• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
‘শতাব্দী পেরিয়ে’ এবং ইতিহাসের সত্যাসত্য

সব সময় তার নাম এসেছে ‘এবং রনো’ হিসেবেই

আর্ট : রাকিব

মতামত

‘শতাব্দী পেরিয়ে’ এবং ইতিহাসের সত্যাসত্য

  • শাহ আহমদ রেজা
  • প্রকাশিত ০৮ জুন ২০১৮

১৯৬০-এর দশকে ‘পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নে’র সাধারণ সম্পাদক হিসেবে যাত্রা শুরুর পর বিশেষ করে মজলুম জননেতা মওলানা ভাসানীর অনুসারী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, শ্রমিক ফেডারেশন, কৃষক সমিতি এবং কমিউনিস্ট বিপ্লবীদের পূর্ব বাংলা সমন্বয় কমিটির মতো বিভিন্ন দল ও সংগঠনে নেতৃত্বের অবস্থানে থেকেছেন তিনি। কিন্তু কোনোটিতেই প্রধান নেতা হতে পারেননি। প্রধান নেতার অবস্থানে থেকেছেন কাজী জাফর আহমদ এবং রাশেদ খান মেনন। এই দুজনের নেতৃত্বেই তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টিতে বিভক্তি ঘটেছে, ছাত্র ইউনিয়ন খণ্ডিত হয়েছে। স্বাধীনতার পরও ভাসানী ন্যাপের ভাঙনে নেতৃত্ব দিয়েছেন কাজী জাফর এবং রাশেদ খান মেনন। তাদের নেতৃত্বেই লেনিনবাদী কমিউনিস্ট পার্টি (১৯৭২) এবং ১৯৭৪ সালের নভেম্বরে ইউনাইটেড পিপলস পার্টি (ইউপিপি) নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠিত হয়েছে। কাজী জাফর ইউপিপির সাধারণ সম্পাদক এবং রাশেদ খান মেনন যুগ্ম সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু কমরেড রনোর কোনো সুযোগ মেলেনি। তিনি জাফর-মেননের ‘সঙ্গে’ থেকেছেন। এসব উপদলীয় কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে কারা রয়েছেন— এমন জিজ্ঞাসার জবাবে বলা হয়েছে, কাজী জাফর, মেনন ‘এবং রনো’! এভাবে বিস্তারিত পর্যালোচনায় দেখা যাবে, যথেষ্ট প্রতিভাধর তাত্ত্বিক হিসেবে ‘নাম-ডাক’ থাকলেও রনো কখনো প্রাধান্যে আসতে পারেননি। সব সময় তার নাম এসেছে ‘এবং রনো’ হিসেবেই।

পর্যালোচনার এই দৃষ্টিকোণ থেকে তেমন গুরুত্বপূর্ণ না হলেও আমি নিজে এবং টাঙ্গাইলে আমার সমান ও কাছাকাছি বয়সের অনেকেই কমরেড হায়দার আকবর খান রনোকে বিশেষ কিছু কারণে সম্মান করে এসেছি। একটি কারণ হলো, ১৯৬০-এর দশকে এই রনোই গোপন কমিউনিস্ট পার্টির পক্ষ থেকে ছাত্র ইউনিয়নের দেখভাল করার দায়িত্ব পালন করেছেন। মার্কসবাদসহ রাজনীতির বহু কিছু আমরা তার কাছে শিখেছি। সে কারণে আমি অন্তত তাকে একজন শিক্ষক বা গুরুর সম্মান দিয়েছি। রনো ভাইয়ের সঙ্গে আমার অনেক স্মৃতি রয়েছে। ১৯৬৮ সালের দিক থেকে শুরু করে এখনো প্রায় ৫০ বছর পরও তাকে সে সম্মানের চোখেই দেখার ইচ্ছা রাখি।

অন্যদিকে তার কাছেই আমাকে একটি বড় ধরনের ‘ধাক্কা’ খেতে হয়েছে। এই ‘ধাক্কা’ খেয়েছি ‘শতাব্দী পেরিয়ে’ নামে তার লেখা আত্মজীবনী পড়তে গিয়ে। ২০০৫ সালে প্রকাশিত হওয়ার পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত গ্রন্থটির পাঁচটি সংস্করণ বেরিয়েছে। মাঝখানে আরো সংস্করণ বেরিয়ে থাকতে পারে, কিন্তু বছর খানেক আগে প্রকাশকের কাছ থেকে আমি পঞ্চম সংস্করণই পেয়েছি। বর্তমান নিবন্ধেও পঞ্চম সংস্করণের ভিত্তিতে বলব। সত্যি বলতে কী, ৫২৫ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি একবারে পড়া হয়নি। পড়েছি দফায় দফায়। আর এ ব্যাপারেও বিশেষ পন্থা অনুসরণ করেছি— গবেষণার ভাষায় যাকে ‘র্যানডম স্যামপ্লিং’ বলা হয়। অর্থাৎ বাছাই করে করে আমার আগ্রহের বিষয় বা অধ্যায়গুলো পড়েছি। এভাবে পড়তে গিয়েই চোখ স্থির হয়ে গেছে ২৪৭-৪৮ পৃষ্ঠায় এসে। সেখানে রনো জানিয়েছেন, ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাসের দুজন কর্মকর্তা নাকি ১৯৭১ সালের ১ এপ্রিল সন্তোষে গিয়ে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে দেখা করেন এবং ‘রুদ্ধদ্বার কক্ষে ঘণ্টা দুয়েক’ আলোচনা করেছিলেন! কথাটা পড়ে আমার ‘চোখ স্থির’ হয়ে যাওয়ার কারণ, এর ঠিক আগের কয়েকটি বাক্যেই রনো লিখেছেন, ৪ এপ্রিল মওলানা ভাসানীর বিন্নাফৈরের বাড়িতে কথা প্রসঙ্গে তিনি নাকি মওলানা ভাসানীকে ভারতে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। জবাবে মওলানা ভাসানী নাকি বলেছিলেন, ‘না, আমাকে এখানে থাকতে হবে, চীনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।’ শুনে রনো বলেছিলেন, ‘চীনের সঙ্গে কীভাবে যোগাযোগ করবেন? চীনা দূতাবাসের পক্ষেও আপনার এখানে আসা সম্ভব নয়, পথে তো যুদ্ধ হচ্ছে।’ মওলানা ভাসানী তারপরও নাকি বলেছিলেন, ‘হবে, যোগাযোগ হবে, সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না।’ এ পর্যন্ত এসেই রনোর সিদ্ধান্তমূলক মন্তব্য ছিল, ‘বুঝলাম, তিনি অযৌক্তিক কথা বলছেন।’

সে একই রনো কিন্তু ‘বহু বছর পর’ বিশ্বাস করেছেন, চীনা দূতাবাসের দুজন কর্মকর্তা সত্যিই মওলানা ভাসানীর সঙ্গে সন্তোষে গিয়ে সাক্ষাৎ করেছিলেন। শুধু সাক্ষাৎ করেননি, তারা নাকি ‘রুদ্ধদ্বার কক্ষে ঘণ্টা দুয়েক’ আলোচনাও করেছিলেন! লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, কথাটা জানাতে গিয়ে রনো নিজেই কিন্তু আপত্তির কারণ সৃষ্টি করেছেন। প্রথমত, বিন্নাফৈরের বাড়িতে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে রনো এবং রাশেদ খান মেননের সাক্ষাৎ ও কথা হয়েছিল ৪ এপ্রিল। সেদিনও মওলানা ভাসানী কিন্তু জানাননি যে, চীনের কারো সঙ্গে তার দেখা বা কথা হয়েছে। মওলানা ভাসানী বরং সেদিন পর্যন্তও আশায় আশায় ছিলেন। ১ এপ্রিল সত্যিই দুজন চীনা কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ ও আলোচনা হয়ে থাকলে মওলানা ভাসানী রনোকে অবশ্যই বলতেন না, ‘হবে, যোগাযোগ হবে, সেটা তোমাকে ভাবতে হবে না।’

দ্বিতীয়ত, রনো নিজেও লিখেছেন, ‘চীনা দূতাবাসের পক্ষেও আপনার এখানে আসা সম্ভব নয়, পথে তো যুদ্ধ হচ্ছে।’ এলেও ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে গণহত্যার অভিযান এবং স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর মুহূর্ত থেকেই দেশের অন্য সব এলাকার মতো ঢাকা-টাঙ্গাইল সড়কের আশপাশের সব স্থানেও প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছিল। ঢাকার পর টঙ্গী, গাজীপুর ও কালিয়কৈরসহ এমন কোনো স্থান বা এলাকার কথা বলা যাবে না, যার কোনো পথই টাঙ্গাইল পর্যন্ত যাওয়ার জন্য নিরাপদ ছিল। সুতরাং চাইলেও চীনা দূতাবাসের কারো পক্ষে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল হয়ে সন্তোষ যাওয়া এবং গিয়ে মওলানা ভাসানীর সঙ্গে সাক্ষাৎ ও বৈঠক করা মোটেই সম্ভব ছিল না। রনোও প্রথমে ঠিকই লিখেছিলেন, ‘আপনার এখানে আসা সম্ভব নয়, পথে তো যুদ্ধ হচ্ছে।’

সে একই রনো হঠাৎ কেন কথা পাল্টে ফেলেছেন? এখানেই রয়েছে আপত্তির তৃতীয় এবং প্রধান কারণ। ‘বহু বছর পর’ তিনি এমন একজনের বর্ণনা বা স্টেটমেন্টকে সাক্ষী মেনেছেন, ১৯৭১ সালে যার বয়স ছিল ১৩/১৪ বছর। টাঙ্গাইলের একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা ও কর্মী হিসেবে শুধু নয়, ঘনিষ্ঠ আত্মীয়তার কারণেও এই বিশেষজনকে খুব ভালোভাবে চিনি— চিনতাম। বছর দেড়-দুই আগে তার মৃত্যু হয়েছে। তার নাম মাহমুদুর রহমান খান লাভলু। আমার নিজের ছোট বোনের দেবর তিনি। ১৯৮০-র দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি কমিউনিস্ট-বামপন্থীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন আর সেটাই ছিল রনো ভাইদের সঙ্গে তার পরিচিতি ও ঘনিষ্ঠতার কারণ।

রনো ভাইও সম্ভবত একই কারণে ‘বহু বছর পর’ এসে হঠাৎ তার কথা পাল্টে ফেলেছিলেন। শুনতে আপত্তিকর ও অসম্মানজনক মনে হলেও কথাটা বলতেই হচ্ছে। কারণ, সত্যিই ‘সত্য’ জানা উদ্দেশ্য হলে রনো ভাইয়ের উচিত ছিল একজন মাত্র লাভলুর বক্তব্যের ওপর নির্ভর না করে আরো কয়েকজনের সঙ্গে মতবিনিময় করা। আমি নিজে তো বটেই, এমন আরো অনেকেই এখনো জীবিত রয়েছেন— যারা রনো ভাইকে সঠিক তথ্য জানাতে পারতেন। তিনি চাইলে আমার কাছ থেকেও তাদের নাম-ঠিকানা নিতে পারেন। কিন্তু উদ্দেশ্য অন্য রকম ছিল বলেই রনো ভাই তা নেবেন না, যেমনটি তিনি আগেও নেননি। তিনি বরং এমন একজনকে সাক্ষী মেনেছেন যার বয়স ছিল তখন ১৩-১৪ বছর এবং যাকে ওই সময়ের ভাসানীপন্থীরা চিনতেনই না!

প্রসঙ্গক্রমে এখানে অন্য কিছু তথ্য জানানো দরকার। রনো ভাই জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল তিনি রাশেদ খান মেননের সঙ্গে প্রথমে সন্তোষে এবং পরে কাছাকাছি অবস্থিত বিন্নাফৈর গ্রামের একটি বাড়িতে মওলানা ভাসানীকে পেয়েছিলেন (রনো ভাই বারবার বিন্নাফৈরকে লিখেছেন ‘বিন্নাফুর’)। সেদিনই পাক-বাহিনী টাঙ্গাইল শহরে ঢুকে পড়েছিল এবং ঢুকেই সন্তোষে মওলানা ভাসানীর বাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছিল। মওলানা ভাসানী বিন্নফৈরে এক মুরিদের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। রনো ভাইয়ের এ সম্পর্কিত বর্ণনায়ও অনেক সত্য অনুপস্থিত রয়েছে। যেমন রাশেদ খান মেননের পাশাপাশি তিনি এমন দু’জনের নাম উল্লেখ করেছেন, যাদের মধ্যে একজন সেখানে ছিলেনই না।

এই রনো ভাই আবার যারা ছিলেন তাদের নাম উল্লেখ করেননি। মওলানা ভাসানীকে দেখাশোনা করার জন্য বিন্নফৈরে সেদিন ছিলেন আমার নিজের বড় ভাই এবং ১৯৬০-এর দশকে বছরের পর বছর কারানির্যাতিত ছাত্র ইউনিয়ন নেতা এসএম রেজা (শাহ মাহমুদ রেজা)। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও হঠাৎ গ্রেফতার হয়ে তিনি প্রচণ্ডভাবে নির্যাতিত হয়েছিলেন। ১৯৮২ সালের নভেম্বরে হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সময় তিনি ছিলেন কাজী জাফর-মেনন ‘এবং রনোর’ নেতৃত্বাধীন ইউপিপির টাঙ্গাইল জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক। তার সঙ্গে সেদিন বিন্নাফৈরে আরো ছিলেন সৈয়দ ফয়সাল করিম শামিম, শফিকুল ইসলাম খান সোনা (যাকে ‘শফিক খান সেনন’ বলে ডাকতাম) এবং অমল চন্দ বাবুল। ব্যক্তিগত জীবনে আমার বন্ধু এ তিনজনই ভাসানীপন্থী বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নের কর্মী ছিলেন। এখনো তারা জীবিত আছেন এবং টাঙ্গাইল শহরে বসবাস ও ব্যবসা করছেন।

এবার দেখা যাক, সেদিন কীভাবে কি ঘটেছিল। মাঝখানে কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করলেও ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মৃত্যুর আগে পর্যন্ত আমি মওলানা ভাসানীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে কাজ করেছি। সাপ্তাহিক ‘হক-কথা’য় আমার অনানুষ্ঠানিক সাংবাদিকতা শুরু হয়েছিল। টাঙ্গাইল শহরে বাসা থাকা সত্ত্বেও মওলানা ভাসানী চেয়েছিলেন বলে ১৯৭৪ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে জুলাই পর্যন্ত আমি সন্তোষে বসবাস করেছি। এ সময় তার প্রকাশনা বিভাগের দায়িত্বে ছিলাম, বেশ কয়েকটি পুস্তিকা ও বুলেটিন আমার নামে প্রকাশিত হয়েছে। পাশাপাশি তার বিভিন্ন বিবৃতি লিখতে ও সেগুলোকে ঢাকায় পত্রিকা অফিসে পাঠাতে হতো। ১৯৭৪ সালের ১৬ মে সম্পাদিত মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির বিরুদ্ধে মওলানা ভাসানীর বিবৃতিটি ছিল আমার হাতে লেখা, যার মূল কপি এখনো রয়েছে।

এত কথা বলার কারণ হলো, কাজের ফাঁকে ফাঁকে মওলানা ভাসানীর কাছে অনেক বিষয়ে জানতে চাইতাম। তিনি তার মতো করে জানাতেন। বিন্নফৈরের ওই ঘটনার ব্যাপারে মওলানা ভাসানী জানিয়েছিলেন, জাফর-মেনন ‘এবং রনো’রা যেহেতু ১৯৬৯ সালের ফেব্রুয়ারি থেকেই সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন করার কর্মসূচি নিয়ে অগ্রসর হচ্ছিলেন, সেহেতু মওলানা ভাসানীর আশা ও ধারণা ছিল, পাকিস্তান গণহত্যা ও যুদ্ধ শুরু করার পর জাফর-মেনন ‘এবং রনো’রা নিশ্চয়ই দেশের কোথাও না কোথাও স্বাধীন দেশের সরকার এবং ‘মুক্ত এলাকা’ গঠন করবেন। মওলানা ভাসানী আরো আশা করেছিলেন, সরকার এবং ‘মুক্ত এলাকা’ গঠন করার পর জাফর-মেনন ‘এবং রনো’রা তাকে নেওয়ার জন্য আসবেন বা লোক পাঠাবেন। বলবেন, আপনাকে বিপ্লবী সরকারের চেয়ারম্যান বানানো হয়েছে। আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন এবং স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দিন।

অন্যদিকে বিপ্লবের আসল সময় রাশেদ খান মেনন ‘এবং রনো’ গিয়েছিলেন উল্টো মওলানা ভাসানীর সাহায্য চাইতে। বলেছিলেন, হুজুর এখন আমরা কী করব! শুধু তা-ই নয়, রনো উল্টো চীনপন্থী এবং ভারতবিরোধী হিসেবে পরিচিত নেতা মওলানা ভাসানীকে ভারতে চলে যাওয়ার জন্য তাগিদ ও পরামর্শ দিয়েছিলেন। এরই তীব্র প্রতিক্রিয়া ঘটেছিল মওলানা ভাসানীর ভেতর। তিনি তাই রাশেদ খান মেননকে বলেছিলেন, তুমি তো অনেক লম্বা (দীর্ঘদেহী), বাড়ির ওই মাথায় গিয়ে দেখ তো সন্তোষের আগুন দেখা যায় কি না। মেনন ‘এবং রনো’র সঙ্গে আমার দীর্ঘদেহী বন্ধু শফিকুল ইসলাম সোনাও গিয়েছিল সন্তোষের আগুন দেখতে। এদিকে আমার ভাই এসএম রেজা এবং বন্ধু সৈয়দ ফয়সাল করিম শামিম এবং অমল চন্দ বাবুলকে মওলানা ভাসানী কয়েক কাপ চা বানাতে পাঠিয়েছিলেন। তারা বানিয়েছিলেনও। কিন্তু ফিরে এসে তারা যেমন, মেনন ‘এবং রনো ভাই’ও তেমনি দেখেছিলেন, কাউকে কিছু না জানিয়েই মওলানা ভাসানী একাকী হেঁটে যাচ্ছেন ক্ষেতের ভেতর দিয়ে। তার হাতে একটি ট্রানজিস্টার এবং কাপড়ের ব্যাগ। মাথায় এমনকি টুপি পর্যন্ত ছিল না। এভাবে হেঁটে এবং ছোট নৌকায় চড়ে মওলানা ভাসানী প্রথমে সিরাজগঞ্জে যান এবং সেখান থেকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী ‘মস্কোপন্থী’ ন্যাপের নেতা সাইফুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে আসাম হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন। এর পরের ইতিহাস কমবেশি সবারই জানা। ভারতে মওলানা ভাসানীকে নজরবন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছিল। জাফর-মেনন ‘এবং রনো’দের তো বটেই, নিজের ছেলে আবু নাসের খানকেও তার সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হয়নি। এ বিষয়ে পরবর্তী কোনো নিবন্ধে জানানো যাবে।

এবারের মতো শেষ করার আগে কমরেড হায়দার আকবর খান রনোর প্রতি অনুরোধ জানাব, তিনি যেন তার ‘শতাব্দী পেরিয়ে’ গ্রন্থে কিছুটা হলেও যোগ-বিয়োগ করেন। এ ব্যাপারে আমার দিক থেকে সহযোগিতার আশ্বাস রইল।

লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads