• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
শ্রেণি প্রশ্নের মীমাংসা জরুরি

শ্রেণি প্রশ্নটাকে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না

আর্ট : রাকিব

মতামত

শ্রেণি প্রশ্নের মীমাংসা জরুরি

  • সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
  • প্রকাশিত ০৬ জুলাই ২০১৮

শ্রেণি প্রশ্নের মীমাংসাটাই সর্বাধিক জরুরি, কিন্তু তার জন্য জাতি প্রশ্নেরও মীমাংসা চাই, কেননা জাতিগত ভেদাভেদটাকে জিইয়ে রেখে শাসক শ্রেণি চেষ্টা করে শ্রেণিচেতনাকে ভোঁতা করে দিতে। পাকিস্তানের যেটুকু টিকে আছে, তাকেও জাতি সমস্যার মীমাংসা করতে হবে, নইলে পাকিস্তান হয়তো টিকবেই না। একই কাজ ভারতকেও করতে হবে, নইলে জাতিগত সংঘর্ষ বাড়বে এবং বিরোধটাকে হিন্দু ধর্ম, হিন্দি ভাষা, হিন্দুস্থানের অখণ্ডতা ইত্যাদি দিয়ে চাপা দিতে গেলে হয়তো ছাইচাপা আগুন বেরিয়ে পড়ে ভয়ঙ্কর ব্যাপার ঘটাবে। জাতি সমস্যা সমাধানের জন্য প্রথমেই স্বীকার করে নেওয়া দরকার হবে যে, ভারত একটি বহুজাতিক দেশ এবং তাদের জাতীয়তার ভিত্তি হচ্ছে ভাষা। ব্যাপারটি সহজ নয়। বুর্জোয়া কায়েমি স্বার্থবাদীরা বাধা দেবে; কারণ বহুজাতিত্ব স্বীকার করলে তাদের পুঁজির একচেটিয়া মুনাফা আহরণ বিঘ্নিত হবে, সর্বভারতীয় ব্যবসাবাণিজ্য চাকরিবাকরি এমনকি ভারতীয় বলে গৌরব করার ব্যাপারটাও খণ্ডিত হয়ে যাবে, তদুপরি ঝুঁকি থাকবে মেহনতি মানুষের উঠে দাঁড়ানোর।

উপমহাদেশের অর্থনৈতিক পশ্চাৎপদতা, অভাব, দারিদ্র্য, অমানবিক বৈষম্য, সবকিছুই আটকা পড়ে আছে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার মুনাফাকেন্দ্রিক ব্যক্তি মালিকানার জাঁতাকলে। সেটা ভেঙে সামাজিক মালিকানার সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করলে উৎপাদন শক্তির যে উন্মোচন ঘটবে তাতে প্রাচুর্য দেখা দেবে এবং সেই প্রাচুর্য পাহাড়ের মতো অনড় ও ঊর্ধ্বমুখী হবে না, হবে নদীর মতো সর্বত্র বিস্তৃত। আমরা সোনার বাংলার কথা বলেছি ও শুনেছি, সে বাংলা স্বপ্নেই থাক, মানবিক বাংলা পাব- এমনটা আশা হয়তো অমূলক হবে না।

শ্রেণি প্রশ্নটাকে অনেকেই গুরুত্ব দিতে চান না। পুঁজিবাদীরা ভাবেন, এটা জিইয়ে রাখলে শ্রেণি প্রশ্নটিকে পেছনে ঠেলে রাখা যাবে। তাতে তাদের মঙ্গল। উদারনীতিকরা ভাবতে ভালোবাসেন যে, মিটমাট করা যাবে। যেমন চিত্তরঞ্জন দাশ পর্যন্ত ভাবতেন। স্বরাজের জন্য তিনি লড়েছেন, বাঙালির জন্য জাতীয়তাবাদী চেতনা তৈরিতে অগ্রগামী ভূমিকা রেখেছেন, কিন্তু শ্রেণির প্রশ্ন এলে সমঝোতার কথা তুলেছেন। ১৯২৩ সালে স্বরাজ পার্টির নির্বাচনী ইশতেহারে বলা হয়েছে,

এটা সত্য যে পার্টি প্রজাদের প্রতি সুবিচারের পক্ষে দাঁড়াবে, কিন্তু সে সুবিচার যদি জমিদারের প্রতি অবিচারের কোনো কারণ হয়, তবে প্রজাদের প্রতি পক্ষ সমর্থন অবশ্যই দুর্বল হবে।

জাতি প্রশ্নে কমিউনিস্টদের বক্তব্য যে প্রথম থেকেই পরিষ্কার থাকবে, এটাই তো ছিল প্রত্যাশিত। তা ঘটেনি। পার্টি গঠনের পর পরই, ১৯২১ সালে পার্টির পক্ষ থেকে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের ডেলিগেটদের কাছে একটি ম্যানিফেস্টো পাঠানো হয়, তার প্রথমেই বলা হয়েছিল, ‘The Indian nation today stands on the eve of a great revolution...’। সন্দেহ নেই যে, nation না বলে people বলাটাই যথার্থ হতো। এমনকি পাকিস্তানামলে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি যদি নিজেকে ন্যাশনাল না বলে অন্য নাম নিত, তাহলেও ভালো ছিল।

কিন্তু শ্রেণি প্রশ্নের সমাধান করতেই হবে। অখণ্ড বঙ্গে আমরা একটা জাতীয়তাবাদী সমীকরণের সমাধান করতে পারিনি; সেটা হলো ৫২ জন মুসলমান বনাম ৪৮ জন অমুসলমানের। ফলে দেশভাগ ঘটাতে হয়েছে। পাকিস্তান আমলে জাতীয়তাবাদী সমীকরণটা দাঁড়াল ৫৬ জন বাঙালি বনাম ৪৪ জন অবাঙালির; সমাধানে ব্যর্থতার দরুন যুদ্ধ হলো এবং রাষ্ট্র ভাঙল। এবার বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা দাঁড়িয়েছে ২০ জন সুবিধাভোগী বনাম ৮০ জন সুবিধাবঞ্চিতের। এই সমীকরণের সমাধান করতে হলে সমাজকে ভাঙা ছাড়া উপায় নেই; ভাঙতে হবে নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য নয়, মানুষে মানুষে অধিকার ও সুযোগের সাম্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে সৃষ্টিশীলতাকে মুক্ত করার জন্য। সামাজিক মালিকানার নতুন বিশ্ব গড়ে তোলার জন্য।

স্বভাবতই এই কাজটা করার কথা বঞ্চিত শ্রমিক ও কৃষকের। কিন্তু তারা সেটা করতে পারছে না। না-পারার প্রধান কারণ রাজনৈতিক সংগঠনের অভাব। তবে মেহনতি মানুষরা এগিয়ে আসছে; যেমন বাংলাদেশে, তেমনি সারা বিশ্বে। বাংলাদেশের দিকে তাকানো যাক। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার সময় ভোট ছিল মাত্র শতকরা ১২.৫০ ভাগের। ১৯৫৪-তে প্রাদেশিক নির্বাচনে ভোটাধিকার পেয়েছিল সব প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। তার আগে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন কেবল যে পেটিবুর্জোয়া গণ্ডিতে আটকে ছিল তা নয়, চলে গিয়েছিল গ্রামেও। ১৯৬৬-তে ছয় দফার হরতালে শ্রমিকরা অংশগ্রহণ ও প্রাণদান করেছে। ১৯৬৯-এর অভ্যুত্থান ছাত্র আন্দোলনের ভেতর দিয়েই শুরু হয়, কিন্তু সে চলে গিয়েছিল শ্রমিক ও কৃষকের কাছে।

এ রকমের প্রায়-বিপ্লবী পরিস্থিতি অবিভক্ত বাংলায় একবার তৈরি হয়েছিল, ১৯৪৫-৪৬-এ। তখন নেতৃত্ব দেবার মতো রাজনৈতিক সংগঠন ছিল না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দেওয়া হলো সাধারণ নির্বাচন। পরিণতিতে দাঁড়িয়েছিল দাঙ্গা ও দেশভাগ। ঊনসত্তরেও একই ঘটনা ঘটল। আবারো অভাব দেখা গেল সংগঠনের। পরিস্থিতি সামাল দেবার জন্য এবারো নির্বাচন দেওয়া হলো, পরিণতি দাঁড়াল গণহত্যা ও বাংলাদেশের অভ্যুদয়। ঊনসত্তরে যেটা নতুন ছিল তা হলো গ্রামে গ্রামে পরিষদ গড়ে ওঠা, যেমন ভাবে সোভিয়েত গড়ে উঠেছিল, রুশ বিপ্লবের পূর্বে।

বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় আশা জেগেছিল যে, মানুষ মুক্ত হবে। সেটা কিন্তু ঘটল না। অর্থনীতিকে সমাজতন্ত্র অভিমুখী চালনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এজন্য শক্তিশালী একটি প্ল্যানিং কমিশন গঠন করা হয়েছিল। তার সদস্যরা অনেক পরিশ্রম ও গবেষণা করেছেন, কিন্তু তাদের প্রস্তাবগুলো কার্যকর হয়নি। উল্টো প্ল্যানিং কমিশন নিজেই ভেঙে গেছে। সদস্যরা সবাই বলেছেন যে অভাব ছিল রাজনৈতিক অঙ্গীকারের। রাজনৈতিক অঙ্গীকার কিন্তু ছিল, তবে সেটা নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তনের নয়, ছিল পুরাতন ব্যবস্থাটাকেই সক্রিয় ও উন্নত করবার জন্য। কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশকে আমরা পাইনি। কারণ যে ঐক্য, উদ্দীপনা, উদ্ভাবনা ও অঙ্গীকার মুক্তিযুদ্ধের সময় দেখা গিয়েছিল সেটা অক্ষুণ্ন থাকেনি। সারা দেশে দেখা গেছে পেটি বুর্জোয়াদের দখলদারিত্ব ও লুণ্ঠন। ওই কাজ কমেনি, বেড়েছে। কাজটিকে বলা হচ্ছে দুর্নীতি।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মুহূর্তে গণপরিষদে তার বক্তৃতায় জিন্নাহ সাহেবও বলেছিলেন যে, পাকিস্তানের জন্য মস্তবড় বিপদ হবে দুর্নীতি। ঢাকায় রেসকোর্সে বক্তৃতায় প্রধান বিপদ হিসেবে তিনি কিন্তু নির্দিষ্ট করে দিলেন দুর্নীতিকে নয়, কমিউনিস্টদের। দু’দিন পরে কার্জন হলে দেওয়া বক্তৃতাতেও তিনি ওই একই বিপদের কথা বলেছেন। কিন্তু দুর্নীতির খবর কী? সে কি আর বিপদ নয়? তার কথা কেন বললেন না, ব্যাখ্যা হলো এই যে, বুর্জোয়া রাষ্ট্রের জন্য দুর্নীতি একটা দুর্বলতা বটে, কিন্তু শত্রু নয়; শত্রু হচ্ছে সমাজবিপ্লবী শক্তি। কায়েদে আজম ওই শত্রুর কথাই বলেছিলেন। তবে তরুণদের জন্য একটা ভরসার খবর দিয়েছিলেন তিনি। বলেছিলেন পাকিস্তান হওয়াতে তাদের জন্য উন্নতির অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়ে গেছে। তরুণদের উচিত দু’হাত বাড়িয়ে সুযোগ গ্রহণ করা। তা সুযোগ লোকে গ্রহণ করতে চেষ্টা করেছে বৈকি। কিন্তু সুযোগ তো পর্যাপ্ত ছিল না। বুর্জোয়া রাষ্ট্রের চরিত্র ওটাই, যারা গণতান্ত্রিক অধিকারের কথা বলে তাদের শত্রু বলে চিহ্নিত করা। দমিয়ে রাখা এবং অন্যদের উন্নতির জন্য প্রলুব্ধ করা। পাকিস্তান ভেঙেছে। বাংলাদেশেও রাষ্ট্র সবাইকে প্রলুব্ধ করছে ধনী হতে। ফলে পরিস্থিতি বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

সামাজিক বিপ্লবে যারা নেতৃত্ব দেবে সেই পার্টিকে নানা রকমের অপপ্রচারের মুখোমুখি হতে হবে, এটাই স্বাভাবিক। উপমহাদেশে চালু অভিযোগটা ছিল তারা নাস্তিক; ইউরোপে আমেরিকায় উদারনীতিকরা বলতে বলতে মুখব্যথা করে ফেলেছে যে, সমাজতন্ত্রীরা ব্যক্তি স্বাধীনতার অঙ্গীকারবদ্ধ শত্রু। জর্জ অরওয়েল স্প্যানিশ সিভিল ওয়ারে বিপ্লবীদের পক্ষে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। মনে করেছিলেন কমিউনিস্টই হয়ে যাবেন। ঘটনা ঘটল উল্টো, তিনি লিখলেন Animal Farm এবং ১৯৮৪। দুটোই সোভিয়েতবিরোধী। ১৯৮৪ নামের উপন্যাসটিতে তিনি দেখাচ্ছেন কমিউনিস্ট রাষ্ট্রে ব্যক্তির কোনো প্রকার স্বাধীনতা নেই। টিকটিকিরা ব্যক্তির সব তথ্য জানে, ব্যক্তির ওপর তারা সর্বক্ষণ চোখ রাখে, ব্যক্তিকে ভয় দেখায়। উপন্যাসটি লেখেন তিনি ১৯৪৯-এ, মারা যান পরের বছর; বেঁচে থাকলে দেখতে পেতেন স্বৈরাচারী যে রাষ্ট্রের কল্পনায় তিনি আতঙ্কগ্রস্ত হয়েছিলেন, সে রাষ্ট্র আজ আরো ভয়ঙ্কর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তার নাম সোভিয়েত ইউনিয়ন নয়, তার পুঁজিবাদী রাষ্ট্র। ওই একই বছরে, ১৯৪৯ সালেই, কমিউনিজমে দীক্ষিত ছয় দেশের ছয়জন প্রসিদ্ধ বুদ্ধিজীবী মিলেমিশে একটা বই লিখেছেন, নাম দিয়েছেন The god that Failed। দুঃখ-ভারাক্রান্ত কণ্ঠে তারা জানাচ্ছেন যে, তারা কমিউনিজমে দীক্ষিত হয়েছিলেন, কিন্তু ফেরত চলে এসেছেন। ব্যক্তি তো নিজের ব্যক্তিত্বই হারিয়ে ফেলছে, স্বাধীন হবে কীভাবে? ওই একই বছরে উদারনৈতিক বুদ্ধিজীবী অলডাস হাক্সলি একটি বই লেখেন, নাম দেন Do What You Will। যা ইচ্ছা কর। কিন্তু আসলে দেখাচ্ছেন যে, কিছুই করার নেই। বিশ্বজুড়ে দেখা দিয়েছে ঘৃণা। ‘Hate, universal hate, and an aimless and therefore complete and thorough smashing up of everything’। দেখতে পাচ্ছেন যে সর্বব্যাপী নৈরাজ্য আসছে ধেয়ে। সেটা আসবে, এবং The richer, the more materially civilized we become, the more speedily it will arrive. All that we can hope is that it will not come in our time.

ব্যস, হয়ে গেল কাজ। যা হবার তা তো হবেই, চিন্তা করে কী লাভ? প্রেমে যে মুক্তি দেবে সে ভরসা নেই। বসে বসে কেবল ঝিমানো অথবা টুকটাক আওয়াজ করা, তর্ক বাধানো। শ্রেণিশোষণমুক্ত নতুন পৃথিবী গড়া? সে তো ভয়ঙ্কর ব্যাপার, সে তো নিজ হাতে ব্যক্তিস্বাধীনতার কবর খোঁড়া। তবে শুভবুদ্ধিও ছিল, নইলে অতবড় বিজ্ঞানী, আলবার্ট আইনস্টাইন, তিনি ওই ১৯৪৯ সালেই প্রবন্ধ লিখে পুঁজিবাদকে ধিক্কার জানিয়ে কেন বলবেন যে, সমাজতন্ত্র ছাড়া মুক্তি নেই? এই সত্যটা নির্মোহ ওই বিজ্ঞানী জানেন, জানবার কথা মেহনতি মানুষেরও। জানে সমাজ পরিবর্তনে আস্থাবান ও কর্মরত মানুষেরা। স্টিফেন হকিন্স চলে গেলেন। আইনস্টাইনের মতোই অত্যন্ত বড়মাপের বিজ্ঞানী এবং সমাজমনস্ক। তিনিও তাই দেখতে পাচ্ছিলেন যে, পৃথিবী যেভাবে চলছে, অর্থাৎ যেভাবে তাকে চালানো হচ্ছে, তাতে ধ্বংস অনিবার্য। এই গ্রহ মনুষ্য বসবাসের উপযোগীই থাকবে না। কেবল এ কথাটা বলেননি যে, ব্যাধিটির নাম পুঁজিবাদ এবং তার চিকিৎসার নাম সামাজিক মালিকানা প্রতিষ্ঠা। হয়তো এই কারণে যে পুঁজিবাদীরা এখন ফ্যাসিবাদী হয়ে গেছে, তাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুললে তারা সবেগে ও নানাভাবে কণ্ঠরোধ করে। কিন্তু ব্যাধি ও প্রতিকারের ওই কথাটাই আজ বলা দরকার। সবাই মিলে। ব্যক্তিমালিকানা তার শেষপ্রান্তে পৌঁছেছে, পুঁজিবাদ রূপ নিয়েছে ফ্যাসিবাদের, রাষ্ট্রকে সে ব্যবহার করছে পুঁজিপতিদের স্বার্থে।

বাংলাদেশে এখন জ্ঞানের চর্চাটা কমে গেছে। মাটির তলে যেমন পানির স্তর নেমে যাচ্ছে, বায়ুর মান নিম্নগামী, আমরা খবর রাখি না, জ্ঞানচর্চার অবস্থাও সেই রকমেরই। ১৯২০-৩০-এর দশকে ঢাকার একদল বুদ্ধিজীবী বুদ্ধির মুক্তির আন্দোলন শুরু করে বলেছিলেন জ্ঞান যদি সীমাবদ্ধ থাকে, তবে বুদ্ধি আড়ষ্ট হয় এবং মুক্তি হয় অসম্ভব। বক্তব্যটি যে সঠিক তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমরা যুক্ত করতে পারি এই কথাটি যে- বিশ্ব এখন ভীষণ রুগ্ণ, তাকে বদলানো চাই, জ্ঞানবুদ্ধির প্রয়োগ দরকার বদলানোর জন্য। জ্ঞানের চর্চা কমছে, এর প্রথম কারণ তার বাজার নেই। দ্বিতীয় কারণ, বিদ্যমান শ্রেণিব্যবস্থার সুবিধাভোগীরা ও সুবিধাসন্ধানীরা চায় না মানুষের চোখ খুলে যাক। তবে অনিবার্য সার কথাটা এই যে, জাতীয়তাবাদীরা তাদের পক্ষে যা দেওয়া সম্ভব তা ইতোমধ্যেই দিয়ে ফেলেছেন, তাদের কাছে মহৎ কিছু প্রত্যাশা করাটা অন্যায়। করণীয়টা এখন তাই সমাজতন্ত্রীদেরই।

লেখক : ইমেরিটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads