• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

মতামত

স্মরণ

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

  • প্রকাশিত ২৮ মে ২০১৮

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বাঙালি চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালের ২৯ ডিসেম্বর তৎকালীন ময়মনসিংহ জেলার কিশোরগঞ্জ মহকুমার কেন্দুয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাবা তমিজউদ্দিন আহমেদ ছিলেন পুলিশের দারোগা (সাব-ইন্সপেক্টর), মা জয়নাবুন্নেছা গৃহিণী। নয় ভাইবোনের মধ্যে জয়নুল আবেদিন ছিলেন সবার বড়। পড়াশোনায় হাতেখড়ি পরিবারের অভ্যন্তরীণ পরিমণ্ডলেই। জয়নুল আবেদিন খুব ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকতে পছন্দ করতেন। মাধ্যমিক (ম্যাট্রিক) পরীক্ষার আগেই স্কুলের পড়ালেখা বাদ দিয়ে কলকাতায় চলে যান এবং মায়ের অনুসমর্থনে ১৯৩৩ সালে গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্টসে ভর্তি হন। ১৯৩৮ ড্রইং অ্যান্ড পেইন্টিং ডিপার্টমেন্ট থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।

বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের তিনিই পুরোধা। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটসের (বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউ) তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। অসাধারণ শিল্প-মানসিকতা ও কল্পনাশক্তির জন্য জয়নুল আবেদিন শিল্পাচার্য উপাধিতে ভূষিত হন। ১৯৪৩ সালের দুর্ভিক্ষ চিত্রমালার জন্য তিনি আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেন। এ ছাড়া তার আরো কিছু বিখ্যাত শিল্পকর্ম হলো— ১৯৫৭-এ নৌকা, ১৯৫৯-এ সংগ্রাম, ১৯৭১-এ বীর মুক্তিযোদ্ধা, ম্যাডোনা, সাঁওতাল রমণী, ঝড়, কাক, বিদ্রোহী প্রভৃ‌তি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তার দীর্ঘ দুটি স্ক্রল ১৯৬৯-এ অঙ্কিত ‘নবান্ন’ এবং ১৯৭৪-এ অঙ্কিত ‘মনপুরা-৭০’ জননন্দিত দুটি শিল্পকর্ম। তিনি চিত্রাঙ্কনের চেয়ে চিত্রশিক্ষা প্রসারের জন্য বেশি সময় ব্যয় করেছেন। অনুমান করা হয় তার চিত্রকর্মের সংখ্যা তিন হাজারের বেশি।

জয়নুল আবেদিনের আগ্রহে ও পরিকল্পনায় সরকার ১৯৭৫-এ নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে লোকশিল্প জাদুঘর ও ময়মনসিংহে জয়নুল সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করে। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরে সংগৃহীত তার শিল্পকর্মের সংখ্যা ৮০৭। বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সংগ্রহে আরো প্রায় পাঁচশ চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। তার পরিবারের কাছে এখনো চার শতাধিক চিত্রকর্ম সংরক্ষিত। ময়মনসিংহের সংগ্রহশালায় রক্ষিত চিত্রকর্মের সংখ্যা ৬২। এ ছাড়া পাকিস্তানসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংগ্রহশালায় তার চিত্রকর্ম সংরক্ষিত আছে। তার নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে একটি গ্যালারি রয়েছে। বিশ্বের প্রাচীনতম ও সর্ববৃহৎ ব্রিটিশ নিলামকারী প্রতিষ্ঠান বনহামসে তার স্কেচ বিক্রয় হয়। দীর্ঘ ছ’মাস ফুসফুসের ক্যানসারে ভুগে ১৯৭৬ সালের ২৮ মে ৬২ বছর বয়সে চিত্রশিল্পী জয়নুল আবেদিনের মৃত্যু হয়। মৃত্যুর মাত্র ক’দিন আগে হাসপাতালে শুয়ে তিনি নিজস্ব ঢঙে শেষ ছবিটি আঁকেন— দুটো মুখ।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads