• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
সাঁওতাল বিদ্রোহ

১৮৫৫ সালের জুন মাস থেকে বিদ্রোহ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে

সংরক্ষিত ছবি

মতামত

জেনে নিন

সাঁওতাল বিদ্রোহ

  • প্রকাশিত ৩০ জুন ২০১৮

দখলদার ইংরেজ শাসনামলে জমিদার, মহাজন ও পুলিশের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের সশস্ত্র বিদ্রোহ ইতিহাসে ‘সাঁওতাল বিদ্রোহ’ নামে পরিচিত। ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের উদ্ভব এবং রাষ্ট্র কর্তৃক আরোপিত আইন ও বিধিবিধান, খাজনা প্রবর্তন ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ফলে প্রথম দিকে সাঁওতালরা তাদের আদি বাসভূমি কটক, ধলভূম, মানভূম, বড়ভূম, ছোটনাগপুর, পালামৌ, হাজারীবাগ, মেদিনীপুর, বাঁকুড়া ও বীরভূমের পার্বত্য এলাকা ছেড়ে রাজমহল পাহাড়ের সমতলভূমিতে বসতি স্থাপন করে। বিস্তীর্ণ এলাকার জঙ্গল কেটে স্থানটিকে তারা চাষাবাদের উপযোগী করে তোলে। কিন্তু ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা সেখানেও তাদের মালিকানার দাবি নিয়ে হাজির হয়। সাঁওতালরা এই ঔপনিবেশিক অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এবং নিজেদের প্রাকৃতিক অধিকার বজায় রাখার জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বাধ্য হয়। সাঁওতালরা বিশ্বাস করত, যে ব্যক্তি সর্বপ্রথম জঙ্গল কেটে জমি চাষের উপযোগী করে, জমির মালিকানা তারই। মোগল সরকার এই ঐতিহ্যকে সম্মান করায় তখন কোনো সমস্যা হয়নি। কিন্তু ঔপনিবেশিক রাষ্ট্রের প্রতিনিধি হিসেবে জমিদাররা জমির ওপর তাদের মালিকানার দাবি প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে। এই স্বাভাবিক অধিকারের ওপর হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে ১৮১১, ১৮২০ ও ১৮৩১ সালে ব্রিটিশ ও জমিদারদের বিরুদ্ধে সাঁওতালদের অভ্যুত্থান ঘটে। কিন্তু সবচেয়ে ভয়াবহ, সুসংগঠিত ও ব্যাপক বিদ্রোহটি সংঘটিত হয় ১৮৫৫-৫৬ সালে এবং তা দমন করতে সরকারকে কয়েক দফা সামরিক অভিযান পরিচালনা করতে হয়।

১৮৫৫ সালের জুন মাস থেকে বিদ্রোহ দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ গণঅভ্যুত্থানের মতো সাঁওতালরাও গেরিলা যুদ্ধের কৌশল অবলম্বন করে। জমিদারকে খাজনা প্রদান পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং মহাজনের তমসুক বা বন্ধকীপত্র এক ঘোষণার দ্বারা বাতিল করা হয়। পিপলিতে সাঁওতালরা মেজর বারোজের নেতৃত্বে পরিচালিত সামরিক অভিযানকে সম্পূর্ণভাবে পর্যুদস্ত করে। এই বিজয়ে উৎসাহিত হয়ে সাঁওতালরা আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। ১৮৫৫ সালের ১৯ জুন সামরিক আইন জারি করা হয়। সাঁওতালদের দমনের জন্য তিনটি সৈন্যদল পাঠানো হয়। সাঁওতালদের রক্তে সিক্ত হয় রাজমহল পার্বত্য এলাকা। তাদের সবকটি গ্রাম ধ্বংস করা হয়। বন্দি সাঁওতালদের শিকলবদ্ধ অবস্থায় রেলপথ নির্মাণের শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। ১৮৫৬ সালের ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে নেতৃস্থানীয় সাঁওতালদের অধিকাংশই ধরা পড়ে এবং লোক দেখানো বিচার করে তাদের প্রকাশ্যে ফাঁসি দেওয়া হয়। অবশেষে ১৮৫৬ সালের মার্চে বিদ্রোহ স্তিমিত হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads