পাবলো নেরুদা ছিলেন চিলির কবি ও রাজনীতিবিদ। তিনি ১৯০৪ সালের ১২ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম ছিল নেফতালি রিকার্দো রেয়েস বাসোয়ালতো। পাবলো নেরুদা প্রথমে তার ছদ্মনাম হলেও পরে নামটি আইনি বৈধতা পায়। কৈশোরে তিনি এই ছদ্মনামটি গ্রহণ করেন। ছদ্মনাম গ্রহণের দুটি কারণ ছিল। প্রথমত, ছদ্মনাম গ্রহণ ছিল সে যুগের জনপ্রিয় রীতি; দ্বিতীয়ত, এই নামের আড়ালে তিনি তার কবিতাগুলো নিজের পিতার কাছ থেকে লুকিয়ে রাখতেন। তার পিতা ছিলেন কঠোর মনোভাবাপন্ন ব্যক্তি। তিনি চাইতেন তার পুত্র কোনো ‘ব্যবহারিক’ পেশা গ্রহণ করুক। নেরুদা নামটির উৎস চেক লেখক জান নেরুদা এবং পাবলো নামটির সম্ভাব্য উৎস হলেন পল ভারলেইন। পাবলো নেরুদাকে বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ও প্রভাবশালী লেখক মনে করা হয়। তার রচনা অনূদিত হয়েছে একাধিক ভাষায়।

নেরুদার সাহিত্যকর্মে বিভিন্ন প্রকাশশৈলী ও ধারার সমাবেশ ঘটেছে। একদিকে তিনি লিখেছেন ‘টোয়েন্টি পোয়েমস অব লাভ অ্যান্ড আ সং অব ডেসপায়ার’-এর মতো কামোদ্দীপনামূলক কবিতা সংকলন, আরেকদিকে রচনা করেছেন পরাবাস্তববাদী কবিতা, ঐতিহাসিক মহাকাব্য এমনকি প্রকাশ্য রাজনৈতিক ইশতেহারও। ১৯৭১ সালে নেরুদাকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। তার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে পুরস্কার প্রদান নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। কলম্বিয়ান ঔপন্যাসিক গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস একদা নেরুদাকে ‘বিংশ শতাব্দীর সকল ভাষার শ্রেষ্ঠ কবি’ বলে বর্ণনা করেন।

১৯৪৫ সালের ১৫ জুলাই ব্রাজিলের সাও পাওলোর পাকিম্বু স্টেডিয়ামে কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা লুইস কার্লোস প্রেস্টেসের সম্মানে ১ লাখ লোকের সামনে ভাষণ দেন নেরুদা। নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করার পর চিলিতে ফিরলে সালভাদর আলেন্দে এস্তাদিও ন্যাশনালে ৭০ হাজার লোকের সামনে ভাষণ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানান। জীবদ্দশায় নেরুদা একাধিক কূটনৈতিক পদে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একসময় তিনি চিলির কমিউনিস্ট পার্টির সিনেটর হিসেবেও কার্যভার সামলেছেন। চিলিতে অগাস্তো পিনোশের নেতৃত্বাধীন সামরিক অভ্যুত্থানের সময়েই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন নেরুদা। ১৯৭৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হূদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় বিশ্বব্যাপী সাড়া জাগানো এই কবি পাবলো নেরুদার।