• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
কয়লা নিয়ে কেলেঙ্কারি নাকি দুর্নীতি

কেন এত বড় ধরনের বিপত্তি তার অনুসন্ধান চলছে

আর্ট : রাকিব

মতামত

কয়লা নিয়ে কেলেঙ্কারি নাকি দুর্নীতি

  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০১৮

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে উত্তোলিত ১ লাখ ১৬ হাজার টন কয়লার হদিস নেই। এর বাজার মূল্য ২০০ কোটি টাকার অধিক। উল্লিখিত কয়লার সঙ্কটের কারণে দেশের একমাত্র কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। এর ফলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ নিয়ে ভোগান্তি পোহাতে হবে উত্তরাঞ্চলের মানুষকে। পিডিবি সূত্র থেকে জানা গেছে, কয়লার মজুত না থাকায় বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করা হয়েছে। এর ফলে উত্তরাঞ্চলে অন্তত ১০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং হবে। ওই অঞ্চলে বিদ্যুতের সর্বাধিক চাহিদা ৬৫০ মেগাওয়াট।

আগামী কয়েক মাসের মধ্যে এসএসসি ও জেএসসির মতো দুটি পাবলিক পরীক্ষা আছে। ব্যাপক লোডশেডিংয়ের কারণে উত্তরাঞ্চলের কয়েক লাখ শিক্ষার্থী বিপাকে পড়বে। ব্যবসাসহ মানুষের জীবনযাত্রার ওপরও এর ব্যাপক প্রভাব পড়বে। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

কেন এত বড় ধরনের বিপত্তি তার অনুসন্ধান চলছে। একটি তদন্ত কমিটি গঠন করার পর তারা অনুসন্ধান করছে ঘটনার ব্যাপারে। ইতোমধ্যে কয়লা কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ কয়েকজনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং ১৯ জনের নামে মামলাও হয়েছে। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ মিছিল করেছে। দুদক এবং একটি সরকারি গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন বিষয়টি দেখভাল করছে। ভয়ঙ্কর তথ্য দিয়েছেন ওই খনির কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর খনির কয়লার মজুত পরিমাপ করার নিয়ম থাকলেও এখানে তা পালন করা হয়নি। ২০০৫ সাল থেকে সেখানে কয়লা রাখা হচ্ছে। মোট এক কোটি এক লাখ টনের মতো কয়লা তোলা হয়েছে। তা থেকে ১ দশমিক ৪২ শতাংশ কয়লার হদিস নেই। কী আচানক কথা। হিসাব মেলানো যায় না এসব ঘটনার।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি থেকে ২০০৫ সালে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কয়লা উত্তোলন শুরু হয়। কোম্পানির হিসাবে এখন পর্যন্ত ১ কোটি ১ লাখ টন কয়লা তোলা হয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহার এবং সময় সময় অন্য ঠিকাদারের কাছে বিক্রির পর অবশিষ্ট থাকার কথা ১ লাখ ৩০ হাজার টন। কিন্তু পরিমাপ করে পাওয়া গেছে মাত্র ১৪ হাজার টন। যে ১ লাখ ১৬ হাজার টন কয়লার হদিস নেই, তার বাজার মূল্য ২০০ কোটির অধিক টাকা। এখন কোটি টাকার একটি প্রশ্ন, ৬৫ হাজার বর্গমাইলের এই বাংলাদেশের পথে-প্রান্তরে আলোচিত হচ্ছে যে, এত কয়লা গেল কোথায়? এটি কি পুকুর চুরি, নাকি দুর্নীতি? নাকি সোনা হারানোর ঘটনার মতো আমরা জানতে পারব যে, কিছুই ঘটেনি। হয়তো শোনা যাবে, হিসাবের গরমিল। বাংলাদেশ সব সম্ভবের দেশ। পত্রিকায় প্রায়ই দেখা যায়, জড়িতদের সম্পদ বা টাকা-পয়সা ভাগ-বাটোয়ারায় কোনো সমস্যা দেখা দিলে ঘটনার কথা প্রকাশ পায়। কারো ভাগের পরিমাণ কম হলে তিনি ঘটনা ফাঁস করে দেন। দেশের মানুষ, প্রশাসন তখন জানতে পারে। তার আগে পর্যন্ত আমরা অনেক বিষয়ে অন্ধকারে থাকি।

আমাদের অনেক কিছুই কি অরক্ষিত থাকছে? বড়পুকুরিয়া থেকে ২০০ কোটি টাকার কয়লা লাপাত্তা হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সোনা হারিয়ে যাচ্ছে, যদিও কর্তৃপক্ষ তা অস্বীকার করছে। মাননীয় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সেখানে রাখা ৯৬৩ কেজি সোনার মধ্যে দূষিত মাত্র ৩ কেজি, এটি কোনো সমস্যা না (সূত্র : দৈনিক প্রথম আলো, ২৫.৭.১৮)। বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে রাঘব বোয়ালরা ঋণের নামে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করছে। ডেসটিনি কোম্পানি তৃণমূল মানুষের শত শত কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে। সেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের আর্তনাদ কে শোনে? তাদের কষ্টার্জিত টাকা কি তারা কোনো দিন ফিরে পাবে? কেউ কথা রাখে না। আইটিসিএল, হলমার্ক এদের কথা অনেকের মনে আছে। এরা যে অপকর্মগুলো করেছে তার বিচার কি এদেশে হবে না? পত্রিকায় ব্যাপকভাবে আসেনি এ রকম শত শত ভুয়া প্রতিষ্ঠান মানুষকে ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা করেছে বা করছে। অনেক এলাকায় পাড়ায় পাড়ায় ভুয়া একটি ঋণদান সংস্থা গ্রাহকের প্রায় ২৫ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে লাপাত্তা হয়েছে। সেই কারণে অনেক পরিবার পথে বসেছে। কে দেখে এসব? দেখার লোকের খুবই অভাব এদেশে। অনেকেই শুধু রাজনীতি আর নিজেকে নিয়ে ভাবেন। কেউ কি এসব নিয়ে ভাববেন?

তাই বলছিলাম অনেক কিছুই কি অরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে এ দেশে? সীমান্ত ভেদ করে ইয়াবা আসছে, সীমান্ত ভেদ করে ভারতীয় অনেক পণ্য এখন আমাদের বাজার দখল করছে। উত্তরাঞ্চলে কোনো সাধারণ ট্রেনে ভ্রমণে বের হলে দেখা যায়, বিপুল পরিমাণ ভারতীয় অবৈধ পণ্য এ দেশে প্রবেশ করছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের দেশীয় পণ্য।

হয়তো জেগে ওঠার সময় হয়েছে আবার। সকল অন্যায়, অসত্য, অবিচারের বিরুদ্ধে। বড়পুকুরিয়া থেকে টেকনাফ, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়ায় নূরলদীনের ডাক আবার শোনা যায়। সে ডাক দিয়ে যায়, ‘জাগো বাহে কুনঠে সবাই...।’

আ.ব.ম রবিউল ইসলাম

শিক্ষক

robiulislam794@gmil.com  

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads