• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব

লোগো ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)

পর্যবেক্ষণ

টিআইবির মত

দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

দেশে রাজনৈতিক দলের মধ্যে পারস্পরিক আস্থাহীনতার কারণে দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হচ্ছে না। দলগুলোর মধ্যে আস্থা থাকলে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে মত প্রকাশ করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। একাদশ জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকারব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা চলার মুহূর্তে গতকাল সোমবার এ মতামত ব্যক্ত করল সংস্থাটি।

টিআইবির ধানমন্ডির কার্যালয়ে ‘রাজনৈতিক দলগুলোর নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন ও শুদ্ধাচার’ বিষয়ক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। অনুষ্ঠানে সংবাদিকদের সামনে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘রাজনৈতিক দল ও অন্যান্য স্টেকহোল্ডার (অংশীজন) যারা আছেন, তারা যদি সহায়ক ভূমিকা পালন করেন, তাহলে দলীয় সরকারের অধীনেও সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। কিন্তু আমরা দেখতে পাই, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে একদিকে ক্ষমতাসীন দল প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে, অন্যদিকে হেরে যাওয়া দল নির্বাচন ও ফলাফল বয়কট করে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থার অভাব রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ক্ষমতাকে একচ্ছত্রভাবে কেন্দ্রীয়করণের প্রবণতা বিদ্যমান। ফলে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমছে।’

এ সময় বিগত জাতীয় নির্বাচনগুলোতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী ইশতেহার পর্যালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের আগে ইশতেহার প্রকাশে যতটা আগ্রহী থাকে, নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তা বাস্তবায়নে ততটা থাকে না। তাই সরকার গঠনকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে পূর্ববর্তী নির্বাচনে দেওয়া অঙ্গীকার কতটুকু পূরণ করছে, সে সম্পর্কে প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনগুলোয় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দেওয়া নির্বাচনী ইশতেহারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকারের গুরুত্বপূর্ণ কিছু পূরণ হলেও কার্যকর সংসদ প্রতিষ্ঠা, ন্যায়পাল নিয়োগ, ‘কালো আইন’ বাতিল, জনপ্রতিনিধিদের সম্পদের তথ্য প্রকাশ এবং রাষ্ট্রায়ত্ত বেতার ও টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার মতো অঙ্গীকার কখনোই পূরণ হয়নি। এ ছাড়া সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বেশিরভাগ দলের অনেক অঙ্গীকার থাকলেও সেগুলো বাস্তবায়নে নির্দিষ্ট পরিকল্পনার ঘাটতি রয়েছে। একই সঙ্গে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার পরিপন্থী বাকস্বাধীনতা ও মানবাধিকার ক্ষুণ্ন করার মতো বিতর্কিত বা নিয়ন্ত্রণমূলক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আরো বলা হয়, বেশিরভাগ দলের বিশেষ কয়েকটি অঙ্গীকার বার বার পুনরাবৃত্তি হয়।

অনুষ্ঠানে টিআইবির পক্ষ থেকে রাজনৈতিক দলের বিবেচনার জন্য কিছু সুপারিশ উত্থাপন করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, সরকার গঠনকারী প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন-পূর্ব দেওয়া অঙ্গীকার কতটুকু পূরণ করেছে তা প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা। বিরোধী দল হিসেবে গণতন্ত্র ও সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কী ভূমিকা থাকবে তা ইশতেহারে স্পষ্ট করা; প্রতিটি রাজনৈতিক দলকে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশলপত্র অনুসরণ করে কর্মপরিকল্পনা করে তা বাস্তবায়ন এবং প্রতিবছর তা পর্যালোচনা করা। এ ছাড়া বিরোধী দলকে সংসদীয় কার্যক্রমে আরো বেশি অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া এবং সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে প্রয়োজনীয় সংশোধনের মাধ্যমে সংসদ সদস্যদের স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের সুযোগ সৃষ্টি; দুর্নীতি দমন কমিশনসহ সব সাংবিধানিক ও সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান, কমিশনার ও সদস্যসহ সব নিয়োগ এবং নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বজনপ্রীতি, গোষ্ঠীস্বার্থ এবং দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা পরিহার করা ও প্রয়োজনে সংস্কারের সুপারিশ করা হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। কার্যপত্রটি উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাহজাদা এম আকরাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads