• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

মতামত

টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের পৃথক ক্যাডার

  • প্রকাশিত ০৩ মে ২০১৮

কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতকে অর্থনীতির শক্তিঘর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বেকার সমস্যা সমাধান, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন, বিশেষত নারীদের কর্মসংস্থানে রয়েছে এ খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ শিল্পের হাত ধরেই বিশ্ববাজারে আমাদের মিলেছে নতুন পরিচিতি। বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও জিডিপিতে অবদান রাখার পাশাপাশি এ শিল্পের সম্প্রসারণের সঙ্গে সঙ্গে বস্ত্র, সুতা, আনুষঙ্গিক উপকরণ, প্যাকেজিং ইত্যাদি শিল্পেরও সম্প্রসারণ ঘটেছে। সব মিলিয়ে আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম প্রধান চালিকা শক্তি এ পোশাক শিল্প। সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বস্ত্র ও পোশাক খাতের উত্তরোত্তর উন্নতি প্রকল্পে প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে। বস্ত্র খাতের এ পর্যায়ক্রমিক উন্নতি দক্ষ ও কারিগরি জনশক্তির কর্মসংস্থানের বিপুল চাহিদা তৈরি করছে। বর্তমান সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে তৈরি পোশাক ও বস্ত্রশিল্প খাতকে অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ সেক্টর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সে অনুযায়ী এ শিল্পকে আরো বেশি শক্তিশালী, নিরাপদ, যুগোপযোগী ও বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতাসক্ষম হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয়ের কথা ব্যক্ত করা হয়েছে। সে লক্ষ্যে ইতোমধ্যে দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র শিল্পসংশ্লিষ্ট বস্ত্র পরিদফতরকে অধিদফতরে রূপান্তরিত করা হয়েছে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, টেক্সটাইল শিক্ষা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার একটি সম্ভাবনাময় দিক। এ শিল্পের বিকাশের লক্ষ্যে টেক্সটাইলে উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে ‘বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইল’ (বুটেক্স) একটি বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া ঢাকা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়— এ তিনটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়ে পড়ার সুযোগ। সরকারি ব্যবস্থাপনায় টাঙ্গাইলের বঙ্গবন্ধু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাড়াও চট্টগ্রাম, পাবনা, বরিশাল, নোয়াখালী আর ঝিনাইদহে রয়েছে একটি করে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে টেক্সটাইলে গ্রাজুয়েশন লাভের সুযোগ। ১৪টি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও গ্রাজুয়েশন লাভ করেও বস্ত্র শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে জাতীয় অর্থনীতিকে সমৃদ্ধিশালী করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি যে সেক্টরটিকে ঘিরে আপতিত হয়, যার মেইড ইন বাংলাদেশ লেভেল জাতি হিসেবে গর্ব করার উপলক্ষ এনে দেয় এমন গর্বোজ্জ্বল অবদান রাখা সত্ত্বেও বিসিএসে, সরকারি বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে, সাধারণ সরকারি চাকরিতে টেক্সটাইল প্রকৌশলীরা অবহেলিত। বর্তমানে সরকারি কাজের জন্য বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) রয়েছে সড়ক ও জনপথ, গণপূর্ত, জনস্বাস্থ্য, বন, স্বাস্থ্য, রেলওয়ে প্রকৌশল, পশুসম্পদ, মৎস্য, পরিসংখ্যান ও গবেষণা কর্মকর্তা, কারিগরি শিক্ষা, কৃষি, খাদ্য ও সাধারণ শিক্ষার এই ১৩টি পেশাগত ক্যাডার। অথচ যে শিল্প আয়ের সম্ভাবনার ওপর দাঁড়িয়ে স্বনির্ভর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখে তাদের নেপথ্য কারিগর বস্ত্র খাতের প্রকৌশলীদের জন্য নেই পৃথক কোনো ক্যাডার সার্ভিস। টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের পৃথক ক্যাডার সার্ভিস না থাকায় বস্ত্র অধিদফতরের আওতাধীন প্রশাসনিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে দুই শতাধিক প্রথম শ্রেণির পদ বিদ্যমান এবং সমসংখ্যক সৃষ্টি প্রক্রিয়াগত পদসমূহে টেক্সটাইল গ্রাজুয়েটদের দক্ষতার কার্যকারিতা খর্ব হচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ক্যাডারভুক্ত না হওয়ার কারণে অন্য ক্যাডারভুক্তদের অধীনস্ততা গ্রহণ করতে বাধ্য হচ্ছে। একই গ্রেডভুক্ত হওয়ার পরও ক্যাডারভুক্ত না থাকায় গ্রাজুয়েটধারী ব্যক্তিটি একদিকে মেধার সঠিক মূল্যায়ন পাচ্ছে না, অন্যদিকে সামাজিক মর্যাদার দিক থেকেও পিছিয়ে পড়ছে। তাই টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের এসব বৈষম্য রোধে পৃথক ক্যাডার চালু করা উচিত। তবে টেক্সটাইল ক্যাডার নিয়ে মাঝেমধ্যে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিভিন্ন আশার বাণী শোনালেও কার্যত এর বাস্তবায়ন নিয়ে সরকারের কোনো মহলেরই তেমন কোনো তোড়জোড় নেই। একাধিকবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও বিভিন্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় থমকে আছে বাস্তবায়ন। তাই বিসিএসে স্বতন্ত্র ক্যাডার চালুসহ বিভিন্ন সরকারি জবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার নিয়োগ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার মাধ্যমে  বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় কাজ করছে সরকার। মাদার অব হিউম্যানিটি-খ্যাত বঙ্গবন্ধুর আদর্শ কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে বস্ত্রশিল্পে ৫০.০০ বিলিয়ন ডলার রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আর বস্ত্র প্রকৌশলীরা তা বাস্তবায়নের নিরন্তর সহযোগিতা করে আসছে। আমার বিশ্বাস টেক্সটাইল প্রকৌশলীদের ক্যাডারভুক্ত করলে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে, অন্যদিকে তেমনই জাতীয় উন্নয়নেও টেক্সটাইল গ্রাজুয়েটরা প্রত্যক্ষ অবদান রাখতে পারবে।

 

মো. রেদোয়ান হোসেন 

সমাজ পর্যবেক্ষক

redowan210@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads