• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের ভবিষ্যৎ

  • প্রকাশিত ১৬ এপ্রিল ২০১৮

জগতের প্রতিপালক সৃষ্টিকর্তার পর স্নেহময়ী মাতা-পিতার স্থান। মাতার স্বার্থহীন ভালোবাসা, আদর, স্নেহ-মমতার পরশে একটি শিশু ধীরে ধীরে বড় হয়। পিতা-মাতা তাদের সন্তানদের নিয়ে আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখেন। তারা তাদের সামর্থ্যের চেয়েও অনেক বেশি বাজেট রাখেন সন্তানদের জন্য। সব পিতা-মাতার চাওয়া- তাদের বুকের ধন, আদরের সন্তান বড় হয়ে সমাজের একজন বিশেষ ব্যক্তি হবে। তবে যে পিতা-মাতার সামর্থ্য নেই, অথবা যে সন্তানদের কপালে জোটেনি মায়ের শাড়ির আঁচলে মুখ লুকানো স্বর্গীয় সুখ, বাবার অপার স্নেহ, ভালোবাসা; এমনকি যে সন্তানদের জীবন দারিদ্র্যের আগুন-খাঁচায় বন্দি তাদের অবস্থা করুণ। শুধু ক্ষুধা নিবারণের জন্য আজকের অনেক শিশু দেশ ও জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার হয়েও বাল্যজীবনকে হত্যা করে চলছে অনিশ্চিত গন্তব্যে। এই শিশুগুলো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া ছাড়াও দৈনন্দিন জীবনে চারিত্রিক গুণাবলির র্চচা, উপযুক্ত নৈতিক শিক্ষা ও আচার-আচরণ, শিশুসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি ও মনোভাব, কথাবার্তার শালীনতা, সততা, বিশ্বাস, সুবিবেচনা, সাধারণ জ্ঞান, ধ্যান-ধারণা, বুদ্ধির উন্মেষ ঘটানো ইত্যাদি থেকেও বঞ্চিত।

অধিকারবঞ্চিত শিশু-শিক্ষা যেন এটাই, রোজগার করতে হবে দু-মুঠো ভাতের জন্য, শ্রমিক হতে হবে বাঁচার জন্য। আমিও ব্যক্তিগত জীবনে একজন শিশু শ্রমিক থেকে আজ তরুণ শ্রমিক। আমার জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলি, আমরা অধিকারবঞ্চিত শিশুরা যেভাবে বেঁচে আছি এটাকে বেঁচে থাকা বলে না। আজ রাষ্ট্র এবং ১৬ কোটি মানুষের কাছে প্রশ্ন রইল— আমাদের কয়েক লাখ অধিকারবঞ্চিত শিশু কেন আজ শিশুশ্রমিক? যখন দেশে দেশে সব মানব-অন্তরে শিশুরাই পরম স্নেহের, পবিত্র এবং নিষ্পাপ! শ্রমবিনিময় ছাড়া আমাদের বেঁচে থাকা কেন অনিশ্চিত? আমরা কেন অন্নহীন, বস্ত্রহীন, বসতিহীন, চিকিৎসাহীন, শিক্ষাহীন অবস্থায় দিনাতিপাত করছি? আমরা এভাবে বাঁচতে চাই না। আমরা অধিকারবঞ্চিত শিশুরা সরকার ও জাতির কাছে বেশি কিছু চাই না, আমরা চাই আর দশটি শিশুর মতো নিশ্চিন্তে বাঁচতে। একটু আশ্রয়, সহযোগিতা, দু-মুঠো খাবার, ভালো একটি পোশাক, ভালো ব্যবহার, চলার মতো শিক্ষা, সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে পথচলা এবং অন্ধকার জীবন থেকে চাই মুক্তি। আর চাই একজন আদর্শ অভিভাবক, যে কিনা আমাদের দেখাবে আলোর পথ।

ভাবতে কষ্ট লাগে, অধিকারবঞ্চিত পিতৃ-মাতৃহীন শিশুদের ভবিষ্যৎ কী?  মনকে বোঝানো কষ্টকর- কী চায় রাষ্ট্র আমাদের থেকে, কী দেব আমরা রাষ্ট্রকে? রাষ্ট্রের কাছে আমাদের একটি চাওয়া- কোনো শিশু যেন ক্ষুধার্ত না থাকে। ক্ষুধা যেন কোনো শিশুকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে না দেয়। অধিকারবঞ্চিত প্রত্যেক শিশু বাঁচতে চায় আপনার-আমার ছেলে-মেয়ে কিংবা ভাই-বোনের মতো। আর এসব শিশুর দায়িত্ব শুধু পিতা-মাতা অভিভাবক বা রাষ্ট্রের নয়, আমার-আপনার প্রত্যেক সচেতন ব্যক্তিরও দায়িত্ব। দেশের সব সামর্থ্যবান সচেতন সুনাগরিক ব্যক্তিদের অনুরোধ করি, আপনারা আপনাদের অবস্থান থেকে অধিকারবঞ্চিত শিশুদের প্রতি সুদৃষ্টি দিন, দেখবেন একদিন এরা জাতির কল্যাণে কাজ করতেও সক্ষম হবে।

 

মো.শামীম মিয়া

শ্রমজীবী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads