• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
যে খেলায় জড়িত হয় সারা বিশ্ব

শরীরের সঙ্গে মনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক

আর্ট : রাকিব

মতামত

যে খেলায় জড়িত হয় সারা বিশ্ব

  • প্রকাশিত ২০ জুলাই ২০১৮

সত্তার বিকাশ পরিপূর্ণ না হলে একজন মানুষ নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পারে না। কোনো বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়ার জন্য বলা হয়, এটা কোনো ছেলেখেলা নয়। ছেলেমেয়ের মানসিক উৎকর্ষের জন্য যেমন শিক্ষার প্রয়োজন হয়, তেমনি দৈহিক উৎকর্ষের জন্য দরকার খেলাধুলার। সঙ্গত কারণেই শিক্ষার জন্য দরকার হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আর খেলাধুলার জন্য মাঠ। তাই আগের যুগে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় খেলার মাঠও তৈরি করা হতো। লেখাপড়া ও খেলাধুলা মন ও শরীর গঠনের জন্য অপরিহার্য অনুষঙ্গ। স্বাস্থ্যশাস্ত্রের মতে, শরীরের সঙ্গে মনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। শরীর ভালো না থাকলে মন ভালো থাকে না। আবার মন ভালো থাকার অন্যতম শর্ত হলো স্বাস্থ্য ভালো থাকা। তাই খেলাকে ছেলেখেলা বলা যুক্তিযুক্ত নয়। বরং খেলার গুরুত্ব মানুষের জন্য অপরিসীম। খেলাধুলা, শরীরচর্চা বা ব্যায়াম-যোগব্যায়াম, পিটিপ্যারেড, স্পোর্টসের বিভিন্ন ইভেন্ট, সাঁতার, সার্কাস ও জিমন্যাস্টিকসের আবশ্যকতা লেখাপড়া বা জ্ঞানার্জনের মতো শিশুকাল থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সমানভাবে প্রয়োজনীয়। 

রাজনীতি যা করতে পারছে না, সংস্কৃতি ও খেলাধুলা তা পারছে। রাজনীতি সাহিত্য, সংস্কৃতি বিকাশের ক্ষেত্রে অগ্রগণ্য। কিন্তু প্রচলিত রাজনীতি নির্মোহ বা নীতির মধ্যে সেরা হতে পারছে না। রাজনীতির কারণে মানুষে মানুষে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ বিভ্রান্তির জন্ম হচ্ছে। কল্যাণকর কিছু হচ্ছে না। তাই রাজনীতি দিয়ে বিশ্ব জয় সম্ভব হচ্ছে না। সাহিত্য মানুষের হূদয়কে রঞ্জিত করে। মানুষের মহত্ত্বগুলোকে প্রকাশ করে। কিন্তু সেখানেও দুর্বলতা আছে। অনেক সময় সাহিত্য সাম্প্রদায়িক উসকানি ও বিভেদ-বিভ্রান্তির জন্ম দিচ্ছে। সাহিত্যের সৃজনশীল শক্তি তাই আশানুরূপ কাজ করতে পারছে না। তা ছাড়া সমাজের অধিকাংশ মানুষ সাহিত্যের ধারেকাছেও নেই। সৃজনশীল সাহিত্যকর্ম যারা উপহার দিচ্ছেন, তারা মননচর্চা করলেও অনেকে শরীরচর্চা করছেন না। সাহিত্যের ক্ষেত্রে সবল হলেও দৈহিকভাবে দুর্বল থাকছেন। তাছাড়া বিশ্বসাহিত্যের ক্ষেত্রে যারা অবদান রাখছেন, তারা অনেক সময় অবিচার বা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন।

একমাত্র খেলা দিয়েই বিশ্ব জয় করা সম্ভব হচ্ছে। মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা এনে দিচ্ছে খেলা। একজন খেলোয়াড়কে অবশ্যই শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট হতে হয়। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আজ খেলার অবদানই অধিক। বিশ্ববাসীকে এক কাতারে এনে দাঁড় করিয়েছে খেলা। দেশ-জাতি, ধর্ম-বর্ণ ও শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ আজ খেলার আসরে একাকার হয়ে যাচ্ছে। খেলার কাছে হিংসা-বিদ্বেষ ও বৈষম্যের উপাসকরা হার মানতে বাধ্য হচ্ছে। সারা পৃথিবীর মানুষের মন বা হূদয় জয় করছে খেলা। সুতরাং একমাত্র খেলাই যে বিশ্ব জয় করতে সক্ষম হচ্ছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তা ছাড়া পৃথিবীতে যেসব জাতি মানসিক ও শারীরিকভাবে উন্নত, তারাই সুন্দর ও উন্নত জাতি। খেলায় জয়-পরাজয় থাকবেই। একদলের কাছে অন্য দলের হার অবধারিত। কিন্তু অন্য বিষয়গুলোর মতো খেলায় কোনো বিরোধ বা বিতর্ক হয় না। পরস্পর পরস্পরের হাত ধরে ও কোলাকুলি করে বিদায় নেয়। অসম্ভব সুন্দর এই সৌহার্দ্য।

একাগ্রচিত্তে মানুষ যদি কিছু পেতে চায় এবং পাওয়ার জন্য সাধনা চালায়, তাহলে সে অবশ্যই তা পাবে। যেমন— মানুষ কিশোর বয়স থেকে শরীর গঠনের ব্রতী হলে সুঠাম দেহের অধিকারী হতে পারে। তাই প্রতিটি ক্ষেত্রে সিদ্ধিলাভের জন্য সাধনার কোনো বিকল্প নেই। একজন বিশ্বমানের খেলোয়াড় হওয়ার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়, এক্ষেত্রে কঠোর সাধনার প্রয়োজন হয়। তারপরই কেবল ওই খেলোয়াড়ের পক্ষে শিল্পসম্মত ও নান্দনিক খেলা উপহার দেওয়া সম্ভব।

বিশ্বকাপ ফুটবল খেলায় এবার অংশ নিয়েছে ৩২টি দেশ। কিন্তু এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল পৃথিবীসুদ্ধ মানুষ। দেখা গেছে বিশ্বকাপ খেলা নিয়ে সীমাহীন আবেগ-উত্তেজনা-উন্মাদনা, যে আবেগে নিজ ভৌগোলিক পরিচয় অতিক্রম করে একজন মানুষ আন্তর্জাতিকতায় উদ্বুদ্ধ হওয়ার সুযোগ পায়। তখন বিশ্বের কয়েকশ’ কোটি মানুষ লীন হয়ে যান এক আত্মায়, ফুটবল আবেগে ভাসতে থাকেন, সবাই হয়ে যান ফুটবলপ্রেমিক। কী অসম্ভব ক্ষমতা ফুটবলের!

ফুটবল খেলাকে ভালোবেসে কোটি কোটি মানুষ আর্জেন্টিনা- ব্রাজিলকে ভালোবেসে ফেলেছে। আর্জেন্টিনা নামের দেশটির প্রচুর সমর্থক রয়েছে বাংলাদেশে। আর ব্রাজিলের সমর্থক তো আরো বেশি। হ্যাঁ, পাঁচবার বিশ্বকাপজয়ী দলটির নাম ব্রাজিল। গত শতাব্দীতে শুধু নয়- এই শতাব্দীতেও তারা কাপ জিতেছে। কিন্তু কাপ তো জার্মানিও জিতেছে দুই শতাব্দী মিলে চারবার। ইতালি জিতেছে চারবার। দুবার বিশ্বকাপ জিতেছে আর্জেন্টিনা, তাও গত শতাব্দীতে। এদেশের ফুটবলপ্রেমিক সবাই জানেন পেলে নামের একজন ফুটবল সম্রাটের কথা। তার দেশ ব্রাজিল। সেই সম্রাটের সাম্রাজ্যের অর্ধেক মালিক এখন ম্যারাডোনা নামের এক আর্জেন্টাইন। পেলের খেলা দেখার সৌভাগ্য না হলেও ম্যারাডোনার খেলা অনেকেই দেখেছেন গত শতাব্দীর শেষের দিকে। যাকে পেলে-পরবর্তী প্রজন্মের একজন ফুটবলের রাজপুত্র বলে মনে করা হয়।

তবে এবারের বিশ্বকাপে দেশ দুটি ভালো করতে পারেনি। আর্জেন্টিনা নকআউট পর্ব থেকে বিদায় নেয়। আর ব্রাজিল বাদ পড়ে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্ব থেকে। এই দুই দেশের বিদায় হওয়ার পর শেষ পর্যায়ের খেলাগুলো অনেকটা পানসে বলে মনে হয়েছে অনেকের কাছে। পরিবর্তনশীল বিশ্বে ফুটবল খেলায়ও যে পরিবর্তন আসবে এটাই স্বাভাবিক।

আবদুল খালেক মন্টু

প্রাবন্ধিক

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads