• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

চাই নারীবান্ধব গণপরিবহন

  • সাহিদা সাম্য লীনা
  • প্রকাশিত ১৪ মে ২০১৮

এ কথা কারো অজানা নয় যে, নারীরা ঘরের বাইরে এখনো নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় কোনো গণপরিবহনেও। এখন নারীদের বাইরে চলাচল আগের তুলনায় বেশি। আর প্রয়োজনের তাগিদে তাদের চলাচলও করতে হয় একাই। এই চলার পথেই তারা শিকার হয় নানা রকম যৌন হয়রানির। অভিভাবক সমেত থাকার ফলেও অনেক সময়ে নারী হয়রানির শিকার হয়। প্রায় সময়েই এই যৌন হয়রানিটি নারীদের কাজের পরিবেশে গিয়ে আঘাত হানছে। কেননা, একটি মেয়ে যাচ্ছে স্কুলে, কলেজে বা ইউনিভার্সিটিতে অথবা অফিসে। পথে এই অবাঞ্ছিত বিড়ম্বনা তার জন্য এবং অপরাপর নারীর জন্য অসম্ভব রকম এক বাধা।

অনেক সময় সঙ্গে থাকা অভিভাবকও বুঝতে পারেন না কী ঘটছে। আড়ালে আবডালে এবং পাশে বসার ছুতাটা এমন যে, অভিভাবক টেরই পাচ্ছেন না। আর কোনো নারী তার সঙ্গীকেও বলতে ইতস্তত বোধ করে ওই মুহূর্তে। এটা মারাত্মক এক ব্যাধি বলা যায়। নারীর শরীরে অযাচিত ছোঁয়া এবং যখন যেভাবে সম্ভব এই নির্যাতন ভয়াবহভাবে ঘটছে। কিন্তু এই বিষয়টি শুধু আড়ালেই থাকছে। তাছাড়া ক’জনইবা খোঁজ রাখছে নারীর প্রতি এই অবমাননার খবর।

বিগত দুই যুগেরও অধিক সময় নারীরা গার্মেন্ট শিল্পে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেক চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত নারী এবং কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী আছেন, যাদের চলাচলের প্রধান মাধ্যম গণপরিবহন। অল্প ভাড়ায় যাতায়াতে বড় শহরগুলোতে এতে অনেক সুবিধা বলা যায়। তবে সব স্থানেই নারী স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারে না অযাচিত কিছু ঘটনার জন্য। সব জায়গার চিত্র একই! মফস্বল শহরের কথাই বলি; যে মেয়েটি সবে স্কুল পেরিয়ে কলেজে পদার্পণ করল তাকে যেতে হচ্ছে শহরের ভালো একটি কলেজে। কলেজটি দূরে হওয়াতে তাকে বাস অথবা সিএনজিতে চড়তে হচ্ছে। বাসে উঠতে-নামতে হেলপারের হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে মেয়েটির স্পর্শকাতর স্থান। হেলপারের সহযোগিতার নামে কারসাজির শিকার হচ্ছে মেয়েটি। অসহায় নীরব মেয়েটি তা সয়ে যাচ্ছে। তার ভেতরে তৈরি হচ্ছে এক গুমরে ওঠা ঘৃণা। বিতৃষ্ণা জাগে তার মধ্যে চলাচলে তখন; সেদিন হতে। যাত্রীদের হয়রানিও এক্ষেত্রে কম নয়। নারীর পাশে বসতে পেরে খুব খুশি হয় কেউ কেউ। যদি সে নারী সুন্দরী হয় তো কোনো কথাই নেই, আরো গায়ে ঘেঁষে যত পারে শরীরকে লাগানো এবং হাতের কনুই দিয়ে বুকের দিকে স্পর্শ করা; মনে হবে তিনি যেন সেই নারীযাত্রীর অপর কোনো তৃতীয় জন! তিনি যত পারছেন সেই অসহায় নারীর প্রতি তার বিকৃত কামনার লেলিহান শিখা প্রেরণ করছেন। এভাবে হীন ইচ্ছা চরিতার্থ করে একশ্রেণির পুরুষ! সাধারণত পুরুষ যাত্রীর পাশে অপর নারী যাত্রী হলে একটু আলগা হয়ে বসার কথা। তা না করে ওইভাবে ঠেসে বসার উদ্দেশ্যটা কী হতে পারে? একটা বাসে দুজনের সিট হলে অনুমান করা যায়; ওই অবস্থা হতে কি নারীর আর কোনো দিকে সরে বসার সুযোগ থাকে!

পাশে বসা পুরুষ এমনভাবে ঘনিষ্ঠ হয় যাতে মনে হয় যে, সে তার স্বামী বা এমন কিছু। ঘটনাক্রমে, নারীটি যদি আধুনিকমনা, সাহসী হয়ে থাকে এবং আওয়াজ তোলে তাহলে পুরুষ মুহূর্তেই তার রূপ পাল্টায়। বলে, আমি আমার সিটে বসে আছি, এভাবে আপনার যেতে সমস্যা হলে প্রাইভেট গাড়ি করে যান ইত্যাদি! জনতার মার খাবার ভয়ে তারা নানা রকমের উছিলায় উক্তি দেন তখন। বাধ্য হয়ে নারীকে এভাবে সময় পার করতে হয়, যতক্ষণ তিনি তার গন্তব্যে না আসেন। নামার সময় পাছা বা কোমরে পুরুষ ভণ্ডের যেকোনো উছিলায় হাত আবার হেলপারের কাণ্ড তো রয়েছেই বাম দিকে পা দেন বলেই! এভাবেই চলছে দিনের পর দিন।

নারীর শালীনতার কথা বলা হয়। বোরকা, হিজাব পরা নারীও কখনো এমন অসভ্যতার মুহূর্ত ভোগেনি তা নয়। একশ্রেণির অমানুষ বোরকা হিজাব পরা নারীদের বোকা ভেবে তাদেরও নিষ্কৃতি দেয় না। কিছুদিন আগে বোরকা খুলে গর্ভবতী নারীকে ধর্ষণ অতঃপর হত্যা করে ফেলে যায় দুষ্কৃতকারীরা।

নারীর সিটের পাশে এসে দাঁড়ানো আরেক বদ অভ্যাস। ট্রেনগুলোতে এই চিত্র খুব দেখা যায়। যদিও পুরুষ সাইডে জায়গা আছে তথাপিও ইচ্ছাকৃত নারীর দিকে দাঁড়ানো এই মনোভাব কখনো কাম্য হতে পারে না। এভাবে হাজার নারী নীরবে নির্যাতিত হচ্ছে।   

নারীবান্ধব গণপরিবহন এখন সময়ের একমাত্র দাবি। যে বাসে ড্রাইভার হতে শুরু করে হেলপার ও যাত্রী সবাই হবে নারী। ড্রাইভারের যদিও এসব অপকর্মে থাকার সুযোগ থাকে না, অর্থাৎ গাড়ি চালানোয় মগ্ন থাকেন তাই নারী ড্রাইভার বেশি না পাওয়া গেলে নারী হেলপার বেশি বেশি নিয়োগ ও ট্রেনিং দেওয়া প্রয়োজন। অনেক স্বল্প শিক্ষিত নারী আছেন যারা চাকরির খোঁজ করেন। এমন নারীরা গাড়ির হেলপার হতে পারেন। তবে তার আগে নারীবান্ধব গাড়ি নামানোর জন্য নারীদেরও ঐকান্তিক প্রচেষ্টা কাম্য। সেই সঙ্গে পরিবহন মালিক সমিতিও বড় উদ্যোগ নিতে পারে। যে হারে নারী যাত্রী বাড়ছে সেখানে তাদের লাভ ছাড়া লস হওয়ার শঙ্কা কমই হবে। নারীর সঙ্গে ছোট বয়সের যাত্রীও  থাকছে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী। তার দৃষ্টি আকৃষ্ট হলে এই মহা ঝামেলা হতে মুক্তি পেতে পারে নারীরা। খুলে যেতে পারে নারীর জন্য আরেকটি নতুন দিগন্ত।

সাংবাদিক

acholfeni@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads