানুষ পুরনোকে শুকনো ঝরা পাতার মতো ত্যাগ করে নতুন কুঁড়ির উদগমন হƒদয়ঙ্গম করে। যার ধারাবাহিকতায় কাল বিশ্বজুড়ে নতুন বছর ২০১৮ সালকে বরণ করে নেওয়া হবে। এরই প্রাক্কালে আজ আমরা গত বছরের আলোচিত কিছু ঘটনা ফিরে দেখার চেষ্টা করছি।  রোহিঙ্গা সঙ্কট : মিয়ানমার সরকারের গণহত্যার শিকার লাখ লাখ বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া এ বছরে দেশের সবচেয়ে বড় ঘটনা। প্রথমে সরকার তাদের বাংলাদেশে প্রবেশে বাধা দিলেও পরে সীমান্ত খুলে দেওয়া হয়।  গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কয়েক লাখ রোহিঙ্গার ভরণপোষণ করে আসছে বাংলাদেশ। বছর শেষে সব মিলে এই সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়িয়ে যাবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন ও গণহত্যা বিশ্ববিবেককেও নাড়া দেয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাদের আশ্রয় দেওয়ার জন্য মাদার অব হিউমিনিটি উপাধিতে ভূষিত হন।  রোহিঙ্গাদের সংবাদ সংগ্রহে দেশ-বিদেশের বিবিসি, আল জাজিরাসহ বিভিন্ন নিউজ এজেন্সির নামকরা সাংবাদিকদের পদচারণা ও তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। বিশেষ করে টেকনাফে শাহপরীর দ্বীপ, শামলাপুর, উলুবুনিয়া, নাইট্যংপাড়া, জাদিমুরা, উখিয়ার কান্জরপাড়া সীমান্ত পয়েন্টে দিনরাত ছিল সাংবাদিকদের সরব উপস্থিতি।  সীমান্ত পাড়ি দিতে গিয়ে অনেক রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও শিশুর সাগর এবং নদীতে সলিল সমাধি হয়েছে। নৌকায় অতিরিক্ত রোহিঙ্গা বোঝাই ও ঝড়ো হাওয়ার কবলে পড়ে ডুবে গিয়ে এ বছর দুই শতাধিক রোহিঙ্গার মৃত্যু হয়েছে। আবার এসব রোহিঙ্গার খোঁজখবর, নির্যাতনের কাহিনি ও তাদের দেখতে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, দূত ও সমমর্যাদার নেতারা উখিয়া-টেকনাফে বারবার সফর করেছেন। বিশ্বজুড়ে আলোচিত হয়ে উঠেছে উখিয়া-টেকনাফ সীমান্ত জনপদ। প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ : দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর নিু আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির গেজেট প্রকাশ, সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য অপসারণ এবং বিভিন্ন রায় নিয়ে সারা বছরই আলোচনায় ছিল সুপ্রিম কোর্ট অঙ্গনসহ পুরো বিচার বিভাগ। অবসরের পর রায় লেখা, বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধি প্রণয়ন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের আল্টিমেটাম, পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতারের নীতিমালা তৈরি, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স বাতিল এবং বিভিন্ন মামলায় বিনাবিচারে আটকদের মুক্তির ঘটনাও বেশ আলোচিত হয়েছে। তবে সবচেয়ে আলোচিত ছিল সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের ঘটনা।  সরকারের উচ্চ মহল থেকে শুরু করে শহর, নগর, বন্দর পেরিয়ে মহল্লার চায়ের দোকান পর্যন্ত এ নিয়ে আলোচনা হয়। অবশেষে নভেম্বরে বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিন্হার পত্যাগের পর এ বিষয়ক উত্তাপ প্রশমিত হয়।  বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর সদর দফতরে বিদ্রোহে হত্যার দায়ে ১৩৯ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। বিচারিক আদালত ১৫২ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিল। যে ১৩ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়নি, তাদের মধ্যে চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে আটজনকে। একজন আগেই মারা গেছেন। অন্যদিকে নিু আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া ১৬০ জনের মধ্যে ১৪৬ জনের সাজা বহাল রাখা হয়েছে। তবে নিু আদালতে খালাস পাওয়া ৩১ জওয়ানকে নতুন করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। এখন মোট যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮৫ জনে। এছাড়া বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ডপ্রাপ্ত ২০০ জনের সাজা বহাল রয়েছে।  এর আগে গত জানুয়ারিতে নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সাত খুন মামলায় সিটি করপোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট। ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি ১১ জনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন এবং ২০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে আরও দুই বছরের কারাদণ্ড ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। এর আগে এই মামলায় ২৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালত।  এদিকে এই বছর হত্যা, হত্যাচেষ্টা ও ধর্ষণের অভিযোগে ঢাকার নিু আদালতে ৩২ জনের মৃত্যুদণ্ডে ও ৪১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। আলোচিত ১৭ মামলায় বিভিন্ন বিচারিক আদালত এ রায় ঘোষণা করেন। ৯ মামলায় ৩২ জনের মৃত্যুদণ্ড ও ৮ মামলায় ৪১ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল সাংবাদিক আফতাব হত্যা, ময়মনসিংহের হারুন হত্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলা ও শিশু আদুরি নির্যাতন মামলার রায়। এছাড়া এ বছরে শুরু হয়েছে আলোচিত বিভিন্ন মামলার বিচার।  আলোচিত নারী নির্যাতন : বছর জুড়ে আলোচনায় ছিল বিভিন্ন এলাকায় নারীদের ওপর চলা পাশবিক অত্যাচারের ঘটনা। ঢাকার বনানীতে গত ২৮ মার্চ একটি হোটেলে আয়োজিত জš§দিনের পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়ে ধর্ষণ করা হয় দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীকে। এই ধর্ষণের অভিযোগে আপন জুয়েলার্সের এক মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদ, তার দুই বন্ধুসহ মোট পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন দুই তরুণী। বর্তমানে এ ঘটনার বিচার চলছে। এর আগে গত ২৯ এপ্রিল গাজীপুরের শ্রীপুরে ধর্ষণের শিকার হওয়া শিশু মেয়েসহ চলন্ত ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে আÍহত্যা করেন এক বাবা। এ ঘটনায় ৩০ এপ্রিল ঢাকার কমলাপুর জিআরপি থানায় সাতজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেন নিহত হযরত আলীর স্ত্রী হালিমা বেগম। পরে ২৭ মে মামলার প্রধান আসামি মো. ফারুককে (৩০) গ্রেফতার করে র‌্যাব। এর আগে গ্রেফতার করা হয় আরো ২ জনকে।  এদিকে গত ২৫ আগস্ট বগুড়া থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে চলন্ত বাসে ছোঁয়া পরিবহনের শ্রমিকরা আইন বিভাগের মেধাবী ছাত্রী রূপা খাতুনকে ধর্ষণ করে। পরে তারা রূপার ঘাড় মটকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় ফেলে রেখে যায়। মধুপুর থানার পুলিশ ওই রাতেই তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের পর বেওয়ারিশ হিসেবে টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে দাফন করে।  এরপর ২৮ আগস্ট মধুপুর থানায় গিয়ে লাশের ছবি দেখে রূপাকে শনাক্ত করেন তার ভাই হাফিজুর রহমান। পরে পুলিশ ছোঁয়া পরিবহনের চালক হাবিবুর (৪৫), বাসের তত্ত্বাবধায়ক সফর আলী (৫৫) এবং বাসচালকের সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) গ্রেফতার করে। পুলিশের কাছে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা রূপাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।  সক্রিয় নির্বাচন কমিশন : ২০১৭ সাল ছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের বছর। তুমুল আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে সাবেক সচিব খান মোহাম্মদ নূরুল হুদাকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) করে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেন রাষ্ট্রপতি। ২০১৮ সালে ক্ষমতার পালাবদলের নির্বাচন হবে এই ইসির মাধ্যমেই। এ জন্য কমিশন গঠন নিয়ে সবার আগ্রহ ছিল। দায়িত্ব পাওয়ার পরই সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আইনি বিষয় পর্যালোচনা ও সংস্কার, সংসদীয় এলাকার নির্বাচনী সীমানা পুনর্নির্ধারণ, ভোটার তালিকা তৈরি, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন এবং নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের নিরীক্ষা এবং সুষ্ঠু নির্বাচনে সংশ্লিষ্ট সবার সক্ষমতা বৃদ্ধির কার্যক্রম গ্রহণসহ সাতটি করণীয় বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে চলতি বছরের ১৬ জুলাই রোডম্যাপ ঘোষণা করে বর্তমান কমিশন। সেই রোডম্যাপ অনুযায়ী কাজ করছে ইসি। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সংলাপ শুরু করে ইসি। এরপর প্রায় তিন মাস পর্যন্ত গণমাধ্যম, রাজনৈতিক দল, নির্বাচন পর্যবেক্ষক, নারী নেত্রী ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে সংলাপ করে কমিশন। ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপ শেষ করে নিজেদের সফল বলেও ঘোষণা দেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। জঙ্গি দমনে সফলতা : ২০১৬ সালের পর ২০১৭ সালেও সারা দেশে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান ও সফলতার ধারা বজায় রেখেছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অভিযানগুলো হলো সীতাকুণ্ডে ‘অপারেশন অ্যাসল্ট ১৬’, আশকোনায় র‌্যাব ক্যাম্পে আÍঘাতী হামলা, খিলগাঁওয়ে র‌্যাবের চেকপোস্টে হামলা, বিমানবন্দর গোলচত্বরে আÍঘাতী হামলা, সিলেটের আতিয়া মহলে সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন টোয়াইলাইট’, মৌলভীবাজারে ‘অপারেশন হিটব্যাক’, কুমিল্লায় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’, অপারেশন ‘সাউথ প’ (দক্ষিণে থাবা), ঝিনাইদহের মহেশপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান, ঝিনাইদহের চুয়াডাঙ্গা গ্রামে দুটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান, জাতীয় শোকদিবসে হামলার পরিকল্পনা নস্যাৎ।  পুঁজিবাজারে সাফল্য : ২০১০ সালের পর বড় ধরনের উল্লম্ফনের মধ্য দিয়ে লেনদেন শেষ করেছে দেশের পুঁজিবাজার। আগের বছরের তুলনায় ২০১৭ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন বেড়েছে ৮২ শতাংশের বেশি। শুধু দেশীয় বিনিয়োগ নয়, বিদেশিদের লেনদেনও বড় অংকের প্রবৃদ্ধি এসেছে। এ সময় ডিএসইর গড় লেনদেন  ৪৯৪ কোটি ৪৩ লাখ টাকা থেকে ৮৭৪ কোটি টাকায় উন্নীত হয়। ২০১০ সালের পর এটিই ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন। অধিকাংশ শেয়ারের দর বাড়ায় বাজার মূলধন ও সূচকে রেকর্ড তৈরি হয়েছে। ডিএসইর বাজার মূলধন আগের বছরের চেয়ে ২৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ লাখ ২২ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত হয়েছে। আর ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ২৪ শতাংশ বেড়ে ৬২৪৪ পয়েন্টে উন্নীত হয়েছে। সবক্ষেত্রে বড় ধরনের সাফল্য থাকলেও নতুন শেয়ার জোগানে পিছিয়ে পড়ে পুঁজিবাজার। পণ্যবাজার পরিস্থিতি : গত বছর দুই দফা বন্যায় দেশে ফসলের উৎপাদনে বড় ধরনের ক্ষতি হয়। যার প্রভাব পড়ে পণ্যবাজারে। এতে এপ্রিল থেকে বাড়তে থাকে চালের দাম। এরই কিছুদিন পর ঊর্ধ্বমূল্যের তালিকায় যুক্ত হয় সবজি। আর বছরের শেষভাগে এসে বড় ধরনের তেলেসমাতি দেখায় পেঁয়াজ। বিদায়ী বছরে এই তিন পণ্যই রেকর্ড দামে উঠেছিল। শুধু চালের মূল্যবৃদ্ধির কারণেই গত কয়েক মাসে পাঁচ লাখ ২০ হাজার মানুষ নতুন করে গরিব হয়েছে বলে উঠে আসে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকনোমিক মডেলিং (সানেম)-এর এক গবেষণায়। এছাড়া প্রধান খাদ্যশস্যের দাম বাড়ায় বেড়ে যায় অন্যান্য পণ্যের দামও।  ব্যাংক খাতে অস্থিরতা : এ বছরজুড়ে ছিল বিভিন্ন ব্যাংকের ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বদলের আলোচনা। বিভিন্ন কারণে বিভিন্ন ব্যাংকের পর্ষদ বদল করা হয়। বছরের শুরুতেই অর্থাৎ জানুয়ারি মাসে বেসরকারি খাতের অন্যতম ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদে বড় ধরনের পরিবর্তন আনা হয়। ৩০ অক্টোবর ইসলামী ব্যাংকের কায়দায় পরিচালনা ও ব্যবস্থাপনায় বড় পরিবর্তন আনা হয় বেসরকারি খাতের সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকে (এসআইবিএল)। সর্বশেষ চলতি ডিসেম্বরেই পরিবর্তন করা হয় আরব বাংলাদেশ (এবি) ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ। এই সময়ে আর্থিক অবস্থার অবনতি হওয়া ১৩টি ব্যাংকের মধ্যে রাষ্ট্রমালিকানাধীন ও বিশেষায়িত ব্যাংক আটটি। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল, ফারমার্স ও এনআরবি কমার্শিয়ালের পরিস্থিতি সবচেয়ে খারাপ। এছাড়া বেসরকারি খাতের একাধিক ব্যাংকের মালিকানা বদল নিয়েও নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে। সার্বিক পরিস্থিতিতে আমানতকারীদের মধ্যে বড় ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাষ্ট্রমালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণও আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ফলশ্র“তিতে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ বরাদ্দ দিয়ে সেগুলো চালু রাখতে হচ্ছে।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads