• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

বীর মুক্তিযোদ্ধা সামসেদুল হক খোকন স্মরণে

  • প্রকাশিত ২২ এপ্রিল ২০১৮

বীর মুক্তিযোদ্ধা কে এম সামসেদুল হক খোকন আজ আর আমাদের মাঝে নেই। গত বুধবার ১৮ এপ্রিল তিনি ইন্তেকাল করেছেন। আমাদের গৌরবোজ্জ্বল মুক্তিযুদ্ধে তার অনন্য ভূমিকা ছিল সবার জন্য অনুকরণীয়। তিনি জীবনবাজি রেখে সশস্ত্র সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। সেনাবাহিনীর লং কোর্সের অফিসার ছিলেন। মুক্তিকামী বাঙালি হওয়ায় তাকে সেনাবাহিনীর চাকরি হারাতে হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধ পূর্বকালে বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ কামালের সঙ্গে তার যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব ছিল। আমার সঙ্গে তার সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। তিনি আমার প্রতিষ্ঠান সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রটোকল কর্মকর্তা ছিলেন। সেই সুবাদে তাকে খুব কাছে থেকে দেখেছি। সত্যিকার অর্থে একজন সহজ-সরল মানুষ ছিলেন তিনি। ছিলেন একজন সজ্জন ব্যক্তি। বিনয়ী, ভদ্র, নম্র এবং স্মার্ট। অল্প সময়ে সবাইকে আপন করে নেওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা ছিল তার।

আমি পরপর চারবার সংসদ সদস্য ছিলাম। বিভিন্ন সময় আমার নির্বাচনী কার্যক্রমে তিনি অংশগ্রহণ করেন। আমার নির্বাচনী এলাকা কালকিনির আপামর জনগণ তাকে চিনতেন, জানতেন এবং ভালোবাসতেন। তার সদাচরণ সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করত। তার অমায়িক ব্যবহার, সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখ ও সৌম্য চেহারা তাকে নির্বাচনী এলাকার মানুষের কাছাকাছি নিয়ে গিয়েছিল। ১৯৯৬ এবং ২০০৯ সালে আমি মন্ত্রিসভার সদস্য থাকাকালে তিনি আমার সহকারী একান্ত সচিব হিসেবে যোগ্যতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। একজন সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের যেকোনো মানুষের কাছে তার ছিল অবাধ বিচরণ। নিজস্ব চারিত্র্যিক বৈশিষ্ট্যের কারণে তিনি সবার সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলতে পারতেন। আমার অফিসিয়াল এবং ব্যক্তিগত যেকোনো কাজ তিনি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন। একটি বিষয়ে তিনি ছিলেন খুবই সতর্ক। আর তা হচ্ছে, আমার সুনাম। আমার সুনাম ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো কাজ কখনো তিনি করেননি- যা আমি দ্বিধাহীনচিত্তে বলতে পারি। তিনি ছিলেন সৎ, নিবেদিত, বন্ধুবৎসল, সদালাপী, একনিষ্ঠ এবং সাহসী। ১/১১-এর সময় আমার দুর্দিনে তিনি তার সাধ্যমতো আমার জন্য কাজ করেছেন।

মরহুম সামসেদুল হক খোকন ছিলেন কোরআনে হাফেজ। তার সুললিত কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত সবাইকে মুগ্ধ করত। আমি মন্ত্রী থাকাকালীন একবার সপরিবারে ওমরা পালনের জন্য মক্কা-মদিনা যাই। তখন তিনি আমাদের সফরসঙ্গী হয়েছিলেন। নবী করিম (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারতের সময় এবং কাবা শরীফে তার সুললিত কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত সবাইকে মুগ্ধ করেছিল। আমার সহধর্মিণী খাজা নারগিছ হোসেন ইসলামের ইতিহাসের ছাত্রী হওয়ায় ইসলামের নিদর্শনসমূহ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল ছিলেন। আমাদের সফরকালে আমরা সেসব নিদর্শন পরিদর্শন করি। ওই সময় খোকন আমাদের সঙ্গে থেকে সেই সব পুণ্যভূমি প্রত্যক্ষ করেন। তার মৃত্যুর পর তাকে দেখতে গিয়ে সে সব স্মৃতি আমার মানস চেখে ভেসে ওঠে। আমি তার কপালে হাত রেখে মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে তার রুহের মাগফিরাত কামনা করেছি। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, আল্লাহ তাকে জান্নাতবাসী করবেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে তার কিছু গুণাবলির কথা জেনে আমি বিস্মিত হয়েছি। বরাবরই যেকোন ব্যক্তির, আত্মীয়-বন্ধু-বান্ধব সবার মরদেহ তিনি বহন করতেন এবং মৃত ব্যক্তিকে কবরে শায়িত করতেন, যা ছিল সত্যিই পুণ্যের কাজ।

সামসেদুল হক খোকনের জন্ম নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার পাঁচগাঁও গ্রামে। তার বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৩ বছর। তিনি ছিলেন পারিবারিকভাবে একজন সফল ব্যক্তি। তার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ এবং কন্যা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত। তার স্ত্রী ট্রাস্ট ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা। তার পুত্র ও পুত্রবধূ মিউচুয়াল ব্যাংকের কর্মকর্তা। একমাত্র কন্যা ডেন্টাল কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী। তিনি তার উত্তরাধিকারীদের সবাইকে উপযুক্ত স্থানে রেখে যেতে সক্ষম হয়েছেন।

মৃত্যু একটি ছোট শব্দ, যা মানুষের জীবনের অবধারিত সত্য। মৃত্যুর পেয়ালা সবাইকে স্পর্শ করতে হবে। পবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহ সবাইকে তার নির্দিষ্ট সময়ে মৃত্যুদান করেন। আল্লাহর হুকুম ব্যতীত কেউই মৃত্যুবরণ করতে পারে না। মহান আল্লাহর এ বিধান আমাদের মানতে হবে।

সহকর্মী, সাকো ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের প্রটোকল কর্মকর্তা কে এম সামসেদুল হক খোকনের অকাল মৃত্যুতে আমি ব্যথিত, শোকাহত। আমি আমার একজন একনিষ্ঠ কর্মীকে হারিয়েছি, বন্ধুকে হারিয়েছি। তার মৃত্যু আমার জীবনে এক অপূরণীয় শূন্যতা সৃষ্টি করেছে। পরম করুণাময় আল্লাহ তার পরিবারবর্গ, স্বজন এবং সহকর্মীদের এই শোক বইবার তৌফিক দিন। আমীন।

 

সৈয়দ আবুল হোসেন

সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads