• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

অভিমত

বিমান যখন লিমিটেড কোম্পানি

  • প্রকাশিত ১৭ এপ্রিল ২০১৮

বাস, টেম্পো, মোটরসাইকেল, রিকশা ও ট্রেন স্থলপথে চলে। নৌকা, লঞ্চ, জাহাজ ও স্পিডবোট চলে জলপথে। স্থল ও জলপথ উভয়ের জন্যই রয়েছে মন্ত্রণালয়— সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এগুলো বিমানের মতো নামকাওয়াস্তে ক্ষমতাহীন মন্ত্রণালয় নয়। সড়ক ও নৌবিভাগ কোনো লিমিটেড কোম্পানি নয়। উভয় বিভাগেই লোকবল নিয়োগ দেয় মন্ত্রণালয়। কিন্তু আকাশযানের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের লোকবল মন্ত্রণালয় নিয়োগ দেয় না। বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়টির মন্ত্রীর এতে কোনো নির্বাহী ক্ষমতা নেই। ২০০৭ সালে ফখরুদ্দীন-মইনুদ্দীনের সেনাশাসিত সরকার বিমানকে লিমিটেড কোম্পানি বানিয়ে গেছে। বিমান পরিচালনা পর্ষদই সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী। প্রযুক্তি প্রভাবিত এই যুগে বিমানে এখনো চালু রয়েছে মধ্যযুগীয় দাসপ্রথার মতো অনিশ্চিত রোজঠিকে দিনমজুরি। অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণী দৈনিক মজুরিভিত্তিতে এখানে বছরের পর বছর ধরে দিনমজুরি করে চলেছে। এসব লোকবল নিয়োগে নেই কোনো যোগ্যতা, দক্ষতা ও নৈতিকতার মানদণ্ডের বিচার। বিমানকে ঘিরে সক্রিয় রয়েছে ক্ষমতাধর সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটই নিয়ন্ত্রণ করে বিমানের নিয়োগ, চাকরিচ্যুতি ও বিমানবন্দরকেন্দ্রিক সব ব্যবসা-বাণিজ্য। মন্ত্রীর রদবদল হলেও এ সিন্ডিকেটের কোনো যায়-আসে না। এ সিন্ডিকেট ভাঙার ক্ষমতা যেন খোদ মন্ত্রীরও নেই!

অতীতেও বিমানকে মন্ত্রণালয়ের অধীন নেওয়ার একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। তখন মন্ত্রীর নির্দেশনায় বিমানকে ঢেলে সাজাতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটিও গঠন করা হয়েছিল। কিন্তু এর সুফলের কোনো আলো ফোটেনি। প্রকৃত অর্থে বিমানও মন্ত্রণালয়ের অধীন কখনো হলো না। যান্ত্রিক গোলযোগে বিমানের জরুরি অবতরণ যেন ধারাবাহিক একটি বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি এয়ারলাইনসেও অনেক ক্ষেত্রে নিয়োগ হচ্ছে অদক্ষ জনবল। সাত দিনভিত্তিক, ১০ দিনভিত্তিক ও ৮৯ দিনভিত্তিক অস্থায়ী নিয়োগপ্রক্রিয়া চালু করে তারা হাতিয়ে নেয় কোটি কোটি টাকা। আর বিমানে নিয়োগ পেয়ে যায় অনেক অসৎ, অযোগ্য ও অদক্ষ ব্যক্তি। যার দরুন কিছুদিন পরপর বিমানে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে চলেছে। চলছে যাত্রীর লাগেজ কাটা, যাত্রী হয়রানি, প্রধানমন্ত্রীকে বহনকারী বিমানে ইচ্ছাকৃত যান্ত্রিক গোলযোগ প্রভৃতি। অনিবার্য কারণবশত কিছুদিন পরপর ঘটছে বিমানের জরুরি অবতরণের মতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা, যা বিমানের অদক্ষতাকেই দৃশ্যমান করে চলছে বার বার।

বিমান হয়ে উঠেছে একটি বিশৃঙ্খল ও লোকসানি প্রতিষ্ঠান। বিপরীতে অনেকদূর এগিয়ে গেছে বর্তমানের রেল। একসময় রেলের চরম দৈন্যদশা ছিল। ছিল অনিয়ম, বিশৃঙ্খলা ও সময়ের সিডিউলহীনতা। আস্থাহীনতার অভাবে তখন মানুষ ট্রেনে না চড়ে বাসে চড়ত। ট্রেনে চড়লেও অধিকাংশই চড়ত বিনাটিকিটে। আরো ছিল এসব ট্রেনে চোর-ডাকাতের উপদ্রব। তখন রেলের কোনো আলাদা মন্ত্রণালয় ছিল না। এখন রেল মন্ত্রণালয় হয়েছে, এসেছে শৃঙ্খলা, বেড়েছে যাত্রী নিরাপত্তা। এখন কেউ যদি পরামর্শ দেয় রেলকে লিমিটেড কোম্পানি করা হোক, এমন প্রস্তাব কি সঙ্গত হবে? বিমানকে যখন লিমিটেড কোম্পানি করা হয় তখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বিষয়টি নিয়ে ভাবা উচিত ছিল।

বিষয়টি নিয়ে ভাবার এবং সে অনুযায়ী বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেওয়া আজকে জরুরি হয়ে পড়েছে।

 

এখলাসুর রহমান

সমাজকর্মী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads