• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ক্ষীণদৃষ্টি নগরশিশু

ক্ষীণদৃষ্টি নগরশিশু

সংগৃহীত ছবি

পর্যবেক্ষণ

ক্ষীণদৃষ্টি নগরশিশু

  • বিশেষ প্রতিনিধি, চট্টগ্রাম
  • প্রকাশিত ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শিশু বিকাশের উপযুক্ত খেলার মাঠ ও দুরন্তপনার অবাধ সুযোগ না থাকায় দেশের বিভিন্ন জনবহুল নগরীতে বেড়ে উঠছে ক্ষীণদৃষ্টির শিশু। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য নগরীতে ক্ষীণদৃষ্টির এই শিশুদের সংখ্যা অনাকাঙ্ক্ষিত হারে বড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন প্রজন্মের এক বিশাল অংশ প্রতিদিন বেড়ে উঠছে ক্ষীণদৃষ্টি নিয়ে। যাদের ভবিষ্যৎ মোকাবেলা করতে হবে দুঃসহ চ্যালেঞ্জ নিয়ে।

শিশুদের চোখে কম দেখা রোগ পূর্বেকার যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা। শিশুরাই কেন চোখের সমস্যায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন এটাই এখন আলোচনার বিষয়।

অনুসন্ধানে কয়েকজন চিকিৎসক জানিয়েছেন এই সমস্যার মূল কারণ। কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো স্মার্টফোনে, ইউটিউবে বিভিন্ন ভিডিও দেখা এবং গেম খেলা। দীর্ঘ সময় ধরে টেলিভিশন দেখাও অন্যতম কারণ।

তবে চোখের এই সমস্যা গ্রামের শিশুদের চেয়ে শহরের শিশুদেরই বেশি বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে, শহরে শিশুদের খেলাধুলার মাঠ না থাকায় তারা ঘরের চার দেয়ালেই আবদ্ধ থাকছে। এ ছাড়া ঘরের বাইরে নিরাপত্তার অভাবে এদিক-সেদিক যাওয়ার সুযোগ না থাকায় বাবা-মায়েরাই তাদের শিশুদের টেলিভিশন দেখা অথবা ভিডিও গেম খেলতে উদ্বুদ্ধ করে নিরাপদে গৃহে রাখছেন। যার ফলে অতিরিক্ত সময় স্ক্রিনে চোখ রাখায় শহুরে শিশুদের চোখের সমস্যা বেড়েই চলেছে।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চক্ষু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. আনিসুর রহমান আনজুম এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘মাইয়োপিয়া বা চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা শহর ও নগরে বাড়ছে। এতে শিশুদের ও অভিভাবকের করার কিছু নেই। শহুরে শিশুদের খেলার জায়গা বা মাঠ নেই। তাদের সময় কাটাতে হয় ট্যাব, মুঠোফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপে গেমস খেলে ও টিভি দেখে। তারা এগুলোর স্ক্রিনে আসক্ত হয়ে পড়ছে। তারা রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে। খেলার মাঠ না থাকায় শিশুদের ক্ষীণ দৃষ্টির একটা বড় কারণ।’

তিনি আরো বলেন, ‘ঘরের চার দেয়ালে বন্দি শিশুদের দূরের জিনিস দেখার শক্তি বাড়ছে না। এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যাও আছে। মাঠে খেললে ও খোলামেলা জায়গায় সময় কাটালে শিশুরা দূরের আকাশ দেখে। এতে তাদের দূরের জিনিস দেখার শক্তি বাড়ে। শিশুদের রোদে ও মাঠে খেলতে দিতে হবে। আর সরকারকেই ব্যবস্থা করতে হবে খেলার মাঠের।’

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কনসালট্যান্ট ডা. খায়ের আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, প্রতিদিন গড়ে আমরা ২৫০ জন রোগী দেখি। এর মধ্যে ক্ষীণ দৃষ্টি বা মাইয়োপিয়ার আক্রান্ত শিশু আসে গড়ে ৫০ জন। যাদের চোখে চশমাজনিত ক্রটিই বেশি। যারা দূরে দেখতে পারে না, এ ধরনের চোখের ক্রটিকে বলে ক্ষীণ দৃষ্টি বা মাইয়োপিয়া। যে শিশুরা দূরেও কম দেখে কাছেও কম দেখে, এ ধরনের ত্রুটিকে বলা হয় ‘হাইপারমেট্রপিয়া’, আরেক ধরনের চোখের সমস্যা নিয়ে শিশু আসে, যাদের আমরা বলি ‘এস্টিগমেটিজম’, যাদের সিলিন্ডার পাওয়ার বা এঙ্গেল পাওয়ারে ত্রুটি থাকে।

তিনি আরো জানান, শহরের শিশুরা এখন অনেক বেশি গ্যাজেট ব্যবহার করছে। যার জন্য গ্রামের চেয়ে শহরের শিশুদের এ ধরনের চোখের সমস্যাগুলো বেশি দেখা দিচ্ছে। এ সমস্যা থেকে উত্তরণের একমাত্র উপায় অভিভাবকদের সচেতন হওয়া। টেকনোলজি শিশু ব্যবহার করবে তবে সেটা এক ঘণ্টার বেশি অবশ্যই নয়।

চক্ষু বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, স্মার্টফোন, ট্যাবে ভিডিও গেমসের আসক্তি ছোটবেলা থেকে শিশুদের চোখের বিভিন্ন ধরনের সমস্যাসহ নানা ধরনের মানসিক সমস্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এসবের জন্য খেলার মাঠ বন্ধ হয়ে যাওয়া, লেখাপড়ার বাড়তি চাপ, সূর্যের আলোতে শিশুদের না আসা, দিগন্তের সবুজের দিকে তাকিয়ে না থাকাকেই বেশি দায়ী।

চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. গোলাম মোস্তফা বলেন, আমরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের চোখ পরীক্ষা করে থাকি। এতে দেখা যায় গ্রামের চেয়ে শহরের শিশুদের চোখের সমস্যাটাই অনেক বেশি। তবে অভিভাবকদের সচেতন হতে হবে। কোনো শিশু যদি টিভির সামনে গিয়ে টিভি দেখে, বোর্ডের লেখা ঝাপসা দেখে তাহলে অভিভাবককে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

এদিকে দেশে যে হারে ক্ষীণ দৃষ্টির শিশু বাড়ছে তাতে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য আশঙ্কাই করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, নতুন প্রজন্মের শিশুদের এক বিশাল অংশই ক্ষীণ দৃষ্টি নিয়ে বেড়ে উঠছে, যারা আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে। এই শিশুদেরই যদি জীবনের পরতে পরতে দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় তাহলে আগামীর বাংলাদেশকে কেমন আমরা দেখব?

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads