• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

জলাবদ্ধতা দূরীকরণের পূর্বশর্ত খাল উদ্ধার

  • মোহাম্মদ অংকন
  • প্রকাশিত ১৩ মে ২০১৮

সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতা দেখা দেওয়া রাজধানী ঢাকায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর একটানা বৃষ্টি হলে তো কোনো কথাই নেই। এ প্রসঙ্গে একটি এলাকার কথাই বলা যাক। বিমানবন্দর হজক্যাম্প থেকে আশকোনা পানিরপাম্প এলাকা পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাটি ও এর আশপাশে যত ছোট-বড় রাস্তা রয়েছে, সবই নিত্যদিন জলাবদ্ধ হয়ে থাকে। মাত্র কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতেই রাস্তাগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। কেননা, এ রাস্তাগুলোর কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থাই সচল নেই। প্রয়োজনীয় ড্রেন আছে কি না তাতেও সন্দেহ রয়েছে। আবার আশপাশের খালগুলো অনেক আগেই ভরাট হয়ে গেছে। সেসব স্থানে বিভিন্ন দোকানপাট, দালানকোঠা ও সরকারি-বেসরকারি নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যা অবশিষ্ট আছে তা ময়লা আবর্জনা ও কচুরিপানায় ভরপুর। বলা চলে, এ রকমই রাজধানীর অধিকাংশ এলাকার খালগুলো এখন ময়লা আবর্জনায় পরিপূর্ণ। খালগুলো ভরাট থাকার কারণে বৃষ্টি হলেই রাজধানীর অধিকাংশ এলাকায় চরম জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। আর সেই সঙ্গে জনগণের দুর্ভোগ বেড়ে যায়।

এখন গ্রীষ্মকাল। সর্বত্র কম-বেশি ঝড়বৃষ্টি হচ্ছে। এদিকে বর্ষাকালও আসন্ন। প্রতিবারের মতো এবার বর্ষায় রাজধানীবাসীকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হবে, তা একপ্রকার নিঃসন্দেহেই বলা যায়। একটা সময় রাজধানীতে প্রায় ৬৫টি খাল ছিল। এখন মাত্র ২৬টি খাল কোনোমতে বেঁচে আছে। মাঝেমধ্যে অভিযান চালিয়ে দুয়েকটি খাল দখলমুক্ত করা হলেও আবারো দখল হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত দখল হচ্ছে। মূলত স্থানীয় প্রভাবশালীরা এসব খাল দখল করছে। তারা পরিবেশ পরিস্থিতির কথা বিবেচনায় আনছে না। এটাও ভাবছে না যে, সবার দুর্ভোগ মানে তাদেরও দুর্ভোগ। বৃষ্টির পানি খালে কিংবা খালি জায়গায় নিষ্কাশিত হতে পারছে না বলেই আজ জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এমতাবস্থায় খালগুলো উদ্ধার না করে জলাবদ্ধতা দূরীকরণের কোনো উদ্যোগই তেমন ফলপ্রসূ হবে না। জলাবদ্ধতা দূরীকরণের পূর্বশর্ত রাজধানীর খালগুলো উদ্ধার করা।

প্রতিবছর রাজধানীতে মূলত তিনটি কারণে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে থাকে। প্রথমত, রাজধানীর আয়তনের তুলনায় বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য প্রায় ১২ শতাংশ জলধারণসক্ষম খালি জায়গা প্রয়োজন। কিন্তু রাজধানীতে যেসব পুকুর, ডোবা, খাল-বিল ছিল সেগুলো এখন আর নেই। সবই ভরাট কিংবা বেদখল হয়ে গেছে। ফলে পানি ধরে রাখার জন্য বর্তমানে মাত্র ২ শতাংশ জায়গা রয়েছে। আর এটিই জলাবদ্ধতার অন্যতম প্রধান কারণ। দ্বিতীয়ত, ঢাকা শহরে এখন মাটি পাওয়া দুষ্কর হয়ে পড়েছে। কোথাও তেমন খালি জায়গা-জমি নেই। পুরো রাজধানীই দালানকোঠা ও রাস্তাঘাট নির্মাণের ইট, বালু, পাথর আর কংক্রিটে আবৃত। ফলে বৃষ্টির পানি যে প্রকৃতিগতভাবে মাটির নিচে যাবে তা একেবারেই অসম্ভব ব্যাপার। তাই বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে রাস্তায় অনায়াসে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। তৃতীয়ত, রাজধানী শহরে যে নিম্নাঞ্চলগুলো ছিল সেগুলো এখন আর নেই। কতিপয় প্রভাবশালী সেগুলোও ভরাট করে অবৈধ বসতি, মিল-কারখানা, ইটভাটা গড়ে তুলেছে। ফলে বৃষ্টির পানি অন্যত্র সরতে না পেরে লোকালয়ের অলিগলির রাস্তাতে ঢুকে পড়ে। এতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। উল্লেখ্য, শহরের কোনো রাস্তাতেই টিপটিপ বৃষ্টির কারণে তেমন কোনো জলাবদ্ধতা হয় না। কিন্তু যখন একটানা ৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়, তখন শহরের উঁচুনিচু সব রাস্তাই জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে যায়।

দেশের অনেকেই মনে করেন, রাজধানীর জলাবদ্ধতার জন্য ঢাকা ওয়াসাই অনেকাংশে দায়ী। কেননা, রাজধানীর খাল সংরক্ষণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করাসহ নর্দমা-ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নতির সব কাজ ঢাকা ওয়াসা করে থাকে। অন্য সংস্থাগুলো এর সঙ্গে তেমন বেশি জড়িত নয় কিংবা স্থায়ীভাবে কাজ করে না। ফলে একটিমাত্র প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ঢাকা ওয়াসা তাদের দায়িত্বগুলো যেনতেনভাবে পালন করে এবং করছে। সমন্বিত কর্তৃপক্ষ না থাকায় রাজধানীবাসী জলাবদ্ধতা থেকে কিছুতেই রেহাই পাচ্ছে না। তাই সমন্বিত কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে শহরের যাবতীয় পানি নিষ্কাশনের যে ২৬টি খাল রয়েছে তা পুনঃপুনঃ দখল ও ভরাটকরণ যেকোনো মূল্যে বন্ধ করতে হবে। যেহেতু ইতোমধ্যে অনেক খালই বিলীন হয়ে গেছে, তাই বাকিগুলো আর কিছুতেই বিলীন হতে দেওয়া যাবে না। আমরা বছরের পর বছর ধরে শুনে আসছি, রাজধানীর খালগুলো উদ্ধার আর পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু কয়েক দিন পরেই সে উদ্যোগ মাটিচাপা পড়ে যায়।

গত বছর বর্ষা মৌসুমে রাজধানীতে দফায় দফায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছিল। কিন্তু একটি বছর অতিক্রম হলেও জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কোনো উদ্যোগই নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কয়েক দিন আগে একটি দৈনিকের খবরে দেখা যায়, রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিয়ে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘এবার একটানা বৃষ্টি হলে তাদের কিছুই করার নেই।’ এতে একটা অদক্ষতার প্রমাণ বহন করে। এ ধরনের দুর্বল সংস্থা দিয়ে আমরা কী করব! রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।

সমাজচিন্তক

md.angkon12@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads