• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

স্মরণ

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন

  • প্রকাশিত ২৮ জুন ২০১৮

জয়নুল আবেদিন একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিত্রশিল্পী ছিলেন। বলা হয়, বাংলাদেশে আধুনিক শিল্প আন্দোলনের তিনিই পুরোধা। ১৯৪৮ সালে ঢাকায় বর্তমান চারুকলা ইনস্টিটিউটের (ইনস্টিটিউট অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফ্টস) তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ। জয়নুল আবেদিন ও তার কিছু শুভাকাঙ্ক্ষী সহকর্মীর অক্লান্ত চেষ্টায় মাত্র এক দশকের মধ্যেই বাংলাদেশে আধুনিক শিল্পকলা স্থান করে নেয়। জয়নুল আবেদিনের অসাধারণ শিল্প-মানসিকতা ও কল্পনাশক্তির জন্য তিনি শিল্পাচার্য উপাধিতে ভূষিত হন।

জয়নুল আবেদিন ১৯১৪ সালে ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৩৩ সালে কলকাতা সরকারি আর্ট স্কুলে ভর্তি হন এবং পাঁচ বছর সেখানে ব্রিটিশ/ইউরোপীয় স্টাইলের ওপর পড়াশোনা করেন। ১৯৩৮ সালে সর্বভারতীয় চিত্রকলা প্রদর্শনীতে তার অঙ্কিত জলরঙের ছবির জন্য তিনি স্বর্ণপদক পান। তার অঙ্কনের মূল বিষয়বস্তু ছিল ব্রহ্মপুত্র নদ, যা ছিল তার আশৈশব প্রেরণার বিষয়। এ স্বীকৃতিই তাকে প্রথমবারের মতো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে নিয়ে আসে। তিনি নিজস্ব একটি ধারা সৃষ্টির আত্মবিশ্বাস লাভ করেন। জয়নুল আবেদিনের কাছে প্রাচ্যের অঙ্কন ধারা অতিমাত্রায় রীতিনির্ভর ও অপরিবর্তনশীল মনে হয়েছে। ফলে তিনি রিয়ালিজমের প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৪৩ সালে ‘দুর্ভিক্ষের রেখাচিত্র’ নামে পরিচিত জয়নুলের চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে সওদাগরদের নিষ্ঠুরতা ও নৈতিক কলুষতা এবং নিপীড়িতের অমানবিক দুর্দশা। চিত্রকর্মগুলো জয়নুলকে ভারতব্যাপী খ্যাতি এনে দেয়। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা এগুলো মানুষের দুর্দশা, কষ্ট ও প্রতিবাদকে সামনে এনে বাস্তবধর্মী চিত্র অঙ্কনে তার স্বকীয়তাকে বিকশিত করে।

জয়নুল আবেদিনের কাজে রিয়ালিজম, নান্দনিকতা, পল্লীর বিষয়বস্তু ও প্রাথমিক রঙের প্রতি তার আগ্রহ লক্ষ করা যায়। তবে কর্মপরিধি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তিনি লোক শিল্পকলার সীমাবদ্ধতা উপলব্ধি করেন। এ সীমাকে অতিক্রম করতে জয়নুল আবার ফিরে যান প্রকৃতির কাছে গ্রামীণ জীবনে, জীবনের দৈনন্দিন সংগ্রামের মাঝে— যেখানে বাস্তবতা থাকবে মুখ্য কিন্তু অবয়ব হবে আধুনিক। জয়নুলের কাছে ‘আধুনিকতাবাদ’ বলতে শুধুই বিমূর্ততা ছিল না; বরং তার কাছে ‘আধুনিকতা’ শব্দটির ছিল এক সুগভীর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, যেখানে সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যক্তিক প্রকাশই মুখ্য। ১৯৭৫ সালে জয়নুল আবেদিন সোনারগাঁয়ে একটি লোকশিল্প জাদুঘর এবং ময়মনসিংহে একটি শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন সংগ্রহশালা প্রতিষ্ঠা করেন। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন ১৯৭৬ সালের ২৮ মে মারা যান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads