• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
মৃত্যুহারে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

বায়ু দূষণের বিরূপ ফলাফল

প্রতীকী ছবি

পর্যবেক্ষণ

পরিবেশদূষণ নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন

মৃত্যুহারে দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮

পরিবেশদূষণের কারণে দেশে প্রতিবছর প্রায় ৮০ হাজার লোক মারা যাচ্ছে, যা দেশের বার্ষিক মোট মৃত্যুর ২৮ শতাংশ। এই হার দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি। এ ছাড়া পরিবেশদূষণের কারণে প্রতিবছর দেশের নগরাঞ্চলে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা (৬৫২ কোটি মার্কিন ডলার)। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে পরিবেশদূষণ সংক্রান্ত এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্বব্যাংক। ‘ইনহ্যান্সিং অপারচুনিটিজ ফর ক্লিন অ্যান্ড রেসিলেন্ট গ্রোথ ইন আরবান বাংলাদেশ, কান্ট্রি এনভায়রনমেন্ট অ্যানালাইসিস-২০১৮’ শীর্ষক এই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিবেশ দূষণ সংক্রান্ত অসুস্থতায় বাংলাদেশে প্রতিবছর মৃত্যু হচ্ছে ৮০ হাজার মানুষের যা মোট মৃত্যুর ২৮ শতাংশ। বিশ্বে এ ধরনের মৃত্যুর হার ১৬ শতাংশ। শহরাঞ্চলের ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষের মৃত্যু ঘটছে পরিবেশদূষণ সংক্রান্ত অসুস্থতায়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পরিবেশ দূষণজনিত কারণে ভারতে ২৬ দশমিক ৫, পাকিস্তানে ২২ দশমিক ২, আফগানিস্তানে ২০ দশমিক ৬, শ্রীলঙ্কায় ১৩ দশমিক ৭ ও  মালদ্বীপে ১১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ মারা যায়।

বাংলাদেশে শুধু বায়ু দূষণের কারণেই মৃত্যু ঘটছে ৪৬ হাজারেরও বেশি সংখ্যক মানুষের। রাজধানীতে পরিবেশ দূষণে প্রতিবছর মারা যাচ্ছে ১৭ হাজার ৮৯৭ জন, যার মধ্যে বায়ু দূষণের কারণে মৃত্যু ঘটছে ১০ হাজার ১৯৪ জনের। বায়ু দূষণ ছাড়া শহরাঞ্চলে কর্মক্ষেত্রে দূষণের কারণে বেশি সংখ্যক মানুষের মৃত্যু ঘটছে। এই সংখ্যা দেশের শহরগুলোয় মোট ১৯ হাজার ৮৭ জন, আর রাজধানীতে ৪ হাজার ২০৪ জন। তৃতীয় কারণ হিসেবে রয়েছে, খাবার পানিতে আর্সেনিক দূষণ। এ কারণে প্রতিবছর শহরাঞ্চলে ১০ হাজার ২৮ জন, আর রাজধানীতে ২ হাজার ২০৯ জনের মৃত্যু হচ্ছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, বাতাসে সিসা দূষণের কারণে দেশের ১০ লাখ মানুষ ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। এর ফলে শিশু মেধা বিকাশ বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের স্নায়বিক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।

এ ছাড়া প্রতিবছর পরিবেশ দূষণের কারণে দেশের নগরাঞ্চলে মোট ক্ষতি হচ্ছে ৬ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ডলার বা ৫২ হাজার কোটি টাকা, যা ২০১৫ সালের মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশের সমান। শুধু বায়ু দূষণের কারণেই ক্ষতি হচ্ছে ২৯ হাজার ৫২০ কোটি টাকা। রাজধানীতে পরিবেশ দূষণের কারণে ক্ষতি হচ্ছে ১১ হাজার ৫২০ কেটি কোটি টাকা। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, অপরিকল্পিত নগরায়নের কারণে গত ৪০ বছরে রাজধানীর ৭৫ শতাংশ জলাভূমি ভরাট হয়ে আবাসন প্রকল্প হিসেবে গড়ে উঠেছে। যার ফলে রাজধানীর কিছু অংশ বন্যার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।

অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর রাজশ্রী পারালকার বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণে শহরগুলো অত্যন্ত ঝুঁকিতে রয়েছে। দূষণ রোধে সঠিক নীতিমালা প্রণয়নের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানোর তাগিদ দেন তিনি।

অনুষ্ঠানে বন ও পরিবেশমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘আমরা পরিবেশ দূষণ নিয়ে সচেতন। এ বিষয়ে সরকার ডেল্টা প্লান হাতে নিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদফতরের লাইসেন্স না নিয়েই অনেকে ইটভাঁটা তৈরি করছে। বায়ু দূষণের ৫৮ শতাংশই ঘটছে ইটভাঁটার মাধ্যমে। আমরা একটি পরিবেশ আইন করতে যাচ্ছি। আইন বাস্তবায়ন হলে ইটভাঁটা এভাবে আর গড়ে উঠতে পারবে না। তবে আইনের বাইরেও জনসাধারণকে এ বিষয়ে সচেতন হতে হবে।’ অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংক ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads