• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
শিশুর অধিকার সুরক্ষায় করণীয়

শিশুদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান নেই

প্রতীকী ছবি

মতামত

শিশুর অধিকার সুরক্ষায় করণীয়

  • প্রকাশিত ২৫ জুলাই ২০১৮

শিশুদের নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ করার সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। কোথাও শিশুর অধিকার ও নিরাপত্তা ক্ষুণ্ন হলে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় না। এতে শিশুটির অধিকার ও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় অনেক ক্ষেত্রে। অতি সম্প্রতি (৯ জুলাই) জাতীয় সংসদ ভবনে আইপিডি সম্মেলন কক্ষে ‘বাংলাদেশ শিশু অধিকার পরিস্থিতি : অবস্থার উত্তরণে সংসদ সদস্যদের ভূমিকা’ শীর্ষক সংসদীয় ককাস ও ইউএনডিপির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মাননীয় ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া শিশু অধিকার বিষয়ে অধিদফতর গঠন করা প্রয়োজন বলে মত দেন। তিনি আরো বলেন, সব ধরনের শিশুর সুরক্ষায় জাতীয় শিশু সুরক্ষা ফ্রেমওয়ার্ক প্রণয়ন, শিশু সুরক্ষার জন্য রাজনৈতিক কাজে তাদের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা, বেসরকারি সংগঠন ও মিডিয়ার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে শিশু সুরক্ষার বিষয়ে আলোচনা-পরামর্শ দিয়ে শিশুদের জন্য নিরাপদ ও অধিকারপূর্ণ একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব।

আমিও ফজলে রাব্বীর সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে শিশুবিষয়ক অনেক সমস্যার সমাধান সহজ হবে। শিশুবিষয়ক অধিদফতর বা বিভাগ হলে সংশ্লিষ্ট সব সরকারি-বেসরকারি দফতর সমন্বয়ের মাধ্যমে কাজ করতে পারবে। আইনের বিভিন্ন অসঙ্গতি দূর করা সহজ হবে। গবেষণা, জরিপ, বিভিন্নজনের মতামত ইত্যাদি গ্রহণ করে সরকারের কাছে শিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন সুপারিশ করা সম্ভব হবে।      

মা ও শিশু অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। মায়ের অধিকার সুরক্ষা হলে, শিশুর অধিকার অনেকাংশে রক্ষা পায়। একজন গর্ভবতী মা গর্ভাবস্থায় তার অধিকারগুলো পূর্ণাঙ্গভাবে পেলে, জন্মের আগে থেকেই অনাগত শিশুও তার অধিকার ও সুরক্ষা পেয়ে যায়। তাই শিশুর অধিকার ও নিরাপত্তা সুরক্ষায় সবার আগে পরিবারটিকেই কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি পর্যায়ে শিশুদের অধিকার ও সুরক্ষা নিয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। নিরাপত্তা, বাসস্থান, খাদ্য, চিকিৎসা, শিক্ষাসহ রাষ্ট্র স্বীকৃত সব অধিকার এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। আর সেগুলো হতে হবে বৈষম্যহীন। অর্থনৈতিক, ধর্মীয়, লিঙ্গ, গোত্র, শারীরিক কোনো শ্রেণিভেদে শিশুদের বিভাজন করা যাবে না। এসব পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন হলেই একজন শিশু সঠিকভাবে বেড়ে উঠবে। যে শিশুটি হবে আমাদের আগামীর কর্ণধার।

শিশুর অধিকার ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হলে শিশুশ্রম, বাল্যবিয়ে ও মাদককে চিরতরে ‘না’ বলতে হবে। ইভটিজিং, যৌন হয়রানি আর অশিক্ষাকে কঠোর হাতে দমন করা বাঞ্ছনীয়। আর তাই এক্ষেত্রে সমাজ, পরিবার ও সংশ্লিষ্ট সরকারি দায়িত্বশীল লোকদের আরো অধিক সচেতন হতে হবে। জনসচেতনতা সৃষ্টিতে সরকারি-বেসরকারি দফতরসমূহ, গণমাধ্যম ও জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করা যেতে পারে। বাড়ি কিংবা কর্মক্ষেত্রে, শিশুদের অধিকার সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে। অভিভাবকের সচেতনতার বিষয়টি শিশুদের অর্থবহ সুরক্ষার পূর্বশর্ত। শিশু সুরক্ষা একটি বহুমুখী ধারণা। যৌন নির্যাতনসহ বিভিন্ন ধরনের নির্যাতন ও অধিকার লঙ্ঘন থেকে শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা একটি অপরিহার্য সামাজিক কর্তব্য। দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করায় আমাদের শিশুদের একটি বিশাল সংখ্যা বেড়ে উঠছে আর্থ-সামাজিকভাবে অভাব-অনটনের ভেতর। এ শিশুরা তাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া প্রয়োজন। তা ছাড়া স্কুলে কিডনি, শ্বাসকষ্ট, প্রজনন স্বাস্থ্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও মায়েদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। অনেক এনজিও এ কাজ করে থাকে ক্ষুদ্র আকারে। এর পরিসর বাড়াতে হবে। গণমাধ্যম এমন কোনো বিজ্ঞাপন প্রচার করবে না, যা শিশুদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এমন কোনো ছবি প্রকাশ করা উচিত নয়, যা শিশুদের মধ্যে সহিংসতা বৃদ্ধি করে। পাঠ্যপুস্তকে শিশু উপযোগী আইন, দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সুনাগরিক ও জঙ্গিবাদ ইত্যাদি বিষয় সুস্পষ্টভাবে ব্যাখ্যাদান জরুরি, যাতে কোমলমতি এসব শিশু ছোট বয়সেই সমাজের ইতিবাচকতা ও নেতিবাচকতা সম্পর্কে একটি সম্যক ধারণা রাভ করতে পারে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে তারা নিজেদেরও যুগোপযোগী করে গড়ে তুলতে পারে।

দেশের জনসংখ্যার সিংহভাগ শিশু। বিশ্বে সবচেয়ে বেশি শিশুবিবাহ হয় বাংলাদেশে। অবশ্য এখন কমতে শুরু করেছে। জরিপে দেখা যায়, ৪০ শতাংশ শিশুর বিবাহ হচ্ছে দরিদ্র পরিবারে। ৭৪ লাখ শিশু বিভিন্ন খাতে শ্রম দিচ্ছে। ৫৬ লাখ শিশু কোনো ধরনের শিক্ষাকেন্দ্রের আওতায় নেই। রাষ্ট্রের একার পক্ষে সম্ভব নয় সব শিশুর দায়দায়িত্ব নেওয়া। শিশু সুরক্ষায় সরকারের ভালো আইন আছে। আইনের প্রয়োগে আরো কঠোর হতে হবে। দেশের সব শিশুকে উন্নয়নের মূলধারায় যুক্ত করার জন্য সরকার, ব্যক্তিমালিকানাধীন খাত, নাগরিক সমাজ, গণমাধ্যম— সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

 

আবু আফজাল মোহা. সালেহ

লেখক : উপপরিচালক, বিআরডিবি, লালমনিরহাট

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads