• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
জ্বালানি-সম্পদ অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন

স্থলভাগের গ্যাস দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসছে— এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে

আর্ট : রাকিব

মতামত

জ্বালানি-সম্পদ অনুসন্ধান এবং উন্নয়ন

  • ইউসুফ শরীফ
  • প্রকাশিত ২৭ জুন ২০১৮

উৎপাদন-ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত এবং সম্প্রসারিত করার জন্য আধুনিক প্রযুক্তি, যোগ্য-দক্ষ জনশক্তি, নির্ভরশীল জ্বালানি-অবকাঠামো গড়ে তোলা দরকার। আয়তনে ক্ষুদ্র এবং তুলনামূলকভাবে জনসংখ্যায় বৃহৎ একটি দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে উল্লিখিত ক্ষেত্রগুলোতে বিরাজমান পরিস্থিতির কোনদিকে কতটা উৎকর্ষ সাধন করতে হবে, সে ব্যাপারে কার্যকর পর্যালোচনা-মূল্যায়ন-গবেষণার বিকল্প নেই। অর্থনৈতিক থেকে সার্বিক উন্নয়নের অগ্রাধিকার নির্ধারণ, সমন্বিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও যোগ্য-দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তোলার স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘমেয়াদি উদ্যোগ কতটা সম্ভব হয়েছে কিংবা হয়নি— এ বিষয়টি আলোচিত হওয়া উচিত। সেই সঙ্গে প্রযুক্তি আহরণসহ আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ আমাদের যেসব মেধাবী তরুণ বিভিন্ন দেশে কর্মরত রয়েছেন, তাদের জাতীয় উৎপাদন-ব্যবস্থায় ফিরিয়ে আনার কোনো চিন্তা বা উদ্যোগ সক্রিয় আছে কি না— এটাও ভেবে দেখা দরকার। এ ছাড়া এ যাবত আমাদের যতটুকু জ্বালানি সম্পদ আবিষ্কৃত হয়েছে এবং সম্ভাবনা যতটাই রয়েছে, তা আধুনিক প্রযুক্তিতে অনুসন্ধান এবং এই মুহূর্তে কীভাবে কতটা আহরণ ও ব্যবহার করা যাবে— এ ব্যাপারেও স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

জ্বালানি পরিস্থিতির দিকে তাকালে সাধারণভাবে লক্ষ করা যায়— স্থলভাগে সকল ব্লকে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান শেষ হয়নি এবং সাগরে বলতে গেলে অনুসন্ধান জোরদারভাবে এখনো তেমন একটা শুরু হয়নি। এদিকে স্থলভাগের গ্যাস দ্রুত নিঃশেষ হয়ে আসছে— এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে। বছর কয়েকের মধ্যে গ্যাস সঙ্কট তীব্র হয়ে উঠতে পারে। বাস্তবতা হলো— এখনই গ্যাসের চাহিদা পরিপূর্ণভাবে মেটানো যাচ্ছে না। গ্যাস সঙ্কটে বিদ্যুৎ এবং সার উৎপাদনও মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হবে, এটাই স্বাভাবিক। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ঘাটতির জন্য শিল্পায়নে বিনিয়োগের অবকাঠামো গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অতীতে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। সার উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি বিঘ্নিত হয়েছে। অর্থাৎ দেশ দ্রুত শিল্প ও কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি— এক কথায় অর্থনৈতিক অগ্রগতি স্তিমিত হয়ে পড়ার মতো আশংকার মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতির শিকার আমাদের হওয়ার কথা নয়। কারণ জ্বালানি উৎসের সম্ভাবনা কম বা এ মুহূর্তেই নিঃশেষ হয়ে যাবে, বাস্তবতা একেবারে এমন নয় বরং সম্ভাবনাগুলো শুরু থেকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায়নি কিংবা কাজে লাগানো হয়নি। স্থলভাগের বেশকিছু গ্যাস ব্লক এখনো রয়ে গেছে এবং তেল-গ্যাস প্রাপ্তির জন্য অসাধারণ সম্ভাবনাময় আমাদের সমুদ্র-এলাকা। স্থলভাগে কয়লাপ্রাপ্তির সম্ভাবনাও কম নয়। ইতোমধ্যে আবিষ্কৃত পাঁচটি কয়লা ক্ষেত্র— ১৯৬২ সালে আবিষ্কৃত জামালগঞ্জ কয়লাখনির সম্ভাব্য মজুত ১০৫ কোটি ৩০ লাখ টন, ১৯৮৫ সালে আবিষ্কৃত বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সম্ভাব্য মজুত ৩০ কোটি ৩০ লাখ টন, ১৯৮৯ সালে আবিষ্কৃত খালাসপীর কয়লাখনির সম্ভাব্য মজুত ৬৮ কোটি ৫০ লাখ টন, ১৯৯৪ সালে আবিষ্কৃত দীঘিপাড়া কয়লাখনির সম্ভাব্য মজুত ৬০ কোটি টন এবং ১৯৯৭ সালে আবিষ্কৃত ফুলবাড়ী কয়লাখনির সম্ভাব্য মজুত ৫৭ কোটি ২০ লাখ টন। আমাদের খনির কয়লা উৎকৃষ্টমানের, এটাও প্রমাণিত হয়েছে। কোনো কোনো দেশ থেকে আমদানি করা কয়লায় সালফারের পরিমাণ ৩ থেকে ৪ শতাংশ হলেও বড়পুকুরিয়ার কয়লায় সালফারের পরিমাণ দশমিক ৩ থেকে দশমিক ৪ শতাংশ। একসময় পরিবেশ অধিদফতর ১ শতাংশের বেশি সালফারযুক্ত কয়লা আমদানি নিষিদ্ধও করেছিল।

সরকারের নীতিনির্ধারকরাও অতীতে বলেছিলেন, যত দ্রুত সম্ভব কয়লাক্ষেত্র উন্নয়ন করা না গেলে দেশে জ্বালানি সঙ্কট ভবিষ্যতে ভয়াবহ রূপ নেবে। ক্রমবর্ধমান গ্যাস সঙ্কট এবং বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি সঙ্কট সামনে রেখে দ্রুততম সময়ের মধ্যে কয়লা তোলার বিকল্প নেই। এই বাস্তবতা দীর্ঘদিন ধরে অনুভূত হলেও অতীতে নানামুখী আলোচনা-সমালোচনার ঘূর্ণিপাকে বেশ কয়েক বছর ধরে ঝুলে ছিল কয়লানীতি। একদল লোক উঠেপড়ে লেগেছিলেন তথাকথিত ‘জাতীয় স্বার্থরক্ষায়’।

বর্তমান সরকারের আমলে চূড়ান্ত কয়লানীতিতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। কয়লা খাত উন্নয়নে ‘খনি বাংলা’ নামে একটি কোম্পানি গঠনের প্রস্তাবও রয়েছে। এ কোম্পানি কয়লা খাত উন্নয়নে মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করবে, যাতে সার উৎপাদন ও সিএনজি ছাড়া সবক্ষেত্রে ক্রমান্বয়ে গ্যাসের পরিবর্তে কয়লার ব্যবহার বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। খনি এলাকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন ও ক্ষতিপূরণের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বলা হয়েছে, পুনর্বাসিত জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মান যাতে উন্নত হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুনর্বাসনের আগেই তাদের যাবতীয় ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করতে হবে। ক্রমবর্ধমান গ্যাস সঙ্কট পরিস্থিতিতে ৫০০ মেগাওয়াটের তিনটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র জরুরিভিত্তিতে স্থাপনের পরিকল্পনাও রয়েছে।

এখন সময় বিকল্প জ্বালানি সন্ধানের এবং সারা বিশ্ব তা-ই করছে। আর আমরা মাটির তলায় এ যাবত আবিষ্কৃত প্রায় ২৫০ কোটি টন কয়লা রেখে অহেতুক অবাস্তব বিতর্কে সময় নষ্ট করছি আর পিছিয়ে যাচ্ছি। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান— উত্তোলনের ব্যাপারেও একই ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন কিছু বুদ্ধিমান ব্যক্তি। প্রশ্ন উঠেছে, কিন্তু কেন? প্রাকৃতিক খনিজসম্পদ অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কোনো উদ্যোগ-আয়োজন না নিয়ে ঠুঁটো জগন্নাথ সেজে বসে থাকাটা সার্বিক বাস্তবতার নিরিখে যে উন্নয়ন ধারণা, তার ঘাটতির কারণ হয়ে থাকলেও কেউ কেউ পছন্দ করতেই পারেন। আবার এরকম পছন্দের পেছনে কোনো গূঢ় কারণও যে থাকতে পারে না, তা নয়। এটা সরকারের খতিয়ে দেখার বিষয়, নিশ্চয়ই খতিয়ে দেখা হবে। তবে বাস্তবতা হলো— স্বল্পোন্নত অবস্থা থেকে মধ্যআয়ের দেশে পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা শুধু নয়, বাস্তবতাও যে দেশের সামনে রয়েছে, সে দেশের মানুষ এটা পছন্দ করতে পারে না এবং দেশের মানুষ এটা পছন্দ করছেও না। প্রকৃতপক্ষে জাতির বিবেকী রায় আগেই সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উন্নয়নের জন্য গ্যাস উত্তোলন করা হবে, সন্দেহ নেই, এটাই আজকে এ জাতির বিবেকের রায়।

প্রাকৃতিক গ্যাস ছাড়া দেশে অপর যে জ্বালানি উৎস আছে, তা হলো কয়লা। সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনে বর্তমান সরকারের বাস্তবোচিত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ নিয়ে যারা নানা প্রশ্ন তুলে তেল-গ্যাস সাগরেই মজুত রাখতে চাচ্ছেন, সেই তাদের জন্যই কয়লা তোলার ক্ষেত্রেও এগোনো যাচ্ছে না। কয়লা তোলায় সঙ্কট সৃষ্টি হয়েছে পদ্ধতির ফয়সালা না হওয়ায়। এ গ্রুপটির ঘোর আপত্তি উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা তোলার ব্যাপারে। ফলে কোন প্রক্রিয়ায় তোলা হবে তা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা হয়েছে। এদেশে বরাবর জাতীয় স্বার্থের নামে জাতীয় স্বার্থ ঠেকিয়ে দেওয়ার জন্য যা হয়, এক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছে। এই বিতর্ক তৈরির জন্য তেল-গ্যাস-বন্দরে কথিত জাতীয় স্বার্থ রক্ষার নামে যে বুদ্ধিজীবী গ্রুপ গড়ে উঠেছে, তারা যা বলে থাকেন, তাতে মাটির নিচে কয়লা রেখে বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করা ছাড়া আর কিছু করার থাকবে না। আর গ্যাসও থাকবে মাটির নিচে, সমুদ্রের তলায়। আর এভাবেই আমাদের জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষিত থাকবে!

সমস্যাটা কোন জায়গায়, তা যে অনেকে আঁচ-অনুমান করতে পারছেন না, ব্যাপারটা তা নয়। আমরা সেদিকে যাচ্ছি না। তবে আমাদের উন্নয়ন-ধারণা, যতটাই আছে, সে অনুযায়ী নিজস্ব খনিজসম্পদের অনুসন্ধান, বাস্তবোচিত আহরণ ও সদ্ব্যবহার এবং আগ-পিছ ভেবে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও অনিয়ম-দুর্নীতিমুক্ত বাস্তবায়ন-বিষয়ে কেউ কেউ মতলবি ধারণায় তৎপর হয়ে উঠতেই পারেন। তবে এসব বিষয়ে জাতীয় ঐকমত্য থাকা দরকার, যাতে এক ও অবিভাজ্য চেতনা, ধারণা ও কৌশল নিয়ে কাজে নামা যায়। সফল উন্নয়নে এর কোনো বিকল্প নেই। বুদ্ধিবৃত্তিক মতভিন্নতা ও রাজনৈতিক মতভেদের ঊর্ধ্বে উঠতে না পারলে জাতির সামনে আজ যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তার সফল বাস্তবায়ন হয়তো অধরাই থেকে যাবে।

উন্নয়নের টার্গেট নির্ধারণ যতটা জরুরি, উন্নয়ন প্রক্রিয়া নির্ধারণও ততটা জরুরি এবং কম জরুরি নয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সুষ্ঠুভাবে যোগ্যতা-দক্ষতা ও সততার সঙ্গে সম্পন্ন করা। এ সবকিছু শৃঙ্খলাবদ্ধ হবে যদি উন্নয়ন ধারণা, এ যাবত আবিষ্কৃত সম্পদ ও সম্ভাব্য সম্পদের সুপ্রয়োগে উন্নয়ন উপকরণ সৃষ্টি এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অতীত বিচ্যুতির কারণ— ইত্যাকার বিষয়গুলো স্পষ্ট থাকে। এসবের নিরিখেই প্রণীত হতে পারে সফল উন্নয়ন পরিকল্পনা। এগুলো যাদের জানার কথা, তারা তা মোটেই জানেন না, ব্যাপারটা তা নয়।

সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আগেই বলা হয়েছে, তারা দেশের উন্নয়নের জন্য ক্ষমতায় এসেছেন। দেশবাসীও তা-ই মনে করেন এবং ইতোমধ্যে নানামুখী উদ্যোগ-আয়োজনও এগিয়ে চলেছে। আর এজন্যই বর্তমান সরকারের দায়িত্ব বেড়ে গেছে। সরকার শুরুতেই উন্নয়নের একটা রোডম্যাপ জাতির সামনে উপস্থাপন করেছে। এটা একটা কাজ, দ্বিতীয় কাজ হলো— পরিকল্পনা প্রণয়ন, সম্পদ ও অর্থের জোগান এবং তৃতীয় কাজ হলো, অনিয়ম-দুর্নীতিহীন অর্থাৎ যোগ্যতা-দক্ষতা-সততার সঙ্গে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন নিশ্চিত করা।

সর্বোপরি বিরাজমান যেসব সমস্যা-সঙ্কট উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে রেখেছিল, সেসব ঝেঁটিয়ে বিদায় করে উন্নয়নের ক্ষেত্র পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা। এখানে সমঝোতা করে আর যা-ই হোক, কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা যাবে না। সোনার পাথরবাটি হয় না। আমার লোকদেরটাও দেখব, উন্নয়নও করব- এটা হলো সোনার পাথরবাটি। এটা মুখে বলা যায়, বাস্তবে কখনো সম্ভব নয়। কারণ সব সরকারের আমলে আমার বা আমাদের লোকেরা যা যা পেতে চান বা করতে চান, তা কখনো জাতীয় নিরঙ্কুশ উন্নয়নের অনুগামী হয় না— হতে পারে না। গোষ্ঠীস্বার্থের অবস্থান সব সময়েই জাতীয় স্বার্থের উল্টো মেরুতে। এটা প্রকৃতিগত বিষয়, যা কোনোভাবেই বদলে দেওয়া যাবে না। এর সহজ সমাধান হলো— আমাদের নয়, সংশ্লিষ্ট সবাইকে উন্নয়নের ব্যাপারে, উন্নয়ন প্রক্রিয়া বিশৃঙ্খলা ও অনিয়মমুক্ত রাখার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করতে হবে, শুধু মুখে মুখে নয়, কার্যত-বাস্তবক্ষেত্রে।

সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের উদ্যোগ নিতে গিয়ে বাংলাদেশকে একই সঙ্গে দুই প্রতিবেশী দেশ ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নির্ধারণের বিষয়ে ফয়সালায় নামতে হয়েছিল। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে তেল-গ্যাস সম্পদের জরুরি প্রয়োজনীয়তার নিরিখে এটা ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় ইস্যু। বাংলাদেশ যে তিনটি ব্লক ইজারা দিতে যাচ্ছিল, তার একটি নিয়ে ভারত এবং আরেকটি নিয়ে মিয়ানমার আপত্তি জানিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত দুই প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে সমুদ্রসীমার ফয়সালা জাতীয় স্বার্থের নিরিখে বর্তমান সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। এই তিনটি ব্লক ইজারার উদ্যোগ নেওয়া না হলে হয়তো প্রসঙ্গটি এখন উঠত না। বিগত জোট সরকারের সময়ে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে গুরুত্ব দেওয়া হলেও এ ব্যাপারে কারো টনক নড়েনি। এখন এক্ষেত্রে উদ্যোগ জোরদার করার সময় এসেছে।

জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে দেশের সকল মহলের ঐক্যবদ্ধ থাকা যে অপরিহার্য, এটা বিশদ বলার অপেক্ষা রাখে না। স্থলভাগে গ্যাস-কয়লার মতো জ্বালানি অনুসন্ধান-আহরণসহ সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের কোনো উদ্যোগের বিরোধিতা কেউ কামনা করতে পারেন না। কোনো না কোনো অজুহাত তুলে দেশের স্বার্থে সংশ্লিষ্ট জরুরি উদ্যোগে যারা বিরোধিতা করেন, তারা দেশজ ও আন্তর্জাতিক পুরো প্রেক্ষাপট কতটা জেনে-বুঝে বা হূদয়ঙ্গম করে তা করেন, এ প্রশ্ন সঙ্গত কারণেই ওঠে। বিশেষ করে তাদের এই বিরোধিতা যে অজুহাতের কথা উল্লেখ করেই করা হোক না কেন, চূড়ান্ত বিবেচনায় তা কার বা কাদের পক্ষে যাবে বা যেতে পারে, এ বিবেচনাও দেশবাসী নিশ্চয়ই করবেন। উন্নয়নশীল দেশের কাতারে শামিল হওয়ার পর উৎপাদন ব্যবস্থার উন্নয়ন, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত করা ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প আমাদের সামনে নেই।

লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কথাসাহিত্যিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads