• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাড়ছে বজ্রপাত

  • প্রকাশিত ৩০ এপ্রিল ২০১৮

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৈশ্বিক উষ্ণতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশেও বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব ব্যাপকভাবে লক্ষণীয়। এর প্রভাবে এ দেশের ঋতু বৈচিত্র্যে যেমন পরিবর্তন আসছে তেমনি বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে নানা ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, ভূমিকম্পের পাশাপাশি বজ্রপাত বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিশ্বে মোট বজ্রপাতের ৭৮ শতাংশ সংঘটিত হয় ক্রান্তীয় অঞ্চলে। দক্ষিণ এশিয়া তথা বাংলাদেশ যেহেতু ক্রান্তীয় অঞ্চলের খুব কাছাকাছি অবস্থিত, তাই মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত বজ্রপাত ও বজ্রঝড় এখানে নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। বজ্রপাত একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেও বর্তমানে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর সংখ্যা এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে, বিষয়টি সবাইকে ভাবিয়ে তুলেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর এক-চতুর্থাংশই ঘটে বাংলাদেশে। এখানে মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত বজ্রপাতের প্রকোপ সবচেয়ে বেশি থাকে। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে বজ্রপাত সবচেয়ে বেশি হয়। বাংলাদেশে প্রতি বর্গকিলোমিটার এলাকায় গড়ে ৪০টি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে থাকে। বজ্রপাতের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার পেছনে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আরো কিছু কারণকেও দায়ী করেন আবহাওয়াবিদরা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, ধাতব পদার্থের ব্যবহার বৃদ্ধি, জলাভূমি ভরাট ও নদ-নদীর বিলুপ্তি। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, গত সাত বছরে দেশে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় দেড় হাজার ছাড়িয়েছে। তবে নির্দিষ্ট পরিসংখ্যানের বাইরেও বজ্রপাতজনিত অনেক মৃত্যুর সংখ্যা থেকে যায়। সে হিসাবে বাংলাদেশে বজ্রপাতজনিত মৃত্যুর সংখ্যা আরো বেশি হবে।

শহরের তুলনায় গ্রামে বজ্রপাতে মৃত্যুর হার বেশি। গ্রামে বজ্রপাতজনিত প্রাণহানির কারণ হিসেবে কেউ কেউ বলেন, গ্রামে খোলা প্রান্তর, টিনের চাল ইত্যাদি বজ্র আকর্ষণ করে।

এ ছাড়াও উঁচু গাছ হিসেবে পরিচিত তাল, নারিকেল ও সুপারি গাছের সংখ্যা কমে যাওয়া, দুর্বল অবকাঠামো নির্মাণ এবং বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা না থাকার কারণে গ্রামে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। বজ্রপাত এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ- যা মুহূর্তের মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে, তাই এর পূর্বাভাস দেওয়া অসম্ভব। তবে বজ্রপাত সম্পর্কে সচেতন হলে এ দুর্যোগ থেকে অনেকাংশেই রক্ষা পাওয়া যায়। এ ব্যাপারে গবেষণা ও জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। বিশেষত গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে জনসাধারণকে সচেতন ও সজাগ করে তোলা প্রয়োজন, যাতে বজ্রপাতে হতাহতের ঘটনা এড়ানো যায়। জনসচেতনতামূলক বিজ্ঞপ্তি প্রচারের ফলে মানুষ সহজেই বুঝতে পারবে আবহাওয়ার কোন পরিস্থিতিতে বজ্রপাত হতে পারে এবং সে সময় বজ্রপাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

বজ্রপাতের পূর্বাভাস দেওয়ার কোনো প্রযুক্তি যেহেতু আবিষ্কার হয়নি, সেহেতু বজ্রপাত নিয়ে সবার মধ্যে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তাই বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে, মানুষের প্রাণ বাঁচাতে এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে পাঠ্যবইয়ে বজ্রপাতের কারণ ও এ থেকে রক্ষা পেতে করণীয় বিষয়ে পাঠদান জরুরি। বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে অবস্থান না করা, ধাতব বস্তু থেকে দূরে থাকা, কোনো গাছের নিচে অবস্থান না করা, মোবাইল, কম্পিউটার ও টেলিভিশনসহ ইলেকট্রনিক্স বস্তুর পাশে না থাকা এবং নিরাপদ ছাউনির নিচে অবস্থান করা জরুরি। বাংলাদেশে বর্তমানে বন্যার চেয়ে বজ্রপাতে অধিক লোক মারা যাচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত দেশে বজ্রপাতে মোট মৃতের সংখ্যা ১ হাজার ৪৭৬ জন। আর একই সময়ে বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ২০০ জন।

বজ্রপাত এমনই ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, যার ফলে ১ সেকেন্ডেরও কম সময়ে একজন মানুষের মৃত্যু হয়। বজ্রপাতের সময় প্রায় ৬০০ মেগা ভোল্ট বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। একজন মানুষের মৃত্যুর জন্য সেখান থেকে মাত্র ১০০ ভোল্ট বিদ্যুৎই যথেষ্ট। সুতরাং এমন ভয়বহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে সবার সচেতন হওয়ার এখনই সময়।

হুসাইন রবিউল

গণমাধ্যমকর্মী

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads