• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

সংগৃহীত ছবি

মতামত

নির্বাচনী মাঠ সবার জন্য সমতল হোক

  • প্রকাশিত ১২ মে ২০১৮

নানা ধরনের অনিশ্চয়তা ও আশঙ্কা থাকা সত্ত্বেও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আমেজ পাওয়া যাচ্ছে। অনেক হতাশার মধ্যেও জাতির সামনে এক উজ্জ্বল আলোর রেখা দেখা যাচ্ছে। এরই মধ্যে বাতাসে নানা গুঞ্জনও ভেসে বেড়াচ্ছে। জনগণ সেসব গুঞ্জনে কান দিতে চান না। হতাশার কোনো কারণ দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণ দেখতে চান না, বুঝতে চান না। চলতি বছরের শেষ দিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। কিন্তু শুধুই সংবিধানের দোহাই এবং নির্বাচনের জন্য নির্বাচন হলে ভালো হবে কি? সার্থক নির্বাচনের জন্য দরকার সব দলের ও সব মতের লোকের অংশগ্রহণ। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাই মুখ্য, তবে সরকারকে অবশ্যই সহায়ক হতে হবে।

মেয়াদপূর্ণ হওয়ার পর নতুন মেয়াদে নতুন সরকারের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্যে নির্বাচন অপরিহার্য। কিন্তু সেই নির্বাচন কীভাবে হবে? কারা করবে? নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার নিশ্চয়তা থাকবে কি? না আগামী নির্বাচনও ২০১৪ সালের মতো একতরফা হবে? এসব প্রশ্নের হ্যাঁ বা না উত্তর দেওয়ার সময় এখনো আসেনি। নির্বাচনে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে বিএনপির মধ্যেও মতভেদ রয়েছে। দলের একাংশ মনে করে, বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাওয়া ঠিক হবে না। কারণ সেই নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। সব দলকে নির্বাচনে আনতে প্রথমে নির্বাচন কমিশনকে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সব নাগরিক যেন তাদের ভোট তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে স্বাধীনভাবে দিতে পারে, নির্বাচন কমিশনকে যথাযথভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতে হবে। তাহলেই দেশে সুখ-শান্তি ফিরে আসবে এবং জনগণ তাদের প্রাপ্য অধিকার ভোগ করতে পারবে।

একটি সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য এই মুহূর্তে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনা। নির্বাচনের জন্য আবশ্যিক শর্ত, সবার জন্য মাঠ সমতল করা। এ ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ না নিলে শুধু মতবিনিময় সভা করে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। নির্বাচন কমিশনকে আগে থেকেই বাস্তবসম্মত কর্মপরিকল্পনা করে সুষ্ঠু ও সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশের বিষয়টিকে নিশ্চিত করতে হবে। আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যকার আস্থার সঙ্কট দূর করতে হবে। অন্যান্য দলকেও সহযোগিতা করার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে জনগণ পছন্দসই প্রার্থীকে ভোট দেবে, সেই ক্ষেত্রটি তৈরি করার প্রধান দায়িত্ব কিন্তু নির্বাচন কমিশনেরই।

গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতিও বেশিরভাগ দল শ্রদ্ধাশীল নয়। এ কারণেই আমাদের রাজনীতি ও নির্বাচন দিন দিন সঙ্ঘাতপূর্ণ হয়ে উঠছে। প্রায়ই রাজনীতিকরা প্রতিপক্ষকে উৎখাত, নিশ্চিহ্ন বা নির্মূল করার হুমকি দেন। সুস্থধারার রাজনীতিতে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়।

গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত সুষ্ঠু নির্বাচন। একটি সুষ্ঠু, সুন্দর ও নিরপেক্ষ নির্বাচন জাতিকে একটি সুন্দর সংসদ উপহার দিতে পারে। সব দল অংশ নিলে নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন উঠবে না। এ ক্ষেত্রে সরকারি দলের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর বাইরে সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে সর্বজনগ্রাহ্য মতগুলো নিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে নির্বাচন কমিশনকে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি বিতর্কিত হয়, তাহলে দেশ ভয়াবহ পরিণতির মুখে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা দেশবাসীর। মনে রাখতে হবে, রাজনীতিকদের কোনো অবিবেচক সিদ্ধান্ত বা ভুলের কারণে যদি দেশের গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা বিপন্ন হয়ে পড়ে, নির্বাচন ভণ্ডুল হয়ে যায় তাহলে ইতিহাস কিন্তু ক্ষমা করবে না।

রাজনীতি কোনো ব্যবসা নয়। জনগণকে সচেতন, সরব ও সতর্ক হতে হবে যাতে রাজনীতিকরা চাইলেও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে না পারেন। দুর্নীতিবাজ, ঋণখেলাপি, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় ও প্রশ্রয়দাতাদের জনগণ ভোট দেবে না। সব দলই যেন সৎ, যোগ্য ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের মনোনয়ন দেয়; দলগতভাবে বা স্বতন্ত্রভাবে জ্ঞানী-গুণী, সৎ, যোগ্য ও দক্ষ ব্যক্তিরা যাতে নির্বাচিত হতে পারেন সেদিকে জনগণকেই নজর রাখতে হবে। যাদের মধ্যে দেশাত্মবোধ আছে, যারা মানুষের জন্য কাজ করবে এবং মানবিক হবে তারাই যেন সরকারে আসতে পারে সে জন্য সবাইকে কাজ করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে এ-ও ভাবতে হবে, রাজনীতি হবে জনগণের জন্য; ক্ষমতা, মোহ বা ক্ষমতায় টিকে থাকতে নয়। এভাবে জনগণ সচেতন হলে রাজনীতিকরাও ইতিবাচক রাজনীতির পথে ফিরে আসতে বাধ্য হবেন।

মোহাম্মদ আবু নোমান

লেখক : রাজনীতি পর্যবেক্ষক

abunoman1972@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads