• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

ছবি: সংগৃহীত

মতামত

নদীর ভাঙন

  • প্রকাশিত ২৭ এপ্রিল ২০১৮

ঘুষ, দুর্নীতি, মাদকাসক্ত, মাদক ব্যবসা, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, ধর্ষণ, খুন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানারকম অনাকাঙ্ক্ষিত কর্মকাণ্ডের মূলে রয়েছে অজ্ঞতা, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের চরম নৈতিক অবক্ষয়। সমকালীন যথাযথ শিক্ষার অভাবই বেকারত্বের মূল কারণ, অপরদিকে দরিদ্রতার অন্যতম কারণ নদীভাঙন। প্রতিবছর নদীভাঙনের ফলে হাজার হাজার পরিবার নিঃস্ব হচ্ছে। গত ২০ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার সপ্তম পাতায় প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম ছিল- ‘বর্ষা শুরুর আগেই ভাঙছে পদ্মার পাড়’, সংবাদে বলা হয়েছে, ‘সবে গ্রীষ্মকাল শুরু হয়েছে। বর্ষা মৌসুম শুরু হতে এখনো প্রায় দুই মাস বাকি, এর মধ্যে রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মার তীরে শুরু হয়েছে ভাঙন। গত তিন-চার দিনের ভাঙনে পদ্মায় বিলীন হয়েছে শতাধিক বিঘা ফসলি জমি, ভিটামাটি ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরে গেছে কয়েকটি পরিবার।’ প্রতিবেদক সংবাদের শেষাংশে বলেছেন, ‘এদিকে গণদাবি থাকা সত্ত্বেও এলাকার নদীভাঙন রোধে কার্যকর স্থায়ী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে না। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন রোধ করা না গেলে আগামীতে দেবগ্রাম ইউনিয়নের বেশিরভাগ গ্রাম পদ্মায় বিলীন হয়ে যাবে।’ সরকারের স্থানীয় দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগ নেওয়া হবে।

গত বছর প্রকাশিত একটি জাতীয় পত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছিল, বর্ষা মৌসুমে দেশের ছয় বিভাগের যমুনা, মেঘনা, পদ্মা, সুমেশ্বরী, বাঙালি, দুধকুমার, বিষখালী নদীসহ প্রায় ৭০টি নদী অবিরাম ভেঙে চলছে। নদীর ভাঙনকবলিত জেলাগুলো হচ্ছে- সিরাজগঞ্জ, কুড়িগ্রাম, ময়মনসিংহ, জামালপুর, বগুড়া, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, বরিশাল, ভোলা, মনপুরা, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, খুলনা, রাজশাহী, ফরিদপুর। ২০১৭ সালে সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষার জন্য যে বাঁধ দেওয়া হয়েছিল, তার হার্ড পয়েন্টে ১৪০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। অথচ ওই শহর রক্ষা বাঁধটি নির্মাণ করতে সরকারের ৩শ’ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে যমুনার মতো দেশের অন্যান্য নদীর ভাঙন ক্রমেই বেড়েই চলছে। প্রতিবছর গড়ে প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার মানুষ নদীভাঙনের শিকার হচ্ছে। গত ৪৫ বছরে প্রায় ২ কোটি ৭৫ লাখ মানুষ নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। ৬৪ জেলার মধ্যে ৫৬টি জেলা নদীভাঙনের কবলে পড়েছে। গত ৩৫ বছরে সরকার নদীভাঙন রোধে সাড়ে চার হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। সরকারের বরাদ্দকৃত টাকার ব্যাপক অপচয়ই হয়েছে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টারের এক জরিপে বলা হয়েছে, ‘নদীভাঙনের ফলে প্রতিবছর প্রায় ৪০ লাখ জনমানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ে। নদীভাঙন প্রতিরোধে রাষ্ট্রের স্থায়ী এবং টেকসই কোনো পরিকল্পনা দীর্ঘ ৪০ বছরের ব্যবধানে হয়নি। বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনকে পুঁজি করে পাইলিং ফেলার নামে সরকারের অর্থের ব্যাপক অপচয় এবং লুটপাট হচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’ বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন ঠেকানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নদীর স্রোত প্রকৃতির খেয়ালে চলে। যার গতি পথ বর্ষা মৌসুমে রোধ করার পর্যাপ্ত শক্তি বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের তেমনটা নেই। একপাশে বাধা দিলে অন্যপাশে ভাঙবেই। তবে কি নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব। ষড়ঋতুর বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে নদীর গতিপথ নির্ণয়, দীর্ঘ এবং স্থায়ী প্রকল্প গ্রহণ এবং শুষ্ক মৌসুমে পাইলিং পদ্ধতিতে নদীর প্রবহমান গতি ধারা সৃষ্টি করার ব্যবস্থা হলেই দেশের চির অভিশাপ নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব। একই সঙ্গে ভরাট হয়ে যাওয়া নদীর প্রবহমান গতিপথ ড্রেইজিংয়ের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করতে পারলেই আমাদের এই নদীভাঙন সমস্যার অবসান ঘটবে।

লেখক : রহিম আবদুর রহিম

সাংবাদিক, শিক্ষক ও নাট্যকার

ই-মেইল : rahimabdurrahim@hotmail.com

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads