• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি : সংগৃহীত

মতামত

মশা রোধ প্রসঙ্গে

  • প্রকাশিত ১৩ এপ্রিল ২০১৮

নির্দিষ্ট করে বলার প্রয়োজন নেই, বছরের পুরোটা সময়ই মশার উৎপাতে অতিষ্ঠ থাকে নগরবাসী। ঘরে ও বাইরে কোনো স্থানই বাদ যাচ্ছে না মশার আক্রমণ থেকে। রাতে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ থাকলেও দিনেও এর উপদ্রব থেকে  রেহাই নেই। বাসা-বাড়ি, দোকানপাট, স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত সর্বত্রই রয়েছে মশার উৎপাত। কোনো কোনো এলাকায় মশার উপদ্রব এতই বেশি যে, দিনের বেলায়ও মশারি টাঙাতে হয়। বিরক্তিকর এই অভিজ্ঞতার পাশাপাশি আছে মশার রোগজীবাণুতে আক্রান্ত হওয়ার ভয়। এই মশা অনেক সময় মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। মশার মাধ্যমে চিকুনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু, ফাইলেরিয়া, পীতজ্বর, জিকা ভাইরাস প্রভৃতিসহ মশাবাহিত নানা রোগ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে মহানগরী ঢাকায়।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ২০১৭ অর্থবছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা মশক নিধনের জন্য বরাদ্দ রাখলেও তা তেমন কাজে আসেনি। রাজধানীতে অল্প বৃষ্টিতেই জমে যায় পানি। খাল, ডোবা ও নালায় জমে থাকা ময়লা পানিতে ব্যাপক মশা জন্ম নেয়। সেখান থেকেই মশা রাজধানীতে ছড়িয়ে পড়ে।  রাজধানীর রাস্তাঘাট সংস্কার আর ভাঙা-গড়ার খেলা দিন, সপ্তাহ কিংবা মাস নয়, বছরের পর বছর চলতে থাকে। ওয়াসার কাজ শেষ হলে শুরু হয় সিটি করপোরেশনের ভাঙা-গড়ার কাজ। আবার টিঅ্যান্ডটি কাজ শেষ করলে শুরু হয় বিদ্যুৎ বিভাগের কাজ। এতে নগরীতে বাড়ে যানজট, ঘটে দুর্ঘটনাও। এসব কাজের জন্য কোথাও ধুলার পরিমাণ বেশি, কোথাও পানি আটকে আছে, আবার কোথাও ইট-কাঠের এ শহরে নাগরিকদের ভোগান্তি আরো বাড়ে কাদা-পানি জমে থাকায়। তবে নাগরিকদের এ ভোগান্তি বেশি বাড়ে নতুন বাজার থেকে শুরু করে বাড্ডা, রামপুরা, মালিবাগ চৌধুরীপাড়া, মালিবাগ রেলগেট, মৌচাক, মালিবাগ ও কাকরাইল মোড় এলাকায়।

রাজধানীর রামপুরা-বনশ্রী খাল এখন আবর্জনার স্তূপে পরিণত হয়েছে। পুরো এলাকার এ খালটি বনশ্রী সি-ব্লক থেকে মেরাদিয়া হাট পর্যন্ত এলাকায় মশা উৎপাদনের ‘কারখানা’ হিসেবে পরিচিত। মশার উৎপাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়েছে। অন্যদিকে রাজধানীর মাদারটেক, নন্দীপাড়া, মোহাম্মদপুর, মিরপুর, কালশী, ভাষানটেক, কল্যাণপুর, দারুসসালাম, নাখালপাড়া, মহাখালী, বাসাবো, খিলগাঁও, মুগদা, মানিকনগর, শনিরআখড়া, মীর হাজীরবাগ, বছিলা এলাকায় মশার উৎপাত বেশি। ওইসব এলাকায় ডোবা-নালা ছাড়াও বেশকিছু খাল ও ছোট ঝিল রয়েছে। খালগুলোতে পানি প্রবাহ বন্ধ। তাই জমে থাকা পচা পানিতে ঘটছে মশার বিস্তার। ঝিলেও কচুরিপানা আর ময়লা পচে মশার প্রজনন ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। ওইসব খাল-ঝিল পরিষ্কারও করা হয় না, সেখানে ওষুধও ছিটানো হয় না। খালগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় ময়লার স্তূপ জমে উঠেছে। খালে পানির প্রবাহ না থাকায় আশপাশের বাসাবাড়ির ময়লাও সেখানে ফেলা হচ্ছে। ওই খাল, ঝিল ও ডোবা এখন মশার উৎস। 

মশার বংশ বিস্তার ঠেকাতে সিটি করপোরেশনও নিয়মিত ওষুধ প্রয়োগ করছে না। আবার সিটি করপোরেশনের ওষুধ ছিটানোর যন্ত্র নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ। বেশকিছু যন্ত্র পুরনো, সেগুলো এখন আর কাজ করছে না। ডিএসসিসিতে মশার ওষুধ ছিটানোর মেশিন রয়েছে ৯৪০টি। এর মধ্যে হাতে চালিত ৪৪২টি, ফগার মেশিন ৪৪৭টি এবং হুইল ব্যারো মেশিন রয়েছে ৫১টি। এসবের মধ্যে ২০৮টি হাতে চালিত মেশিন ও ১৮৬টি ফগার মেশিনে খুব একটা কাজ হয় না। আর ১৮টি হুইল ব্যারো মেশিন দিয়েও কাজ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া ডিএনসিসির ৬৫৩টি মেশিনের মধ্যে হাতে চালিত ৩৮৭টি, ফগার মেশিন ২৫৫টি ও হুইল ব্যারো মেশিন ১০টি। এ ছাড়া একটি ভেহিকেল মাউন্টেড ফগার মেশিন রয়েছে। এসবের মধ্যে শতাধিক মেশিন দিয়ে এখন আর কাজ করা যায় না। এ ছাড়া পুরনো মেশিনে অতিমাত্রায় শব্দ হওয়ায় মশা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সরে যায়।

জানা যায়, রাজধানীর বেশকিছু পুকুর গণপূর্ত অধিদফতরের মালিকানাধীন। সংস্থাটির পক্ষ থেকে যেসব এলাকায় আবাসিক ভবন গড়ে তোলা হয়েছে সেখানেই পুকুরের সংখ্যা বেশি। এমন একটি পুকুর আছে আজিমপুর এলাকায়। ওই পুকুরটিকে বৃষ্টির পানি ধারণের আধার বলা হলেও বাস্তবে এটি এখন আবর্জনায় ভরাট হয়ে আছে। দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করায় পুকুরটি এখন মশার প্রজননক্ষেত্র। একই অবস্থা রয়েছে গণপূর্ত অধিদফতরের মালিকানাধীন এলেনবাড়ী পুকুর ও মিরপুর টোলারবাগ আবাসিক এলাকার পুকুরটি।

ঘরোয়াভাবে মশা তাড়ানোর জন্য লেবু ও লবঙ্গের ব্যবহার, নিমের তেলের ব্যবহার, পুদিনার ব্যবহার, ধুনোর সঙ্গে নিশিন্দা ও নিমপাতার গুঁড়োর ব্যবহার, হলুদ বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবহার, কর্পূর ব্যবহার, সুগন্ধি ব্যবহার, রসুনের স্প্রে ব্যবহার ও কেরোসিন তেলের স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ ছাড়া চা-পাতা পোড়ানো, নিমপাতা পোড়ানো,  নারিকেলের আঁশ পোড়ানোর মতো কাজগুলোও করা যেতে পারে মশার উৎপাত বন্ধ করতে। মশার উপদ্রব থেকে রাজধানীবাসীকে রক্ষা করতে সিটি করপোরেশন ও মশক নিবারণী দফতরকে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ওষুধ ছিটানোর জন্য অবিলম্বে নিয়োগ দিতে হবে প্রয়োজনীয় দক্ষ লোকবল। খাল-ঝিল, নালা-নর্দমা নিয়মিত পরিষ্কার করার আওতায় আনতে হবে, যাতে এগুলো মশার প্রজননক্ষেত্রে পরিণত না হয়। তা ছাড়া বাড়াতে হবে জনসচেতনতাও।

শামীম শিকদার

লেখক : সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

Shamimsikder488@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads