• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

মতামত

অমিত সম্ভাবনা : কুশলী উদ্যোগ

  • ইউসুফ শরীফ
  • প্রকাশিত ১৬ মে ২০১৮

মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার অন্যতম প্রধান চিত্রটি দারিদ্র্য-হার হ্রাসের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। রাজধানী ও বড় শহরগুলো ছাড়াও গ্রামাঞ্চলে চেনা-জানা পরিবেশে নজর ফেরালে পরিবর্তনের আভাস লক্ষ করা যায়। বিশেষ করে, বিশ শতকের শেষার্ধে সমাজে নিম্নবিত্ত বলে চিহ্নিত স্তরের একটা অংশে অনেকটা স্পষ্টভাবেই এই পরিবর্তন দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। পরিবর্তন সম্ভব হয়েছে মূলত তৈরি পোশাক ও জনশক্তি রফতানি— এই দুটি খাত সম্প্রসারিত হওয়ার কারণে। সর্বোপরি দারিদ্র্য বিমোচনকে প্রাধান্য দেওয়ায় দারিদ্র্য-হার হ্রাসের অগ্রাধিকারটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে। একুশ শতকের শুরু থেকে দেশে দারিদ্র্য উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেতে শুরু করে। ২০০০ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং ২০১৪ সালে তা ২৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে আসে। ওই সময় পর্যন্ত দারিদ্র্য পরিস্থিতির এই তথ্য বিবিএসের। দারিদ্র্য বিমোচনের এই হার ভালো, তবে সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে এটাকে যথেষ্ট মনে না করার মধ্যেই দারিদ্র্য আরো নিচে নামিয়ে আনার সাফল্য নির্ভর করছে। সে জন্য এ ক্ষেত্রে আরো অনেকদূর ও অনেক গভীরাশ্রয়ী উদ্যোগ নিয়ে অগ্রসর হতে হবে। অর্থনীতিবিদদের মতে, চরম দারিদ্র্য নিরসনে কাঠামোগত কিছু দুর্বলতা রয়েছে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা চালু করা এখনো সম্ভব হচ্ছে না। সঙ্গত কারণেই এসব দুর্বলতা কাটাবার উদ্যোগ নিতে হবে। তারপরও বলতে হয়, দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে এই চিত্র সর্বোপরি উৎসাহব্যঞ্জক।

প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, নিম্নবিত্ত ছাড়া সমাজের অপর যে স্তরটিতে মোটা দাগে আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, সেটা নিম্নস্তরের অতি-তৎপর উচ্চাকাঙ্ক্ষী অংশের। বিশ শতকের সত্তরের দশকের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ব্যবসা-বাণিজ্য, রাজনীতি, লাভজনক চাকরি ইত্যাদির সুবাদে এই শ্রেণির বিত্ত-বেসাত বৃদ্ধি পেয়েছে। বিত্ত-বেসাত বৃদ্ধি দোষের কিছু নয়, যদি তা অর্জিত হয় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় ও ক্রমবর্ধমান হারে। এটা না হওয়ার প্রত্যক্ষ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় সার্বিক জনকল্যাণ ও গণ-অধিকারের মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পিছিয়ে পড়ে নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত স্তরের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। এই প্রবণতা ওই সময়কালে স্পষ্টতই লক্ষ করা গেছে। এতে করে সমাজের নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত স্তরে দারিদ্র্য প্রলম্বিত হয়েছে, মানুষ দুর্ভোগের শিকার হয়ে অব্যাহতভাবে পীড়িত হয়েছে।

সুবিধাভোগী ওই শ্রেণির অধিকাংশই নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে সরাসরি উচ্চবিত্তের স্তরে নিজেদের উন্নীত করতে পেরেছে। রাজনীতি, ব্যবসায় কিংবা চাকরিজনিত অবস্থানকে লাভজনক করে তোলায় এই শ্রেণির পারদর্শিতা জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করেছে। পাশাপাশি সার্বিক অর্থনৈতিক সম্ভাবনার কর্ষণও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। তাদের অস্বাভাবিক অর্থনৈতিক তৎপরতায় সমাজে মধ্যবিত্ত শ্রেণির যথাযথ বিকাশ ঘটছে না। অনিয়ম-দুর্নীতির যে জোয়াল সমাজের বিভিন্ন স্তরে চেপে বসে আছে, তার মূল কারণটাও এখানেই নিহিত রয়েছে। সত্তর দশকের শুরুতে আমরা এই শ্রেণির যাদের ওই অবস্থানে দেখেছি, আজকের প্রেক্ষাপটে তারা সেই অবস্থানটির কথা সম্ভবত কল্পনাও করতে পারবেন না। বিত্তের নিরিখে তাদের সুবিধাবাদী উল্লম্ফন ঘটায় মধ্যবিত্তের স্তরটাতে তাদের অবস্থান বা স্থিতি ছিল না।

প্রকৃতপক্ষে দেশে মধ্যবিত্তের স্তর বলে কিছুর স্পষ্ট অস্তিত্বও ছিল না এজন্যই যে, এ দেশে সেই ব্রিটিশ আমল থেকেই এই স্তরের দৃশ্যগ্রাহ্য বিকাশ ঘটেনি। সুলতানি আমল থেকে শুরু করে মোগল আমলের মধ্যপর্যায়ে এসে মুসলিম মধ্যবিত্ত সমাজের যাত্রা শুরু হয়েছিল- সেটা ব্রিটিশ আমলের শুরুতে আকস্মাৎ অধঃপতিত হয় ঔপনিবেশিক শাসক-চক্রের বিভিন্ন বিধিমালা ও প্রতিবেশী সমাজের বিদ্বেষ-বৈরিতাপ্রসূত নানা তৎপরতায়। অধঃপতিত হয়ে তারা নেমে আসে নিম্নবিত্ত স্তরের চরম দুর্ভোগ-আক্রান্ত পর্যায়ে। বাংলাদেশের জনজীবনে দারিদ্র্যের সূত্র-উৎস অনুসন্ধান করতে গেলে এই বিষয়টি সামনে আসে। দারিদ্র্য বিমোচনে বিলম্ব বা ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ খতিয়ে দেখতে গেলে আলোচনার বিষয় হবে সমাজের ওই সুবিধাভোগী শ্রেণির অনৈতিক, অস্বাভাবিক মনোভাব ও তৎপরতা। দারিদ্র্য বিমোচনের পদক্ষেপ সফল ও স্থায়ী করার জন্য শুরুতে এই বিষয়টিও সামনে রাখতে হবে।

দুই.

চার বছর আগের দুটি মন্তব্য প্রসঙ্গক্রমে এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে সুইজারল্যান্ডের তৎকালীন রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ফৎস একটি ইংরেজি দৈনিকের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে কিছু জরুরি কথা বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ হতে চায়। এতে প্রয়োজন সম্পদ সৃষ্টি। বাংলাদেশ গত ১৫ বছর ধরে ৫.৫% বার্ষিক ক্রমবৃদ্ধি অর্জন করে আসছে। কিন্তু জনসংখ্যার একটা বিশেষ অংশ শ্রেণি অবস্থান, শিক্ষার স্তর ও সুবিধাবঞ্চিত থাকায় এই বৃদ্ধি উপকারে আসছে না।’ একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে সুইস সহায়তার লক্ষ্য সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো— সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে শুধু সহায়তা দেওয়া নয়, বরং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে নিজস্ব অংশপ্রাপ্তিতে তাদের ক্ষমতায়ন ঘটানো।’ বাংলাদেশ কী করে সুইজারল্যান্ডে রফতানি বৃদ্ধি করতে পারে, এরকম এক প্রশ্নের উত্তর প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, ‘আমি মনে করি, প্রথমেই আমাদের এই ভাব-মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে, যাতে সাইক্লোন ও ধ্বংসকাণ্ডের বাইরে গার্মেন্ট শিল্পে যে আরেক বাংলাদেশ আছে তার কথা আমরা বলি, তাকে বর্হিবিশ্বে তুলে ধরা যায়।’ তিনি আরো স্পষ্ট করে বলেছিলেন, ‘রফতানি বৃদ্ধির জন্য আমি মনে করি, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো— বাংলাদেশের ভাব-মর্যাদা তুলে ধরা। সত্যি কথা বলতে কি, ইউরোপে আমরা শুনি— রানা প্লাজা দুর্ঘটনা, সাইক্লোন, আইনের শাসন ইত্যাদি।’ তিনি এ কথাও বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশ গুটিকয়েক দেশের অন্যতম, যাদের সঙ্গে সুইজারল্যান্ডের বাণিজ্যিক ভারসাম্য ইতিবাচক। বার্ষিক ৫০০ মিলিয়ন ডলার বাণিজ্যের মধ্যে বাংলাদেশ সুইজারল্যান্ডে রফতানি করে ৩৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য এবং আমরা বাংলাদেশে রফতানি করি ১৫০ মিলিয়ন ডলারের পণ্য।’

সুইস রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যে যে তাগিদ, তার পেছনে রয়েছে বাংলাদেশের বাস্তব সম্ভাবনা কর্ষণের জরুরি প্রসঙ্গ। তিনি নিশ্চিত, সাইক্লোন, কারখানা ধস-ধ্বংসকাণ্ড, আইনের শাসন ইত্যাদি প্রসঙ্গের বাইরে রয়েছে আরেক বাংলাদেশ— অমিত সম্ভাবনার বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপরই তিনি জোর দিয়েছিলেন। বাংলাদেশে তৎকালীন জাপানি রাষ্ট্রদূত শিরো সাদোশিমা ২০১৪ সালের মে মাসের শেষদিকে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ডিকাবের টক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে অগ্রগামী অনেক খাত রয়েছে বলে উল্লেখ করে বলেছিলেন, শুধু তৈরি পোশাক নয়, অন্যান্য বিষয়েও বাংলাদেশের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি দুটি বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেছিলেন, নিরাপত্তার নিশ্চয়তা থাকলে এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতার নিরসন হলে বাংলাদেশে ব্যাপক জাপানি বিনিয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, তিনি বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের লক্ষ্য করে বলেছিলেন, পূর্বের দেশগুলো বিশেষ করে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের অনেক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশ তার পশ্চিমমুখী মানসিকতার পরিবর্তন করে এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারে।

শুধু সুইজারল্যান্ড বা জাপানের রাষ্ট্রদূতই নন, আরো অনেক দেশের রাষ্ট্রদূত, আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক, খ্যাতিসম্পন্ন অর্থনীতিবিদও বাংলাদেশের সম্ভাবনার কথা বলেছেন এবং কমবেশি একই রকম তাগিদ দিয়েছেন। দেশের ভেতরে অর্থনীতিবিদদের পক্ষ থেকেও এরকম তাগিদ উচ্চারিত হয়েছে। তাগিদ উচ্চারণ যথেষ্ট নয়, যদি না তা আমলে নিয়ে যাদের উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত, তারা তা না করেন। বাংলাদেশে আর যাই থাকুক, যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের নজির খুব বেশি নেই বললেই চলে। এ কারণে যতটা অগ্রসর হওয়ার সুযোগ রয়েছে, বাস্তবে ততটা এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বলতে হয়, সম্ভাবনার পুরো বাস্তবায়ন এখনো বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষমান।

তিন.

অর্থনৈতিক অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অমিত সম্ভাবনার কথা গত দেড়-দুই দশকে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞ পর্যায় থেকে নানা উপলক্ষে যথার্থই নির্দেশিত হয়েছে। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্য থেকে বাংলাদেশকে স্পষ্টভাবে আলাদা করে দেখার ইতিবাচক প্রবণতা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই সময়টাতে লক্ষ করা গেছে। রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে গড়ে তোলার কথা বিভিন্ন সময়ে বলা হয়েছে। তবে এই বলাটাকে যথার্থ উদ্যমে ও উদ্যোগ-আয়োজনে বাস্তব ক্ষেত্রে সমর্থিত করার বিষয়টি অতীতে যথেষ্ট বলে মনে হয়নি। অর্থনৈতিক সম্ভাবনার এই নজির প্রথমে স্পষ্ট হয়েছে যে শিল্পে, সেই তৈরি পোশাক শিল্পকে মজবুত ভিত্তিতে দাঁড় করানো, রফতানি বাজার ধরে রাখা, সম্প্রসারিত করা বিশ্ব-বাস্তবতায় কঠিন না হলেও এসব ক্ষেত্রে অতীতের ব্যর্থতা হতাশাজনকই বলতে হয়।

শত শত বিলিয়ন ডলার আয়ের এই শিল্পকে যেনতেনভাবে চালাবার সময় শেষ হয়ে গেছে তখনই, যখন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রফতানিতে অন্যান্য দেশকে টপকে যেতে শুরু করে। আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্টরা তখন হয় ইতিবাচক এই প্রবণতা যথাযথভাবে হূদয়ঙ্গম করেননি, না হয় উৎপাদন-ব্যয় সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এ বিষয়ে ততটা মনোযোগ দেননি। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পকে অদূর ভবিষ্যতে যদি বড় ধরনের সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়, তার একটা বড় কারণ এখানটাতেই সন্ধান করতে হবে। সরকারও ওই সময়টাতে তৈরি পোশাক শিল্পখাতে দূরদর্শী বা সচেতন উদ্যোগ-আয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে চালু করতে পেরেছে, এটা বলার সুযোগও কম।

তৈরি পোশাক ও শ্রমশক্তি রফতানি ছাড়াও বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে গত অন্তত দুই-আড়াই দশক ধরে এ দেশের মেধাবী তরুণরা অড-জবের বাইরেও উল্লেখযোগ্য হারে তাদের স্থান করে নিতে শুরু করেছে। দেশে তাদের গবেষণা ও কর্মতৎপরতার ক্ষেত্র প্রসারিত করা গেলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অনেকাংশে সফল অগ্রগতি সম্ভব হতে পারে। চীন, ব্রাজিল এবং কোনো কোনো সেক্টরে ভারতও এ কাজটি করে নিজেদের অর্থনৈতিক অবস্থান মজবুত করার দিকে দ্রুত এগিয়ে গেছে। সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিশেষ যোগ্যতাসম্পন্ন বাংলাদেশিদের সে দেশে কর্মসংস্থানের সম্ভাবনার কথা বলেছিলেন। তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশের তরুণরা ব্যাপক সাফল্য দেখাতে সক্ষম হয়েছে ও হচ্ছে। এখনই সময় দেশে তথ্য-প্রযুক্তি শিক্ষায় বাস্তবোচিত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বাংলাদেশের সম্ভাবনার মূল নিহিত রয়েছে যে জনশক্তিতে, সেই শক্তিকে যথেষ্ট যোগ্য-দক্ষ করে গড়ে তোলার পরিকল্পিত ও উপযুক্ত উদ্যোগ সরকারি-বেসরকারি তরফে যথেষ্ট উৎসাহব্যঞ্জক, এমনটা বলা গেলে তা হতো জাতির জন্য সুখকর। সার্বিকভাবে দারিদ্র্য নিরসনের ক্ষেত্রে এসবও বড় বাধা, সন্দেহ নেই।

রফতানির চলমান খাতগুলোকে উৎপাদন-মান ও বিশ্ব-বাজার লাভ উভয় দিক দিয়ে মজবুত ভিত্তিতে দাঁড় করানোর পাশাপাশি অপ্রচলিত বা সম্ভাব্য নতুন খাতের উদ্বোধন ঘটানো এবং প্রাসঙ্গিক নীতি-নিয়ম বা বিধিমালা সক্রিয় এবং সবার বেলায় সমভাবে প্রয়োগ নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কার্যকর সচেতনতার অভাবও কম নেই। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা দেশের দারিদ্র্যও খরাতাড়িত জমিনের মতো, যেখানে ক্ষুদ্রঋণ বা ক্ষুদ্র বিনিয়োগের পানি ছিটিয়ে ফসল ফলানোর মাধ্যমে স্থায়ীভাবে দারিদ্র্য নিরসন সম্ভব- এমন মনে করা বাস্তবসম্মত নয়। বৃহৎ আকারে সম্ভাবনাময় খাতগুলোতে ব্যাপক বিনিয়োগে শিল্প-কারখানা গড়ে তুলে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটানো গেলে দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি সহজতর করা খুবই সম্ভব। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অমিত সম্ভাবনা যথাযথ উদ্যমে-উদ্যোগে কর্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হলে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত রাখার বিকল্প নেই।

কথাসাহিত্যিক, সাংবাদিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads