• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

গ্রামের শিক্ষার পথে প্রতিবন্ধকতা

  • প্রকাশিত ০৫ মে ২০১৮

সাধারণ অর্থে জ্ঞান বা দক্ষতা অর্জনই শিক্ষা। শিক্ষা হলো সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের অব্যাহত অনুশীলন। শিক্ষা মানুষকে যেমন আলোকিত হয়ে বাঁচতে শেখায় তেমনই মানবিক গুণাবলিতে করে সমৃদ্ধ। শিক্ষার মাধ্যমে মানুষ তার নিজস্ব একটি পৃথিবী খুব সহজেই গড়ে তুলতে পারে। কিন্তু নিজস্ব পৃথিবী নির্মাণে যখন নানা দিক থেকে অহেতুক কিছু বাধা আসে তখন যাবতীয় আগ্রহ নষ্ট হয়ে যায়। ছেলেদের পড়ালেখা বা শিক্ষা গ্রহণের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে শিক্ষাজীবন শেষে আকর্ষণীয় একটি কর্মে নিযুক্ত হওয়ার মাধ্যমে পরিবারে বা সমাজে নিজের একটি অবস্থান তৈরি করে নেওয়া। ছেলেদের শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কিছুটা স্বাধীনতা থাকলেও মেয়েদের তেমন নেই।  মেয়েদের পদে পদে পারিবারিক ও সামাজিক বাধার সন্মুখীন হতে হয়। সরকারের অব্যাহত প্রণোদনা ও  সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে নারীদের শিক্ষা প্রতিবন্ধকতা অনেকটা কমে এসেছে। শিক্ষিত নারীর পাশাপাশি কর্ম ক্ষেত্রে তারা রাখছে ব্যাপক অবদান। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের অবদান বাংলাদেশের উন্নয়নে খুবই দৃশ্যমান। কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ১ লাখ ১০ হাজারের বেশি নারীকর্মী পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে কাজ করছেন। গত বছর সবচেয়ে বেশি নারী গেছেন সৌদি আরবে। এ সংখ্যা ৬২ হাজার ৯১৬। এ ছাড়া ২০ হাজার ৭৬৩ জন জর্ডানে, ১১ হাজার ৮৭৫ জন ওমানে, ৫ হাজার ৭৩ জন কাতারে, ৪ হাজার ৭৪৫ জন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, এবং ২ হাজার ৩১৬ জন লেবাননে নারীকর্মী গেছেন। এখন আর বিদেশে যেতে তাদের কোনো খরচ নেই। বিদেশের নিয়োগ কর্তারাই তাদের খরচ দিয়ে দেন। ১৯৯১ সাল থেকে বিদেশে নারীদের কর্মসংস্থান শুরু হয়। ১৯৯১ সালে মাত্র ২ হাজার ১৮৯ জন, ২০১৩ সালে প্রথমবারের মতো ৫০ হাজার জন, ২০১৫ সালে ১ লাখ ৩ হাজার ৭১৮ জন নারীকর্মী  বিদেশে যান। বিএমইটির তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯১ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সব মিলিয়ে ৫ লাখ ৬৪ হাজার ৭৫৬ জন নারী বিদেশে গেছেন।

শুধু বিদেশে নয় দেশেও বাড়ছে নারীদের কর্মসংস্থানের সংখ্যা। কিন্তু নারীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতার কারণে কর্মসংস্থানে তারা তেমন সুযোগ করে নিতে পারছে না। শহরে নারীদের শিক্ষা ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিয়ে থাকলেও গ্রামে তার চিত্র সম্পূর্ণ বিপরীত। গ্রামের দরিদ্র পরিবারগুলো মেয়েদের পড়ালেখার পিছনে অর্থ ব্যয় করা অনেকটা অহেতুক মনে করে থাকে। প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষেত্রে সব খরচ বাংলাদেশ সরকার বহন করলেও তাতে চাহিদার তুলনায় শিক্ষার্থী মিলে না। আর যারা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সিঁড়ি পেরিয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে অবস্থান করে তাদের উচ্চ বিদ্যালয়ের পড়ালেখা তো দূরের কথা পরিবারের কথা চিন্তা করে বসতে হয় বিয়ের পিঁড়িতে। ছেলেদের ক্ষেত্রেও তার চিত্র ভিন্ন রকম কিছু নয়। অনেক সময় গ্রামের মধ্যে ভালোমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবে পড়ালেখা করতে অনেকে অনীহা প্রকাশ করে। এ ছাড়া ব্যাঙের ছাতার মতো অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে যেখানে শিক্ষার মান একেবারেই নিম্নমানের। অনেকে নিজেকে স্কুল বা কলেজের প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিচয় দেওয়ার জন্যও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে থাকে। শহরে অলিতে-গলিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিল্ডিং ভাড়া নিয়ে লিফলেট, ব্যানার, বিলবোর্ড টাঙিয়ে প্রচার দিয়ে চালাচ্ছে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম। কিন্তু এই শিক্ষায় কতটুকু ফল ভয়ে আনছে তা এখন আর ভাবার বিষয় নয়। শহরের যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো সর্বোচ্চ মানে অবস্থান করছে তাতে প্রবেশ করতে হলে শিক্ষার্থীদের খরচ করতে হয় চাহিদার বাহিরে অর্থ। যারা প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থান করে তাদের শিক্ষা নিয়ে ভুগতে হয় নানা ধরনের ভোগান্তিতে। চাহিদামতো নেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, নেই শিক্ষক। এ ছাড়া পরিবারের আর্থিক দিক বিবেচনায় ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনেককে পড়ালেখা থেকে অবসর নিয়ে বাবার সঙ্গে কাজে সময় দিতে হয়। আর যাদের পরিবার মোটামুটি সচ্ছল তারা অর্থের দিকে দিয়ে এগিয়ে থাকলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মান ও যাতায়াত অসুবিধায় ভোগে। গ্রামের অনেক অঞ্চল আছে যেখানে আজ পর্যন্ত বিদ্যুৎ পৌঁছায়নি। তাই তাদের মোমবাতি বা হ্যারিকেন নিয়ে রাতের পড়ালেখা শেষ করতে হয়। অন্যদিকে চাহিদামতো নেই লাইব্রেরি। নির্দিষ্ট কয়েকটি লেখকের বই ছাড়া প্রয়োজন মতো চেয়ে কোনো বই পাওয়া যায় না। যেখানে বই পাওয়া যায় না সেখানে জ্ঞান সরবরাহ করার বিভিন্ন পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের কাথা ভাবা অনেকটা বোকামির লক্ষণ হিসেবে দাঁড়াবে। মফস্বল এলাকায় যারা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে পড়ে তাদের ভোগান্তি সবচাইতে বেশি। তার সবচাইতে বড় কারণ হচ্ছে প্রাইভেট পড়ার জন্য হাতের কাছে কোনো ভালো মানের শিক্ষক পাওয়া যায় না। যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ার কারণে দূরে গিয়ে পড়ারও তেমন সুযোগ হয়ে ওঠে না।

প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার এমন ভোগান্তি থেকে অবসানের জন্য সরকারে শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরো জোরালো ভূমিকা রাখতে হবে। ছেলেদের পাশাপাশি যাতে মেয়েরা তাদের নিজেদের অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয় সেই সুযোগ করে দিতে হবে। ভালো চাকরির জন্য প্রয়োজন ভালো শিক্ষা। সেই দিক বিবেচনায় মফস্বল এলাকায় প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকারে সুদৃষ্টি বর্তমান সময়ের অন্যতম একটি দাবি।

 

শামীম শিকদার

সাহিত্যিক ও সাংবাদিক

shamimsikder488¦gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads