• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
আনন্দময় হোক শিশুর পরিবেশ

সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শিশুমনে বিচার-বুদ্ধির উদ্রেক হয়

আর্ট : রাকিব

মতামত

আনন্দময় হোক শিশুর পরিবেশ

  • প্রকাশিত ২৭ মে ২০১৮

শিশুর যথাযথ বিকাশের জন্য প্রয়োজন একটি আনন্দময় পরিবেশ। এই পরিবেশ তৈরিতে প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। শিশুর জন্য আনন্দময় পরিবেশ বলতে বোঝায় এমন একটি পরিবেশ যেখানে প্রতিটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো ঘরে-বাইরে সব মহলেই তা উপেক্ষিত। শিশুর জন্য আনন্দময় পরিবেশ তৈরিতে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। একটি দায়িত্বশীল পরিবার শিশুর সার্বিক বিকাশের সূতিকাগার হিসেবে বিবেচিত। প্রতিটি পরিবার যেন শিশুদের সুরক্ষা দিতে পারে এটা অতীব জরুরি। শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে শিশু অপহরণ, শিশুহত্যা, শিশু চুরি, গাছে বেঁধে শিশু নির্যাতন, কন্যাশিশু ধর্ষণ, পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যু ইত্যাদি অনাকাঙ্খিত ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে বলে সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন। শিশুরা আবেগতাড়িত। শিশুরা মায়াবী। আজকের শিশু যদি পরম যত্নে লালিত পালিত হয় তবে তারাই হবে দেশের রত্ন। দেশটি সোনার দেশ হতে বেশিদিন লাগবে না। শিশুরা অনুকরণপ্রিয়। তারা দেখে দেখে অনেক কিছু শিখে থাকে। বাবা-মায়ের সব কর্মকাণ্ড কিংবা তার চারপাশের সব কিছু শিশুরা মনোযোগের সঙ্গে লক্ষ্য করে। বাবা-মায়ের সান্নিধ্য শিশুর চিত্তে আনন্দানুভূতি তৈরি করে। তারা হয়ে ওঠে মিশুক প্রকৃতির। জীবন চলার পথের জটিলতাগুলো এ ধরনের শিশুরা সহজেই অতিক্রম করতে পারে। পরিবারের পরে শিশুর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিদ্যালয় ও তার চারপাশের বন্ধুবান্ধব। বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির ভালো-মন্দ দুইরকম ব্যবহারই করছে আমাদের শিশুরা। যেমন পর্নোগ্রাফি আজ অতি সহজলভ্য একটি বিষয়। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশুরা। এর ধকল তারা সইতে পারছে না। কী করবে আর কী করবে না তাই তারা বুঝতে পারছে না অনেক সময়। তাদের নৈতিক দিক, চারিত্রিক দিক দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে। সামাজিক অবক্ষয় প্রকটতর হচ্ছে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে থাকা অনিয়ম দূর করতে হলে শিশুদের দিতে হবে যথাযথ দিক নির্দেশনা। শিশুরা অনেক ক্ষেত্রে অবুঝ। তাদের মনোজগৎকে বুঝতে হলে সময় দিতে হবে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। শিশুটির বয়সে যা নতুন তার ভালো-মন্দ তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে। ধমক বা শাস্তি দিয়ে তাদের মনকে ছোট করা ঠিক নয়। শিশুর মনের অবস্থা না বুঝে তার ওপর কোনো কাজ চাপিয়ে দেওয়া সমীচীন নয়। পড়ালেখার প্রতিযোগিতায় নেমে অনেক শিশুর শৈশবকালটা আজ মলিন হতে চলেছে। ফলে অনেক শিশুকে দেখা যায় যে বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে খেলাধুলায় মেতে থাকার কথা সেই বয়সটাতে ঘরের বারান্দা বা ব্যালকনিতে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে। বাবা-মা হয়তো সান্ত্বনা খুঁজে পান তার শিশু সন্তানটি শান্ত প্রকৃতির কিন্তু বাস্তবতা হলো সে (শিশুটি) তার মনের প্রফুল্ল হারিয়ে ফেলেছে। চারপাশের পরিবেশটা তার কাছে নিরানন্দে ভরা। সমবয়সীদের সঙ্গে তার তেমন বন্ধুত্ব হয় না। ধীরে ধীরে সে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। আমাদের দেশের জনসংখ্যার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ শিশু এবং তাদের সবার অবস্থা এক রকম নয়। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, মন্দার কবলে পড়ে অনেক শিশুকে বিভিন্ন কর্মে নিয়োজিত হতে হয়। বয়স কম থাকায় অনেক শিশু ন্যায্য মজুরি পায় না। কর্মজীবী শিশুরা কিছু আয় রোজগার করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে চেষ্টা করে নিজের শৈশবকে জলাঞ্জলি দিয়ে। এই বয়সে অনেকে আবার বিভিন্ন নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে। এদের অধিকাংশকে দেখা যায় কখনো বিদ্যালয়মুখী হয়নি অর্থাৎ শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত। শিশুদের দ্বারা ভালো-মন্দ দুধরনের কাজ করানো হচ্ছে। যদিও পড়ালেখা বহির্ভূত কোনো ধরনের কাজে তাদের নিয়োজিত থাকার কথা নয়। তাই শিশুর বিবেক ও নৈতিক চেতনাবোধের জায়গাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ সম্পর্কে সুইস বিজ্ঞানী জিন পিয়াজে বিভিন্ন বয়সের শিশুদের পর্যবেক্ষণ করে তাদের বিবেকবোধ সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য দেন। তিনি মনে করেন চার/পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশু বড়দের শাসন ও পরিচালনায় তাদের প্রদত্ত নিয়ম-কানুন ও মূল্যবোধের প্রতি সাড়া দেয় এবং এর ভিতর দিয়েই সে ‘ভালো-মন্দ’ সম্পর্কে ধারণা লাভ করে এবং এর ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তী সময় তার আদর্শবোধ গড়ে ওঠে। পাঁচ থেকে আট বছর সময় শিশু বড়দের শাসন, শাস্তি ও পুরস্কারের মধ্য দিয়ে ন্যায় অন্যায়বোধ শেখে। নয় থেকে তের বছর সময়ে শিশু বাবা-মা ও শিক্ষকের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে গিয়ে তাদের সঙ্গে নিয়ম-কানুন মানতে সহযোগিতা করে। সামাজিক চেতনা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শিশুমনে বিচার-বুদ্ধির উদ্রেক হয়। কৈশোরোত্তর কাল অর্থাৎ ১৩ থেকে ১৮ বছর বয়স প্রসঙ্গে পিয়াঁজে লিখেছেন- শিশু নিজের আচরণকে নৈতিক ও আদর্শের দিক থেকে নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ নিয়মের প্রতিবাধ্যতার প্রয়োজন অন্তর হতে অনুভব করে। ফলে শিশু স্বায়ত্তশাসন লাভ করে (অধ্যাপক শাহীন আহমেদ রচিত ‘শিশু বর্ধন, বিকাশ, পরিচালনা ও পারিবারিক সম্পর্ক’)। সর্বোপরী স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দ্বন্দ্ব, পরকীয়া, বিবাহ-বিচ্ছেদ, সন্তাদের প্রতি বাবা-মায়ের অতিরিক্ত শাসন, অবহেলা, দরিদ্রতা, কুশিক্ষা ইত্যাদি নানা কারণে শিশুর নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয়। শিশু হয় সঙ্কিত। আজ সমাজের যে শিশুরা চোর, ছিনতাইকারী, মাস্তান, প্রতারক বলে পরিচিত তাদের প্রত্যেকের জীবনে এক-একটি কাহিনী আছে। কাহিনীর অন্তরালে গেলে দেখা যাবে তাদের ভিতরে ছিল শিশুসুলভ সরলতা, নিষ্পাপ চাহনি। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে জীবনের জয়গানে তারা আজ পরাজিত হয়ে সমাজে হয় ধিকৃত। তাইতো গানের কথায় আসে- ‘পাপকে ঘৃণা কর পাপীকে নয়’।

ইফতেখার হোসেন সিদ্দিকী

নিবন্ধকার

iftekhar2311@gmail.com

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads